‘মা হিসেবে ছেলের জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলাম, আমার কথা শোনেনি’

‘মা হিসেবে ছেলের জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলাম, আমার কথা শোনেনি’

মাছ মারার জাল চুরির অভিযোগে বাজার থেকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে রেললাইনের ধারে পাইপের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয় তহিদুর রহমানকে। নির্যাতনের খবর পেয়ে মাসহ এলাকাবাসী ছুটে যান। মায়ের সামনেই চুরির অপবাদ সন্তানকে পেটাতে থাকে কয়েকজন। মা পেটাতে নিষেধ করলে নির্যাতিত সন্তানের সামনে মায়ের বুকে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দেয় তারা। সন্তানের জীবন ভিক্ষা চান মা। তবুও মন গলেনি তাদের। সন্তান যখন ফিরে পেয়েছেন তখন রক্তাক্ত নিথর দেহ। প্রাণ যায় যায়, সেই দেহটিকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাটুকু করেও বাঁচাতে পারেননি মা। 

মাছ মারার জাল চুরির অভিযোগে বাজার থেকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে রেললাইনের ধারে পাইপের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয় তহিদুর রহমানকে। নির্যাতনের খবর পেয়ে মাসহ এলাকাবাসী ছুটে যান। মায়ের সামনেই চুরির অপবাদ সন্তানকে পেটাতে থাকে কয়েকজন। মা পেটাতে নিষেধ করলে নির্যাতিত সন্তানের সামনে মায়ের বুকে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দেয় তারা। সন্তানের জীবন ভিক্ষা চান মা। তবুও মন গলেনি তাদের। সন্তান যখন ফিরে পেয়েছেন তখন রক্তাক্ত নিথর দেহ। প্রাণ যায় যায়, সেই দেহটিকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাটুকু করেও বাঁচাতে পারেননি মা। 

দিনাজপুর সদর উপজেলার কাউগা সাহেবগঞ্জ এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) চুরির অপবাদে তহিদুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত তহিদুর রহমান দিনাজপুর সদরের কাউগা সাহেবগঞ্জ এলাকার মৃত মেহের আলীর ছেলে

স্থানীয় বাসিন্দা রায়হান আলী বলেন, হোটেলে কাজ করা অবস্থায় তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হয়। এলাকাবাসী খোঁজ পেয়ে হাতে পায়ে ধরে তহিদুরকে না মারার জন্য অনুরোধ করলেও তারা শোনেনি। উল্টো যারা অনুরোধ করেছে তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাকে নির্যাতন করে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

নিহত তহিদুরের ফুফাতো ভাই আলতাফ হোসেন বলেন, কাজের কথা বলে এলাকার প্রভাবশালী জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে তার জামাই জহুরুলসহ অন্য দুর্বৃত্তরা তিন দফায় পিটিয়ে তহিদুলকে হত্যা করে মরদেহ বাড়িতে রেখে যায়। জাহাঙ্গীর একজন সন্ত্রাসী। তার বাবা একজন হত্যাকারী ছিল।

তোহিদুরের মা তাহমিনা বেগম জড়িত কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গতকাল শুক্রবার বৃষ্টি পড়ছে, ঘরে চাল ছিল না। সাহেবগঞ্জ বাজারে হোটেলে কাজ করার জন্য যায় বাসা থেকে। ফেরার সময় চাল নিয়ে আসতেছি মা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় তহিদুর। দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল হতে চলেছে তখন খবর পেলাম তহিদুরকে কারেন্ট জাল চুরির অপবাদ দিয়ে আমাদের এলাকার জাহাঙ্গীর আলম রেললাইনের ধারে মোটা একটি পাইপের সাথে বেঁধে পেটাচ্ছে। ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে যাই রেললাইনের ধারে। আমার সামনেই আমার ছেলেকে পেটাচ্ছে, ছেলে চিৎকার করছে। তখন আমি জাহাঙ্গীরের হাতে পায়ে ধরে বলছি মা হিসেবে আমার ছেলের জীবনকে ভিক্ষা দাও। কোনোভাবেই ওই নিষ্ঠুর জাহাঙ্গীর আমার কথা শোনেনি। জাহাঙ্গীরের পা চেপে ধরছি আমার ছেলেকে যেন না মারে, উল্টো জাহাঙ্গীর লাথি মেরে আমাকে ছিটকে ফেলে দিয়েছে।

এ ঘটনায় নিহত তহিদুরের ফুফাতো ভাই শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আসামিরা হলেন- সদর উপজেলার সাহেবগঞ্জ হাট মহল্লার তসলিম উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, তার জামাতা জহুরুল হক, চুনিয়াপাড়া গ্রামের মনিরুল মন্ডলের ছেলে ফিরোজ মিয়া, একই গ্রামের মন্টুর ছেলে সুমন এবং গলাহার গ্রামের শামসুলের ছেলে আমুকে।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, তহিদুর হত্যার ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য গতকাল থেকে অভিযান চলছে। খুব শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

সোহাগ/আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *