শেখ হাসিনাকে নিয়ে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের সামনে ভারত

শেখ হাসিনাকে নিয়ে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের সামনে ভারত

ব্যাপক গণ আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকস্মিক পদত্যাগ এবং ভারতে আশ্রয় গ্রহণ দেশটির সামনে কিছু অভূতপূর্ব কিছু কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে গত ৫০ বছরের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এমন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি ভারতকে।

ব্যাপক গণ আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকস্মিক পদত্যাগ এবং ভারতে আশ্রয় গ্রহণ দেশটির সামনে কিছু অভূতপূর্ব কিছু কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে গত ৫০ বছরের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এমন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি ভারতকে।

গতকাল দুপুরের দিকে ভারতের উদ্দেশে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর একটি বিমানে চাপেন শেখ হাসিনা এবং তার ছোটবোন শেখ রেহানা। সন্ধ্যার দিকে নয়াদিল্লি পৌঁছান তিনি। ওই দিনই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সে বৈঠকে কী কী আলোচনা হয়েছে, তা অবশ্য বিস্তারিত জানা যায়নি।

ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সোমবার দুপুরে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে চেপে প্রথমে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় পৌঁছান তিনি, তারপর সেখান থেকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিমানে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ জেলার হিন্দনের বিমান ঘাঁটিতে নামেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তারপর সেখান থেকে রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছান। বর্তমানে নয়াদিল্লিতেই অবস্থান করছেন তারা।

সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য অনুমতিও চাওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনও তাতে সাড়া দেয়নি লন্ডন; নিকট ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে লন্ডন সবুজ সংকেত দেবে— তা ও অনিশ্চিত। কারণ, যুক্তরাজ্যের সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর তদন্তের জন্য জাতিসংঘ প্যানেল গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে।

যদি যুক্তরাজ্য রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে সম্মত না হয়, সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে অন্য কোনো ঠিকানা খুঁজে নিতে হবে এবং তা সময়সাপেক্ষ। যতদিন তিনি নতুন কোনো ঠিকানা না খুঁজে পান, ততদিন তাকে ভারতেই অবস্থান করতে হবে।

ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, শেখ হাসিনাকে যদি দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করতে হয়—তাহলে নতুন যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে, তার সঙ্গে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে ভারতের, যা নয়াদিল্লির একেবারেই কাম্য নয়। আবার এ ও সত্য যে, শেখ হাসিনা ভারতের পরীক্ষিত মিত্র এবং তার শাসনমালের গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ।

২০০৯ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। তারপর ১৬ বছরে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোতেও জয়ী হয়েছেন তিনি। তবে সেসব নির্বাচনের ফলাফল পশ্চিমা বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।

কিন্তু এটি সত্য যে গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মূলত শেখ হাসিনার আমলেই ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় হয় বাংলাদেশের, সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যাবস্থা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়।

কিন্তু এখন আর ক্ষমতায় নেই শেখ হাসিনার সরকার। যখন তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন দানা বাঁধছিল, সেসময় ভারত বলেছিল— এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর বর্তমানে ভারতের সামনে যে বড় একটি চ্যালেঞ্জ দাঁড়াচ্ছে, তা হলো— বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন এবং একই সঙ্গে নিজেদের পুরনো ও পরীক্ষিত বন্ধু শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানো।

বাংলাদেশের সমাজ-বাস্তবতায় সহিষ্ণুতার ঘাটতি এবং যে কোনো টালমাটাল পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রবণতা ভারতের আরও একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। কারণ এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতগামী শরণার্থীদের ঢেউ সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর শত শত হিন্দু শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।

ত্রিপুরার টিপরা সম্প্রদায়ের নেতা প্রদ্যোৎ কিশোর মানিক্য দেববর্মা অবশ্য জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং সম্ভাব্য শরণার্থী ঢেউ ঠেকাতে সীমান্ত অঞ্চলে বিএসএফ প্রস্তুত।

সূত্র : এনডিটিভি।

এসএমডব্লিউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *