সাপের কামড়ে আহত সাপুড়েকে প্রতিষেধক কিনে দিলেন শিক্ষার্থীরা

সাপের কামড়ে আহত সাপুড়েকে প্রতিষেধক কিনে দিলেন শিক্ষার্থীরা

ঘড়ির কাটা তখন রাত ১২টা। সাপের কামড়ে গুরুতর আহত অবস্থায় সাপুড়ে মো. মনির হোসেনকে (৩০) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্ত্রী জমেলা বেগম। চিকিৎসক জানালেন তার শরীরে এখনি সাপের প্রতিষেধক দিতে হবে। তবে হাসপাতালে সরকারিভাবে সাপের অ্যান্টিভেনম (প্রতিষেধক) সরবরাহ নেই। 

ঘড়ির কাটা তখন রাত ১২টা। সাপের কামড়ে গুরুতর আহত অবস্থায় সাপুড়ে মো. মনির হোসেনকে (৩০) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্ত্রী জমেলা বেগম। চিকিৎসক জানালেন তার শরীরে এখনি সাপের প্রতিষেধক দিতে হবে। তবে হাসপাতালে সরকারিভাবে সাপের অ্যান্টিভেনম (প্রতিষেধক) সরবরাহ নেই। 

দারিদ্র পরিবারের পক্ষে এই মুহূর্তে বাইরের ফার্মেসি থেকে কেনারও সাম্যর্থ নেই। স্বামীকে বাঁচাতে মনির হোসেনের স্ত্রী জামেলা বেগম দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে রোগী ও স্বজনদের কাছে ছোটাছুটি করতে থাকেন।

এরই মাঝে সংবাদ পৌঁছে যায় চুয়াডাঙ্গা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি সাফফাত ইসলামের কাছে। তিনি তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে আসেন সদর হাসপাতালে। সবার অপ্রাণ চেষ্টায় দ্রুত সাপের প্রতিষেধক ব্যবস্থা করে দেন তারা। এছাড়া আইসিইউ সাপোর্টের জন্য মনির হোসেনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন শিক্ষার্থীরা। দরিদ্র সাপুড়ে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে এই মানবিক কাজের জন্য প্রশংসায় ভাসছেন চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা সাভারের আব্দুল বারেকের ছেলে সাপুড়ে মনির স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গত শনিবার চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা শহরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পেশায় সাপুড়ে হওয়ায় সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সাপ শিকারে বের হয়েছিলেন সাপুড়ে দম্পতি। এ সময় একটি বিষধর গোখরা তার বাম হাতে কামড় দেয়। এরপরই তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিষয়টি জানতে পেরে, চুয়াডাঙ্গা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি সাফ্ফাতুল ইসলাম, ফাহিম উদ্দিন মভিন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, রেজাউল বাশারসহ সাপুড়ে মনিরের পাশে এগিয়ে আসেন।

মনির হোসেনের স্ত্রী জামেলা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সাপুড়ে। সোমবার সন্ধ্যার পর সাপ ধরার সময় একটি বিষধর সাপের কামড়ের আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় স্থানীদের সহযোগিতায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষের প্রতিষেধক দিতে বলেন। হাসপাতালে সরবরাহ ছিল না। আর এই প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনাম স্নেক ইনজেকশনের ১ ডোজের (১০ পিস) মূল্য ১৪ হাজার টাকা। টাকা না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়ি। পরে শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি সাফ্ফাতুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ১২টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় সাপুড়ে মনির হোসেন সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার বিষয়ে জানতে পারি। কয়েকজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যায়। আমরা সেখানে গিয়ে দেখি, হাসপাতালে অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন সরবরাহ না থাকায় ও রোগীর পরিবার দরিদ্র হওয়ায় বাইরে থেকে তা কিনতে পারছিলেন না। আমরা সাধারণ মানুষের সাহায্যে বিকাশে ও সরাসরি টাকা সংগ্রহ করে ১ ডোজ (১০ পিস) ইনজেকশনের ব্যবস্থা করি। তবে বিষধর সাপের কামড়ের শিকার হওয়ায় তার আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়।

সাফ্ফাতুল ইসলাম বলেন, আরও একটি ডোজের প্রয়োজন হতে পারে বলে চিকিৎসক জানান এবং আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজনে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। আমরা তখনই কুষ্টিয়া বৈষম্যেবিরোধী শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা হাসপাতালে খোঁজ নেন এবং সাপুড়ের জন্য আইসিইউ’সহ পরবর্তী চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে রাতেই কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যাবস্থা করি। কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবরোধী ছাত্র প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ, উচ্ছ্বাস ও তাদের দল সেখানে পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

কুষ্টিয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাতেই মনির হোসেনকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন হাসপাতালে কোনো অ্যান্টিভেমান সাপ্লাই নেই। চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে।

আফজালুল হক/আরকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *