লন্ডনে আতেক হত্যাকাণ্ড : বিচার দাবিতে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন

লন্ডনে আতেক হত্যাকাণ্ড : বিচার দাবিতে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন

১৯৯৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পূর্ব লন্ডনের ইস্টহ্যামে নিজ বাসার সামনে নিহত হয়েছিলেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ী শাহ আতেক হোসাইন সেলিম। সেই থেকে যুক্তরাজ্য পুলিশের কাছে বাবা হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে আসছেন তার মেয়ে বিজনেস এনালিস্ট ইয়াসমিন হোসাইন। এ বছর তার বাবা হত্যার ৩০ বছর পূর্তিতে লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করে আবারও বিচার দাবি করলেন তিনি।

১৯৯৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পূর্ব লন্ডনের ইস্টহ্যামে নিজ বাসার সামনে নিহত হয়েছিলেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ী শাহ আতেক হোসাইন সেলিম। সেই থেকে যুক্তরাজ্য পুলিশের কাছে বাবা হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে আসছেন তার মেয়ে বিজনেস এনালিস্ট ইয়াসমিন হোসাইন। এ বছর তার বাবা হত্যার ৩০ বছর পূর্তিতে লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করে আবারও বিচার দাবি করলেন তিনি।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।

ইয়াসমিন হোসাইন জানান, তার বাবা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চান, যেন তারা বাবা হত্যার তদন্ত অব্যাহত রাখে।

সংবাদ সম্মেলনে ইয়াসমিন হোসাইনের স্বামী শাহনূর সোবহান, মামা এমদাদ রহমান, ফুফাতো ভাই রাসেল মজুমদার ও মাওলানা আব্দুর রহমান মাদানী উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাবা হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে কন্যা ইয়াসমিন হোসাইন বলেন, তার বাবা ৭ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। তার দেশের বাড়ি সিলেটের জগন্নাথপুর উপজেলায়। ৩০ বছর বয়সেই তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। সারে এলাকায় তাদের পারিবারিক ব্যবসা ওয়ারলিংহাম তন্দুরি পরিচালনা করতেন। তিনি ছিলেন ধর্মপরায়ণ, পরোপকারী ও পরিবারবান্ধব একজন মানুষ। ঘটনার দিন রাত দেড়টার দিকে রেস্টুরেন্টে কাজ শেষে বাসার সামনে পৌঁছাতেই তিনি হামলার শিকার হন। তিনি বাড়ির ড্রাইভওয়েতে গাড়ি থেকে বের হতেই দুই ব্যক্তি তার বুকের বাম দিকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তিনি রক্তাক্ত জখম অবস্থায় বাসার পাশের একটি টেলিফোন বুথ থেকে জরুরি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। এরপর ফিরে এসে বাড়ির দরজায় নক করেন।

ইয়াসমিন হোসাইন ও তার মা ঘরের দরজা খুলে দিলে রক্তাক্ত জখম আতেক হোসাইন ঘরে প্রবেশ করেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। রাত ৩টার দিকে পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর আগে তিনি বলতে সক্ষম হন, তাকে দুইজন এশিয়ান ছুরিকাঘাত করেছে। এরপর পোস্টমর্টেম শেষে ৭ নভেম্বর পূর্ব লন্ডন মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পূর্ব লন্ডনের উডগ্রেঞ্জ রোড গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

বাবার মৃত্যুর পর ১০ বছর বয়সী ইয়াসমিন হোসাইন, ৭ মাস ও ৭ বছর বয়সী দুই ভাই ও মাকে দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হয়েছে। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে তারা বড় হয়েছেন।

পুলিশ তদন্ত শুরু করে কিন্তু হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা করতে না পেরে হাল ছেড়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ৫ বছর, ১০ বছর, ২০ বছর পূর্তিতে তিনি বিভিন্নভাবে পুলিশের ওপর চাপ অব্যাহত রাখেন। এবার ১৮ সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পূর্তিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাবা হত্যার বিচার চাইলেন ইয়াসমিন হোসাইন। তিনি মৃত্যুর আগে তার বাবার হত্যার বিচার দেখে যেতে চান।

ইয়াসমিন হোসাইন বলেন, হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পেরিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলেও হয়ত আগে বলেননি। কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকে না। একদিন প্রকাশ হবেই। আমি আশা করি আমার বাবার হত্যাকাণ্ডের রহস্য একদিন উন্মোচন হবেই। যদি এ ব্যাপারে কারো কিছু জানা থাকে তাহলে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, একটি পরিবারকে মানসিকভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য প্রকৃত সত্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। আপনার নাম পরিচয় গোপন রেখে পুলিশকে অবহিত করুন।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পার হলেও তার বাবার স্মৃতি সবসময় অম্লান হয়ে আছে। বাবার স্মৃতি মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না। এখনও মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আমরা দিনাতিপাত করছি। পুলিশ যদি আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করে তাহলে বাবার আত্মা শান্তি পাবে।

ইয়াসমিন হোসাইন জানান, পুলিশ তাকে জানিয়েছে আতেক হোসাইন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বর্তমানে সচল নয়। তবে কোনো হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম কখনও একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয় না। এই মামলা পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম রিভিউ গ্রুপ গত ১৩ আগস্ট পর্যালোচনা করেছে। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাদের হাতে এলে তারা সেটি পর্যালোচনা করবেন এবং হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কারো কাছে কোনো তথ্য জানা থাকলে পুলিশকে অবহিত করতে আহ্বান জানিয়েছে।

এসএসএইচ

ঢাকা পোস্ট প্রবাস বিভাগে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *