‘সমবায়ী বাঁচলে মিল্কভিটা বাঁচবে’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায়ীরা। এ সময় তারা ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন ও কিছু সময় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে নানা রকম স্লোগান দেন।
‘সমবায়ী বাঁচলে মিল্কভিটা বাঁচবে’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায়ীরা। এ সময় তারা ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন ও কিছু সময় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে নানা রকম স্লোগান দেন।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি মিল্কভিটার প্রবেশপথের পাশে বাঘাবাড়ি ঘাট ট্যাংকলরি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমবায়ী সুবির কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ ছাত্রদের নেতৃত্বে আমাদের ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। তারা যা করে দেখিয়েছে আমরা তা ভাবতেও ভয় পেতাম। তাদের এই অর্জন সবাই মিলে ধরে রাখতে হবে। এই আন্দোলনে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
তিনি আরও বলেন, আমাকে চেয়ারম্যান হতে হবে এটা আমার চাওয়া নয়, আমি চাই আমরা যারা সমবায়ী আছি তারা ন্যায্য অধিকার ও মূল্যায়নটুকু পাই। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি সুন্দরভাবে এগিয়ে যাক, মিল্কভিটার হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসুক।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখানে প্রধানমন্ত্রীর চাচার চেয়ারম্যান হতে হবে এমনতো কথা ছিল না। এখানকার প্রত্যেকজন সদস্য চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্যতা রাখে। চেয়ারম্যান হবে এই সমবায়ীদের মধ্যে একজন সদস্য। আমাকে চেয়ারম্যান বানাতে হবে সেটা নয়, আমি চাই আপনারা এক হন, সুখ-দুঃখের সাথি হন ও ন্যায্য দাবি আদায় করেন। আপনারা আমিসহ এই এলাকার প্রত্যেকটি মানুষের ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আপনাদের প্রত্যেকটি প্রয়োজনে তারা পাশে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমাকেসহ আমার ভাইদের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। হামলা-মামলা ও গুম-খুনের ভয়ে এখানে আসতে পারিনি। কিন্তু এখন আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছি।
আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনাদের মাধ্যমে আমি সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনি নিজেও আমাদের মতো সমবায়ী বা দুঃখী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের নিয়ে কাজ করেন। আপনি আমাদের কষ্ট বুঝবেন। আমরা সমবায়ীরা যদি ন্যায্য না পাই তাহলে আমরা মিল্কভিটায় দুধ দেওয়া বন্ধ করব, অবরোধ করব, আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করব। বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলের দুধ বন্ধ হলে কি হতে পারে সেটাও বুঝতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত হয় না তারা সাধারণ জনগণকে সম্মান দিতে পারে না। এ কারণে যারা গত সরকারের সময়ে এমপি-মন্ত্রী হয়েছিল তারা সাধারণ মানুষকে সম্মান ও মূল্যায়ন করত না। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি।
সমবায় ইউনিয়নের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সন্তানরা আমাদের রক্ত দিতে শিখিয়েছে। আমাদের আর ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। আমরা বলছি আগামী ৯০ দিনের মধ্যে মিল্কভিটা সমবায় সমিতির নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে সেটা দিতে বাধ্য করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দুধের ন্যায্য দাম পাই না। তারা (বর্তমান সমিতির নেতারা) আমাদের মতো সাধারণ খামারি ও সমবায়ীদের কথা ভাবেনি, তারা ভেবেছে নিজেদের কথা। এর কারণে আমরা হয়েছি নিষ্পেষিত।
এ সময় সমবায়ীদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মী ও সাধারণ সমবায়ীরা বক্তব্য দেন। প্রতিবাদ সমাবেশটির আয়োজন করেন পাবনা ও সিরাজগঞ্জ দুগ্ধ উৎপাদনকারী অঞ্চলের সমবায়ীবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, গত ২০১৫ সাল থেকে মিল্কভিটার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নাদের হোসেন লিপু। নাদের হোসেন লিপু সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা বলে জানান সমবায়ীরা। তার ভয়ে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারতেন না বলেও জানান তারা।
শুভ কুমার ঘোষ/এমজেইউ