সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ও সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা গতকাল বুধবার ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) সপ্তমী পূজা শুরু হয়েছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ও সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা গতকাল বুধবার ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) সপ্তমী পূজা শুরু হয়েছে।
দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভের মধ্যে চলছে মহাসপ্তমী। সকাল থেকে নগরীর মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও মহাপ্রসাদ গ্রহণ চলছে।
নগরীর জেএমসেন হল, রামকৃষ্ণ মিশন, কৈবল্যধাম, হাজারী গলি, গোসাইল ডাঙা, কুসুম কুমারী বিদ্যালয়, চেরাগি পাহাড়সহ বিভিন্ন মণ্ডপের প্রবেশ চলছে পূজা আর্চনা। প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় নির্বিঘ্নে চলছে পূজার কার্যক্রম।
এদিকে নগরের বেশিরভাগ মণ্ডপে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশকে নিয়ে অধিষ্ঠিত হয়েছেন দেবী দুর্গা। আনন্দ আয়োজনে বরণ করা হয় দেবী দুর্গাকে।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান, দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দ্বীপ দিয়ে পুজো করেন ভক্তরা। সপ্তমী পুজো উপলক্ষ্যে একই দিন সন্ধ্যায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন মণ্ডপে ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবী দুর্গা এবার মর্তে আগমন করবেন দোলা বা পালকিতে। ফল মহামারি ও দুর্ভোগ। আর গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। ফল ছত্রভঙ্গ। অর্থাৎ সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। আসা-যাওয়ার উভয় ক্ষেত্রেই ফল অশুভ।
প্রসঙ্গত, গত বছর দেবী দুর্গার আগমন-গমন হয়েছিল ঘোড়ায়। শাস্ত্রমতে বলা হয়েছ, কোনো বছর যদি দেবী দুর্গার আগমন ও গমনের বাহন একই থাকে, তা অশুভ প্রভাব বিস্তার করে।
সাধারণত আশ্বিনের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন, অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন পর্যন্ত পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও শুভ মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা হয়। কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় হয় সমাপ্তি। গত ৬ অক্টোবর শুভ মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই দিন থেকেই পূজার সময় ও ক্ষণ গণনা শুরু হয়।
বোধন অর্থ দেবীকে জাগ্রত করে আহ্বান করা। সনাতন বিশ্বাসে, কৈলাস ছেড়ে পিতৃগৃহে আসা দুর্গার অকালবোধন আজ। বোধনের পরই হবে ষষ্ঠীপূজা। ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে বিভিন্ন মণ্ডপে দেবীর অধিষ্ঠান দেওয়া হবে। এদিন সন্ধ্যায় ধূপের ধোঁয়ায় সায়ংকালে কাঁসর-মন্দিরা ও ঢাক-ঢোলের বাদ্য আর পুরোহিতের ভক্তি কণ্ঠে ধ্বনিত হবে— ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নম নম।’
মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে স্বামীর গৃহ কৈলাস ছেড়ে দেবী দুর্গা পিতৃগৃহে আসবেন দোলায় চড়ে। আর বিজয়া দশমীর দিন ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে।
দেবী দুর্গার আগমন ও গমনে শাস্ত্রে বলা হয়েছে— ‘রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়ো, গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং নৌকায়াং বুধবাসরে।’ সপ্তমীর দিন যদি রোববার এবং সোমবার হয়, তাহলে দুর্গার আগমন ও গমন হবে গজে। ফল— ‘গজে চ জলদা দেবী শস্যপুর্ণা বসুন্ধরা’। ঠিক এই রকমই শনিবার ও মঙ্গলবারে দুর্গার আগমন ও গমন হলে ঘোটকের প্রভাব থাকবে। যদি বুধবারে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন হয় তাহলে তিনি আসবেন এবং যাবেন নৌকায়। ফল— ‘শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম’। আবার দুর্গার আগমন ও গমন যদি বৃহস্পতি ও শুক্রবারে হয় তাহলে তিনি দোলায় আসবেন এবং যাবেন। ফল- ‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’।
এদিকে পূজাকে সামনে রেখে পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত জেএমসেন হল প্রাঙ্গণে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল।
এছাড়া নগরের অন্যান্য পূজামণ্ডপে পূজা-অর্চনা, প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষাবৃত্তি, বস্ত্র ও শিক্ষাসামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রতিমা তৈরি ও মণ্ডপে প্রতিমা স্থাপন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। প্রশাসনের যথেষ্ট সহযোগিতা আছে। আশা করি পুরো পূজা নির্বিঘ্নে শেষ হবে।’
এবার চট্টগ্রাম নগরের ১৬ থানায় ২৯২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ১ হাজার ৫৯৪টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা ও ৫২৮টিতে হবে ঘট পূজা।
আরএমএন/এমএ