মেহেরপুরে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ, চিকিৎসক সংকট

মেহেরপুরে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ, চিকিৎসক সংকট

মেহেরপুর জেলায় এখন দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা ও সন্ধ্যায় পড়ছে ঘন কুয়াশা। ঋতু পরিবর্তনের আভাস। বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু ও বয়োবৃদ্ধ। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বরে অসুস্থ হয়ে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে। চিকিৎসকরা চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

মেহেরপুর জেলায় এখন দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা ও সন্ধ্যায় পড়ছে ঘন কুয়াশা। ঋতু পরিবর্তনের আভাস। বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু ও বয়োবৃদ্ধ। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বরে অসুস্থ হয়ে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে। চিকিৎসকরা চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

মেহেরপুর জেলার আবহাওয়া এখন না শীত না উষ্ণ। দিনে রোদের তাপ। শেষ রাতের হাওয়ায় হালকা শিরশির ভাব। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ এখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। 

মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলার তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মানুষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। গাংনী উপজেলা ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে ১৩৫ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৪৩ জন, শিশু ৬৫ জন এবং ২৫ জন নারী নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন। শুধুমাত্র টিকিটের মাধ্যমে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে দেড় শতাধিক শিশু। 

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের অধিকাংশ ঠান্ডা-জ্বর। অনেককেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এছাড়া অনেকেই ভর্তি আছেন। প্রতিদিন রোগীদের চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে আমরা অনেকটা হাঁপিয়ে উঠছি। 

রোগ নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ডা. আদিলা আজহার বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কখনো ঠান্ডা, কখনো গরম। দিনে গরমের কারণে সমস্যা আর রাতে ঘুমানোর সময় ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা চালানোর কারণে ঠান্ডা লেগে শরীরে তাপমাত্রার হেরফের হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অসুস্থতা ও জ্বর দেখা দিচ্ছে। আর বাইরের বিভিন্ন খাবার ও পানি খাওয়ায় ডায়রিয়া এবং পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি।

সরেজমিনে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, আউটডোরে রোগীদের দীর্ঘ সারি। টিকিট রেজিস্ট্রারে দেখা যায় প্রতিদিন গড়ে হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড ও পুরুষ ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি রয়েছে। পা ফেলার জায়গা নেই। মেঝে ও সিঁড়িতেও রোগীরা ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্স। শিশুদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। রোগীদের অধিকাংশই জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত। আর শিশুরা নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত।

গাংনীর শিমুলতলা গ্রামের ইব্রাহিম জানান, তিনি তার ছেলে কাশেমকে (৪) নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন তিন দিন। ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। প্রথমে হালকা জ্বর হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন। পরে রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে ধরা পড়ে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত। 

করমদি গ্রামের গৃহবধূ লাবনী তার মেয়ে ছয় মাস বয়সী আপিয়াকে নিয়ে ভর্তি আছেন ৭ দিন। আরও ৫ দিন থাকতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। 

এছাড়াও রোগী আরাফাত জানান, তিনি জ্বর ও ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে দুদিন ভর্তি রয়েছেন।

মুজিবনগরের শিবপুর গ্রামের জান্নাতুন দুই মাস বয়সের মেয়ে হাজেরাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তারও ঠান্ডা-জ্বর। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

হাসপাতালের চিকিৎসক এম কে রেজা জানান, বর্তমান আবহাওয়ার কারণে জ্বর, নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। অনেকেই আউটডোরে পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আর যে রোগীর অবস্থা একটু সংকটাপন্ন তাকে ভর্তি রাখা হচ্ছে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো ওষুধ সংকট নেই বলেও জানান এই চিকিৎসক।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, আবহাওয়ার পালা বদলে বিভিন্ন রোগজীবাণুও সক্রিয় হয়ে ওঠে। শিশু ও বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকায় তাদের শরীরে পরিবর্তন বিশেষ ছাপ ফেলে। এক আবহাওয়া থেকে অন্য আবহাওয়ায় অভ্যাস হতে আমাদের সামান্য সময় লাগে। যতক্ষণ আমাদের শরীর সেই পরিবর্তন মানিয়ে নিতে পারে না, ততক্ষণ শরীরে তার নানা প্রভাব পড়ে। একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলেই কিন্তু আর সমস্যা থাকে না। সেক্ষেত্রে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, বিগত এক সপ্তাহ যাবত বিশেষ করে শিশু রোগীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন শতাধিক শিশুকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে এ সময় শিশু ও বয়স্কদের সাবধানে রাখতে হবে। কয়েক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি সাভাবিক হবে। তবে ওষুধ পথ্যের সংকট নেই। চিকিৎসকরা গুরুত্বের সঙ্গে চিকিৎসা দিচ্ছেন। 

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতি বছর আবহাওয়াগত পরিবর্তনের সময় সব মানুষের অসুখ বিসুখ বেশি হয়। তাদের মধ্যে শিশুরা বেশি। এ সময় শিশুদের প্রতি মায়েদের বেশি যত্নবান হওয়া দরকার। চিকিৎসা নিতে আসা প্রতিটি রোগীকে আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিশেষ করে শিশু কনসালটেন্ট জরুরি প্রয়োজন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। এখনো কোনো সাড়া পাইনি।

আকতারুজ্জামান/আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *