শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত? কী আছে ঢাকা-দিল্লির চুক্তিতে

শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত? কী আছে ঢাকা-দিল্লির চুক্তিতে

মুদি দোকানদার আবু সায়েদকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার।

মুদি দোকানদার আবু সায়েদকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারত হয়ে অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও; সেটি পারেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

এখন তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে হত্যা মামলা হয়েছে। বিচারের মুখোমুখি করতে পরবর্তী ধাপ হিসেবে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে।

প্রশ্ন হলো বিচারের মুখোমুখি হতে— দিল্লিতে অবস্থান করা হাসিনাকে কী ভারত ফেরত দেবে? দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কী এ ধরনের কোনো চুক্তি আছে?

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি তথ্য রয়েছে। তথ্যটি ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট প্রকাশ করা হয়।

এতে বলা আছে— সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ও নেপালের প্রত্যর্পণ (অপরাধে অভিযুক্তদের ফেরত) চুক্তি রয়েছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। এসব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ছাড়াও—  ১৯৮৭ সালে সার্ক সন্ত্রাস দমন আঞ্চলিক সম্মেলন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ২০০৪ সালে সার্কে এই চুক্তির অতিরিক্ত প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এটির লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য থাকা বিধান, অর্থসংগ্রহ করার বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিষয়টি শক্তিশালী করা।

এই চুক্তির আরও লক্ষ্য ছিল— এ ধরনের কর্মকাণ্ড ও অর্থায়ন প্রতিরোধী আরও ব্যবস্থা গ্রহণ।

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির ব্যাপারে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই তথ্যে বলেছিল— ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারত বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তির ধারা ১০ (৩) সংশোধনের জন্য একটি চুক্তি করে। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো, দুই দেশের পলাতক আসামীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যর্পণ করা।

এতে আরও বলা হয়— কোনো পলাতক আসামী যেন বিচারের সম্মুখীন হওয়ার আওতার বাইরে না থাকে সেজন্য ভারত যতগুলো দেশের সঙ্গে সম্ভব ঠিক ততগুলো দেশের সঙ্গেই এই চুক্তি করবে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারী তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি করা হয়। এটি দুই দেশের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে অপরাধ কমাতে সহায়ক হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

শুধুমাত্র গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেই হবে

২০১৩ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি হয় সেটি ২০১৬ সালে সংশোধন করা হয়। ওই সংশোধনে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে যদি কাউকে প্রত্যর্পণ করতে হয় তাহলে শুধুমাত্র পুলিশের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেই হবে।

সংশোধনটি করা হয়েছিল তৎকালীন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামালের উপস্থিতিতে।

চুক্তির এক সপ্তাহ আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীসভায় সভাপতিত্ব করে সংশোধনটির অনুমোদন দেন।

ওই সংশোধনে আরও বলা হয়, কোনো সন্দেহভাজন অপরাধীকে প্রত্যর্পণ করতে কোনো ধরনের প্রমাণেরও প্রয়োজন হবে না। যদি কাউকে প্রত্যর্পণ করতে হয় তাহলে শুধুমাত্র পুলিশের একটি পরোয়ানা থাকলেই হবে।

২০১৩ সালে যখন চুক্তিটি করা হয় তখন এতে বলা হয়েছিল, কোনো সন্দেহভাজন অপরাধীকে যদি ভারত/বাংলাদেশ বিচারের মুখোমুখি করতে চায় তাহলে নির্দিষ্ট অপরাধীর বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ থাকতে হবে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল সমাবেশ করে। ওই সব শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। বহু ছাত্র-জনতা নিহত ও আহত হন। গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে বসিলার ৪০ ফিট এলাকায় ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করছিল। সেখানেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। রাস্তা পার হওয়ার সময় স্থানীয় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, নিহত সায়েদকে তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদায় নতুন বস্তি প্রধান হাটে নিয়ে দাফন করা হয়। তার মা, স্ত্রী, ছেলে সন্তান সেখানেই থাকেন। এ কারণে তারা ঢাকায় এসে মামলা করতে অপারগ।

এ জন্য বিবেকের তাড়নায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাদী এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগে বাদী আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করার বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান কামালের নির্দেশে পুলিশের আইজিপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে মিছিলে গুলি চালান। পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কাজেই এর বিচার হওয়া প্রয়োজন।

এমটিআই

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *