শেখ হাসিনার প্রকল্পগুলো মানুষের জন্য নয়, চুরির জন্য ছিল

শেখ হাসিনার প্রকল্পগুলো মানুষের জন্য নয়, চুরির জন্য ছিল

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের অহেতুক কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দেখেছি যেগুলো কখনোই দেশের মানুষের জন্য ছিল না, বরং এর সঙ্গে জড়িত ছিল কুৎসিত আমিত্ব এবং বিশাল আকারের চুরি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের অহেতুক কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দেখেছি যেগুলো কখনোই দেশের মানুষের জন্য ছিল না, বরং এর সঙ্গে জড়িত ছিল কুৎসিত আমিত্ব এবং বিশাল আকারের চুরি।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ যেন একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে সম্মানের সঙ্গে পরিচিত হয়। দেশের পরিকল্পনা যেন দেশের মানুষকেন্দ্রিক হয়, কোনো নেতা বা দলকেন্দ্রিক নয়। আমরা স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের অহেতুক কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দেখেছি যেগুলো কখনোই দেশের মানুষের জন্য ছিল না, বরং এর সঙ্গে জড়িত ছিল কুৎসিত আমিত্ব এবং বিশাল আকারের চুরি। চলমান এবং প্রস্তাবিত সকল উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর যাচাই-বাছাই করার কাজ ইতোমধ্যে আমরা শুরু করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায় বিবেচনা করে বাকি কাজে ব্যয়ের সাশ্রয় এমনকি প্রয়োজনবোধে তা বাতিল করার কথা বিবেচনা করা হবে। দেশের মানুষকে আর ফাঁকি দেওয়া চলবে না। কর্মসংস্থান তৈরি করবে এমন প্রকল্পগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার দেব।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, লুটপাট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি ব্যাংকিং কমিশনও গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এই এক মাসে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আপনারা নিশ্চয় সেটা লক্ষ্য করেছেন। আমরা এই খাতে নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আরও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। প্রথম মাসের কাজ হিসেবে শুধু প্রধান কাজগুলো করেছি। তার সঙ্গে রয়েছে আরও অনেক পরবর্তী কাজ।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার লুটপাট করার জন্য নতুন করে ষাট হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ার কারণে মুদ্রাস্ফীতির শিকার হয়েছে দেশের মানুষ। এই অতুলনীয় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পলিসি সুদের হার বৃদ্ধি করে ৯ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ সুলভ মূল্যে প্রান্তিক মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ চলমান রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরে চাল ও গম আমদানির জন্য ৫,৮০০ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের জন্য ৮,৯০০ কোটি টাকা এবং খাদ্য ভর্তুকির তিনটি প্রোগ্রামের জন্য ৭,৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে করণীয়সমূহ চিহ্নিত করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় যৌক্তিক পরিমাণে হ্রাস করার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য সার আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত চাষিগণ যাতে কৃষিঋণ পেয়ে থাকেন তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি কৃষিঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে বলে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট চাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিশ্বব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, জাইকা থেকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রিম অর্থ পরিশোধ এবং বকেয়া পাওনা নিয়ে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আলোচনা চলছে।

এমএসআই/এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *