বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষায় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ওয়াসিমের সেই রেজাল্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে তাকে স্মরণ করছেন সহপাঠী ও বন্ধুরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষায় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ওয়াসিমের সেই রেজাল্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে তাকে স্মরণ করছেন সহপাঠী ও বন্ধুরা।
শহীদ ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যও তিনি।
বুধবার (৯ অক্টোবর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফলাফল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী— ওয়াসিম দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সেই ফলাফল ফেসবুকে দিয়ে তার বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীরা স্মৃতিচারণ করছেন।
ফলাফলের ছবি পোস্ট করে আব্দুল্লাহ মো. আল ইমরান নামে একজন লিখেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহিদ ওয়াসিম আকরামের তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট। কিন্তু ওয়াসিম নেই। এই রেজাল্টের জন্য কী যে কষ্ট করতে হয়, যে পাশ করেছে সেই জানে। আল্লাহ শহিদ ওয়াসিমকে বেহেশতে সর্বোচ্চ স্থান দান করুন।’
জাহেদুল ইসলাম নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘আজ ওয়াসিমের পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেছে সে। কিন্তু রেজাল্ট শোনার আগেই ঘাতকের বুলেট তার জীবন প্রদীপ কেড়ে নিয়েছে।’
ওয়াসিম আকরাম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৬ জুলাই বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর স্টেশনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব নির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আগেই স্টেশন চত্বর দখলে নেয়। ওই সময় ছাত্র-জনতা মুরাদপুরে সমবেত হয়।
বিকেল পৌনে তিনটার দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। ওইদিন ওয়াসিমসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অন্তত দেড়শ ছাত্র-জনতা। নিহত বাকি দুজন হলেন- নগরের ওমর গনি এমইএইচ কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন শান্ত ও ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুক হোসেন।
মৃত্যুর একদিন আগে ১৫ জুলাই নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে ওয়াসিম লেখেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে আমার প্রাণের সংগঠন। আমি এই পরিচয়ে শহীদ হব।’
নিহত ওয়াসিম আকরামের সৌদি প্রবাসী বাবা শফিউল আলম ও মা জোসনা আক্তার। দুই ভাই ৩ বোনের মধ্যে ওয়াসিম দ্বিতীয়। তিনি ২০১৭ সালে কক্সবাজারের পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসি এবং ২০১৯ সালে বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে ফলের অপেক্ষায় ছিলেন ওয়াসিম। কিন্তু সেই ফল প্রকাশের আগেই আন্দোলনে নিহত হন তিনি।
গত ১৮ আগস্ট নিহত ওয়াসিমের মা জোসনা নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলসহ ১০৮ জনকে আসামি করা হয়।
আরএমএন/এমজে