বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে জয়ের গল্প খুব বেশি না। দেশের বাইরে তো আরো কম। তবে সেই ২০০৩ সালেই ইতিহাস রচনা করার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। পাকিস্তানকে তাদের ঘরের মাঠ মুলতানে হারানোর সুযোগ এসেছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত হয়নি। দীর্ঘ ২১ বছর পর আজ রোববার সেই পাকিস্তানের মাটিতেই টেস্ট জয়ের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিল টিম টাইগার্স। সবমিলিয়ে বিদেশের মাটিতে এটি সপ্তম জয়।
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে জয়ের গল্প খুব বেশি না। দেশের বাইরে তো আরো কম। তবে সেই ২০০৩ সালেই ইতিহাস রচনা করার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। পাকিস্তানকে তাদের ঘরের মাঠ মুলতানে হারানোর সুযোগ এসেছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত হয়নি। দীর্ঘ ২১ বছর পর আজ রোববার সেই পাকিস্তানের মাটিতেই টেস্ট জয়ের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিল টিম টাইগার্স। সবমিলিয়ে বিদেশের মাটিতে এটি সপ্তম জয়।
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে মুলতান টেস্টে পাকিস্তানকে হারানোর সুযোগ পেয়েও জয় তুলে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল খালেদ মাহমুদ সুজনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। ইনজামাম উল হকের ম্যাচজয়ী ইনিংসে ১ উইকেটের সেই পরাজয়টি হিসেব করে দেখলে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে অন্যতম বড় ‘ট্র্যাজেডি’ হয়ে আছে। সেই ম্যাচের দুই আম্পায়ার নিয়েও ছিল বড় বিতর্ক।
রাসেল টিফিন (জিম্বাবুয়ে) এবং অশোকা ডি সিলভার (শ্রীলঙ্কা) বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের কারণেই জয়ের কাছে গিয়েও মুলতান টেস্টে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। আজ টাইগারদের জয়ের দিনে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপ করেছেন সেই মুলতান টেস্টের দলে থাকা তিন ক্রিকেটার।
সাবেক ওপেনার তুষার ইমরান তো জানিয়েই দিলেন যে রিভিউ থাকলে সেদিন জিততে পারত বাংলাদেশ দল। কেননা ঐ ম্যাচে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে গিয়েছিল। তিনি বলছিলেন, ‘ওই দিনই জিতে যেতে পারতাম যদি রিভিউ সিস্টেম থাকতো। কেননা অনেকগুলো সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে গিয়েছিল। তারপরও দেখেন এখন এত বছর পরে জয় দেখলাম এটা অনেক কিছু। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের মাটিতে জেতা কঠিন।’
মুলতানে সেদিন একাদশে না থাকলেও ছিলেন দলের সঙ্গে। সেই স্মৃতি তুলে ধরে তুষার বলছিলেন, ‘মনে পড়ছে আসলে মাঠে ছিলাম তো সেদিন। যদিও খেলি নাই, একাদশে ছিলাম না। তবে ওই দিনটা জিততে পারলে আমাদের টেস্ট ক্রিকেট আরো এগিয়ে যেত। তারপরো ক্রেডিটটা আসলে ক্রিকেটারদের দেয়া উচিত, ওরা পেরেছে।’
রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট জয় অবশ্য ভাবতে পারেননি তুষার। তবে সেটি করে দেখিয়েছে শান্ত বাহিনী, ‘আমি কল্পনা করতে পারি না যে ম্যাচটা জিতব। মনে করছিলাম যে ড্র হবে। যেহেতু একদিন বাকি আছে আর পাকিস্তান এমন একটা টিম যেকোনো সময় কিছু করতে পারে, বলাটা কঠিন আসলে এই জন্য। পাকিস্তান তাড়াতাড়ি ডিক্লিয়ার দিয়েছিল, সাহসটা দেখিয়েছে। তবে আমার কাছে মনে হয় যে আমরা ভালো খেলে জিতেছি।’
এদিকে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘ভালো দেখেছি, দুর্দান্ত, অসাধারণ যাকে বলে। তৃতীয় দিন বা চতুর্থ দিন আমরা ভেবেছিলাম যে বোরিং টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে। সাধারণত এরকম টেস্ট ম্যাচ ড্র হয় কেউ চিন্তাও করতে পারেনি জিতবে। এরকম অবস্থা থেকে টেস্ট ম্যাচ জয় পাওয়া ফ্যান্টাস্টিক বলবো আমি।’
এরপর ২১ বছর পেছনে ফিরে মুলতান টেস্ট নিয়ে বাশার বলেন, ‘মুলতান টেস্ট একটু মনে পড়ছিল যখন ওদের রিজওয়ান দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ক্রিজে। তখন মনে হচ্ছিল আর কী কারণ উইকেটে তো আসলে তেমন কিছু ছিল না বোলারদের জন্য। আমাদের বোলাররা অবিশ্বাস্য বোলিং করেছে বলব।’
রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট বাশারের চোখে দলগত জয়ের অংশ, ‘একজনকে হিরো হিসেবে বলাটা অবশ্যই কঠিন। তবে মুশফিকের ইনিংসটা অসাধারণ ছিল। মুশফিক যদি ১০০ করে আউট হতো আমাদের লিডটা তো বড় হত না। মুশফিকের রানটাই আমাদের হেল্প করেছে এত বড় লিড নিতে। তারপরে যে বোলিংটা করেছে মিরাজ-সাকিব, তার আগে পেসাররা দারুন করেছে। তবে আসলে টিম হিসেবেই জয় এসেছে।’
মুলতান টেস্ট নিয়ে আরেক সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহ বললেন, ‘আমরা যখন মুলতান টেস্টটা হারছিলাম তখন দুইটা ইনিংসে আমি রান করেছিলাম। কিন্তু এই ম্যাচটা আমরা হেরে গেছিলাম কোন না কোন একটা সমস্যার কারণে। ওই ম্যাচটা আমাদের সবসময় মনে ছিল। এখনও পর্যন্ত কারো সাথে দেখা হলে বলে পাকিস্তানের সেই ম্যাচটা যদি জিততে পারতেন তাহলে ইতিহাস হইত। আমরা করতে পারিনি কিন্তু আমাদের ছেলেরা সেটা আজকে করে দেখিয়েছে।’
আজ রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট জয়ের পর আর দুঃখ থাকছে না রাজিনের মনে, ‘এটা আমি মনে করি যে পুরো বাংলাদেশের পাওয়া। আমাদের মনে যে দুঃখটা ছিল সেই দুঃখটা এখন আর নেই। এই জয় সামনে অবশ্যই বড় আত্মবিশ্বাস যোগাবে ভালো করতে। পাকিস্তানের সাথে একটা ম্যাচ আরও বাকি। অন্যান্য যে টেস্ট ম্যাচ আছে এ বছর এটা অনেক বড় আত্মবিশ্বাস দেবে। কারণ টেস্টে আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম।’
এসএইচ/এইচজেএস