আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি এখন ভোটারদের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত। দেশটির ভোটের লড়াইয়ের আগ মুহূর্তে নিউইয়র্কে চলছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। শহরটি এখন বিশ্বনেতাদের পদচারণায় মুখরিত।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি এখন ভোটারদের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত। দেশটির ভোটের লড়াইয়ের আগ মুহূর্তে নিউইয়র্কে চলছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। শহরটি এখন বিশ্বনেতাদের পদচারণায় মুখরিত।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতিসংঘের অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন। এদিন অধিবেশনের ফাঁকে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। গত তিন দশকে বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে এ বৈঠক হতে যাচ্ছে।
নিউইয়র্কে ড. ইউনূসের সঙ্গে বাইডেনের হতে যাওয়া বিরল সাক্ষাতে ঢাকা-ওয়াশিংটনের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের বাইরে ডেমোক্রেটদের ‘ভোট কূটনীতি’ দেখছেন ঢাকার কোনো কোনো কূটনীতিক। তারা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ভোট গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের তিন অঙ্গরাজ্য- নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ও কানেকটিকাটের ভোটারগণ।
ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, সামনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে দক্ষিণ এশিয়ান-আমেরিকানদের ভোটের গুরুত্ব আছে। বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ভোট কিন্তু ম্যাটার করে। যুক্তরাষ্ট্রের তিন অঙ্গরাজ্যখ্যাত- নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ও কানেকটিকাটে প্রচুর বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি আছেন। তাদের ভোটের আলাদা গুরুত্ব আছে। আমাদের বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ভোটও কিন্তু ম্যাটারস। ড. ইউনূসের সঙ্গে হিলারি পরিবারের একটা আন্তরিক সম্পর্ক আছে। এটিও কিন্তু কম নয়। প্রধান উপদেষ্টা কিন্তু নিজ ইমেজ দিয়ে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের কাছে টানতে পারেন।
পশ্চিমা একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূস নিউইয়র্কে বৈঠক করবেন, এটি কিন্তু উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। কারণ, নিউইয়র্কে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় না। সেখানে আমাদের সঙ্গে কিন্তু হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে বেশি গুরুত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে মার্কিনিদের।
‘বৈঠকে উভয়পক্ষ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবে, অবশ্যই। একইসঙ্গে আঞ্চলিক ইস্যুও আসবে। তাদের তো একটা চাওয়া-পাওয়া থাকবে। কূটনীতিতে রাজনীতি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সামনে যেহেতু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ভোটের কূটনীতিও থাকতে পারে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দোদুল্যমান ভোটার অধ্যুষিত যে কয়টি এলাকায় ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়ে থাকে সেসব এলাকায় বিদেশি ভোটারদের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। নিউইয়র্কের মতো রাজ্যগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি-আমেরিকান বাস করেন। মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ার মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জায়গাগুলোতেও বাংলাদেশি-আমেরিকানদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে লড়ার কথা ছিল বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। গত জুন মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নিয়ে বাইডেন ধরাশায়ী হন। চাপের মুখে পরের মাসে তিনি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে কমলাকে সমর্থন দেন। কমলার ম্যাজিকে সমর্থন বাড়তে থাকে ডেমোক্র্যাটদের। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কমলা হ্যারিস।
সব ঠিক থাকলে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সদরদপ্তরে ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে বসবেন। স্বাভাবিকভাবে বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি আঞ্চলিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার যে প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন ড. ইউনূস।
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যু, সীমান্ত হত্যা, পানি ব্যবস্থাপনা, ইলিশ রপ্তানি, বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা প্রত্যাখ্যান করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন করে প্রকাশ ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শুধু তা-ই নয়, দুই দেশের দায়িত্বশীলদের বক্তব্যও সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে কোন কোন বিষয় উপস্থাপিত হতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে এক জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক দিয়ে বিবেচনা করে। বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কিছুটা খারাপ। ওয়াশিংটনে নরেন্দ্র মোদি ও বাইডেনের হওয়া বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এসেছে। ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ড. ইউনূসের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠকে ভারত প্রসঙ্গ আসতে পারে। এক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে দূতিয়ালি করার সুযোগ থাকবে বাইডেনের।
এ কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আছে। এ সরকার এটা নিয়ে আন্তরিকতা দেখাচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরে সংস্কার নিয়ে আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পেয়েছে; বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংস্কার। এক্ষেত্রে সংস্কার ইস্যু বা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়েও কথা আসতে পারে।’
বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি নিউইয়র্কে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স হামাদ বিন ঈসা আল খালিফা, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শফ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. ইউনূস।
এ ছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক সামান্থা পাওয়ার, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস। ওইদিন রাতে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।
এনআই/এমএআর/এমএ