রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ইউনিসেফ

রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ইউনিসেফ

রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল একথা জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল একথা জানিয়েছেন।

সংস্থাটি বলেছে, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার সাত বছর পরও রাখাইন প্রদেশে শিশুদের ওপর মারাত্মক হামলা অব্যাহত রয়েছে। রোববার (২৫ আগস্ট) নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি একথা জানায়।

এতে বলা হয়, মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে যাওয়ার সাত বছর পর দেশটির পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত রাখাইন প্রদেশে সংঘাত আরও তীব্রতর হয়েছে। ফলে রাখাইনের মংডু শহরে হতাহতের সংখ্যা ও বাস্তুচ্যুতি বেড়েছে এবং ক্রমবর্ধমান সংখ্যক মানুষ নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করছেন বলে খবর রয়েছে।

ইউনিসেফ এমন উদ্বেগজনক প্রতিবেদনও পেয়েছে যে– বেসামরিক ব্যক্তিরা, বিশেষ করে শিশু এবং পরিবারগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বা তারা সংঘর্ষের ভেতরে আটকা পড়ছেন, যার ফলে মৃত্যু এবং গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। রাখাইনে মানবিক সহায়তার প্রবেশ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যসেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ এবং ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে এই ভোগান্তি আরও বেড়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতি বেসামরিক কার্যক্রম এবং মানবিক কার্যক্রম উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, ‘মারাত্মত সহিংসতার সাত বছর পর হাজার হাজার পরিবারকে তাদের বাড়িঘর থেকে নিরাপত্তার সন্ধানে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সহিংসতার নতুন এই প্রতিবেদন মিয়ানমারে শিশুদের জন্য অব্যাহত হুমকির বেদনাদায়ক কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাখাইনে এবং সারা দেশে, শিশু এবং পরিবারগুলো তাদের জীবন, জীবিকা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে সংঘাতের মূল্য দিয়ে চলেছে। সংঘাতের পক্ষগুলোকে অবশ্যই শিশুদের সুরক্ষার জন্য তাদের দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে হবে।’

গত ৫ আগস্ট আর্টিলারি শেলিং এবং ড্রোন হামলায় নাফ নদীর তীরে জড়ো হওয়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশুসহ প্রায় ১৮০ জন নিহত হয়। এটি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্ত এলাকা। হতাহত এসব মানুষ সংঘর্ষ থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছিল। এছাড়া একইদিনে মংডু শহরের তিনটি ওয়ার্ড থেকে আনুমানিক ২০ হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া গত ৬ এবং ১৯ আগস্ট পৃথক ঘটনায় নারী ও শিশুসহ বহু লোককে বহনকারী বেশ কয়েকটি নৌকা নাফ নদীতে ডুবে যায়। এতে হতাহতদের মধ্যে শিশুও ছিল। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের ফলে রাখাইন প্রদেশ এবং চিন প্রদেশের পালেতওয়া শহরে আনুমানিক ৩ লাখ ২৭ হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

ইউনিসেফ বলছে, মিয়ানমার জুড়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া মানবিক সংকটের দ্রুত অবনতি ঘটছে। শিশুদের প্রতি গুরুতর অধিকার লঙ্ঘন, ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবার ব্যবস্থার প্রায় পতনসহ অবিরাম সহিংসতার সবচেয়ে ভারী বোঝা বহন করে চলেছে দেশটি। ক্রমবর্ধমান আক্রমণ এবং সংঘর্ষের ফলে আনুমানিক ৩৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যাদের প্রায় ৪০ শতাংশই শিশু। বর্তমানে ৬০ লাখ শিশুসহ দেশটির রেকর্ড ১ কোটি ৮৬ লাখ লোকের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন।

এছাড়া ২০১৭ সালে হামলা ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একত্রে বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এর সাত বছর পরে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু বিশ্বের বৃহত্তম এই শরণার্থী শিবিরে বেড়ে উঠছে, তাদের মধ্যে অনেকেরই শরণার্থী হিসাবে জন্ম হয়েছে। শরণার্থী সম্প্রদায় সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করে এবং অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পে অস্থায়ী আশ্রয়ে তারা বাস করে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং অংশীদারদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে ইউনিসেফ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা প্রদান করার পাশাপাশি ডায়রিয়া নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করেছে, শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিষেবা প্রদান করছে। সেইসাথে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান ও সুরক্ষা এবং সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সহায়তায়ও কাজ করছে ইউনিসেফ।

ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘শরণার্থী জনসংখ্যা– বিশেষ করে শিশুদের জন্য বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন প্রশংসনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। গত ১২ মাস ধরে, আমরা শিবিরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং শিশু অধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি যাতে এই শিশুরা সুরক্ষিত থাকে এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলো পেতে পারে।’

অন্যদিকে মিয়ানমারে সংঘাতে লিপ্ত সকল পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে বেসামরিক নাগরিকদের, বিশেষ করে শিশুদের সুরক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা ও মঙ্গল নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

টিএম

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *