ভয়ংকর হচ্ছে ডেঙ্গু, গতানুগতিক পদক্ষেপে ‘আটকা’ সিটি কর্পোরেশন

ভয়ংকর হচ্ছে ডেঙ্গু, গতানুগতিক পদক্ষেপে ‘আটকা’ সিটি কর্পোরেশন

প্রতি বছরই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দাদের নাকানিচুবানি খাওয়ায় ডেঙ্গুর বাহক ছোট্ট মশা। পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক হয় যে, সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীর চাপে ‘তিল ঠাঁই’ হয় না। বিগত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে ডেঙ্গুতে কত যে প্রাণ গেছে, তবুও কোনোভাবেই এর ভয়াবহতা রুখতে পারেনি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এর ওপর ‌এ বছর ঢাকার দুই সিটিতে নেই কোনো মেয়র ও কাউন্সিলর। সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ দিলেও মাঝে অনেকটাই অকেজো হয়ে পড়ে কার্যক্রম। মশক নিধনসহ ডেঙ্গু মোকাবিলার কাজে কিছুটা ভাটা পড়ায় বর্তমানে পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে নাজুক।‌ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ রূপ নিলে প্রাণহানি ঘটবে বহু মানুষের। অথচ ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ রেখেছে তাদের কার্যক্রম।

প্রতি বছরই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দাদের নাকানিচুবানি খাওয়ায় ডেঙ্গুর বাহক ছোট্ট মশা। পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক হয় যে, সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীর চাপে ‘তিল ঠাঁই’ হয় না। বিগত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে ডেঙ্গুতে কত যে প্রাণ গেছে, তবুও কোনোভাবেই এর ভয়াবহতা রুখতে পারেনি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এর ওপর ‌এ বছর ঢাকার দুই সিটিতে নেই কোনো মেয়র ও কাউন্সিলর। সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ দিলেও মাঝে অনেকটাই অকেজো হয়ে পড়ে কার্যক্রম। মশক নিধনসহ ডেঙ্গু মোকাবিলার কাজে কিছুটা ভাটা পড়ায় বর্তমানে পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে নাজুক।‌ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ রূপ নিলে প্রাণহানি ঘটবে বহু মানুষের। অথচ ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ রেখেছে তাদের কার্যক্রম।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর থেকে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলররা অফিস করছেন না, এক কথায় তারা লাপাত্তা। কারণ, তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের মতাদর্শের। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দুই সিটি কর্পোরেশনের সব কাউন্সিলরকে অপসারণ করা হয়। ফলে ভেঙে পড়ে মশক নিধন কার্যক্রম। এরপর থেকে ডেঙ্গু মোকাবিলার সাধারণ কার্যক্রমগুলোও সেভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। আর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে মেয়রের স্থলে প্রশাসক বসিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নাগরিকসেবায় তারা কাজ শুরু করলেও অনেক কিছুই এখনো বুঝে উঠছে পারছেন না।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। সেখানে বলা হয়— দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর হার বেশি। এর অর্থ হচ্ছে এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো– ১২, ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭ ও ৩৩। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো– ৪, ১৩, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭ ও ২৩।

মশার উপদ্রবে রীতিমতো অতিষ্ঠ ঢাকার দুই কোটির বেশি মানুষ। নতুন দুই সিটিতে প্রশাসক আসার পর নানা উদ্যোগ, অভিযানসহ নিত্যনতুন কার্যপরিচালনা করেও হার মানতে হচ্ছে মশার কাছে। মশার অত্যাচার থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পারছে না সংস্থা দুটি। দিন নেই রাত নেই, ঘরে কিংবা বাইরে, বাসা কিংবা অফিস— সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব। ক্ষুদ্র এ পতঙ্গের যন্ত্রণায় রীতিমতো অতিষ্ঠ নগরবাসী। শুধু রাত নয়, দিনেও কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। ওষুধ বা স্প্রে, কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না এর উপদ্রব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হয় ডেঙ্গুর মৌসুম। সে মাসে আক্রান্ত হয় দুই হাজার ৬৬৯ জন। আর মারা যান ১২ জন। এরপর আগস্টে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ২৭ জনের। আর আক্রান্ত হয় ছয় হাজার ৫২১ জন। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৪১ হাজার ৮১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২০১৫ জনের। এছাড়া, গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান রেকর্ড এক হাজার ৭০৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, এ বছর ডেঙ্গু সংক্রমণের বিস্তার শুরু থেকেই স্থানীয় পর্যায়ে বেশি থাকলেও ক্রমে সে চিত্র বদলেছে। সারা দেশে মোট ভর্তি রোগীর ৪৪ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের। আর ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ রোগী চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে।

ক্ষুব্ধ নগরবাসী

সিটি কর্পোরেশন নাগরিকদের যেসব সেবা দিয়ে থাকে, তার মধ্যে মশা থেকে রক্ষা অন্যতম। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এতে ব্যর্থ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। বর্তমান সময়ে হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং মশক নিধনে কার্যক্রম আগের মতো না পরিচালিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, পুরো সপ্তাহে মশক নিধনে কোনো কর্মীকে দেখা যায় না। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রীতিমতো আতঙ্কিত তারা। 

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা খাইরুল আলম। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের খুব একটা দেখা যায় না ইদানীং। প্রতিদিনই শুনছি কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। পাশাপাশি মশার উপদ্রবও খুব বেড়েছে। অথচ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনের পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। 

তিনি বলেন, আগে মেয়রসহ কাউন্সিলররা মশক নিধন কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করতেন। আবার মশা বাড়লে আমরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারতাম। কিন্তু বর্তমান সময়ে কোনো কাউন্সিলর নেই। এদিকে ডেঙ্গু বাড়ছে, মশার অত্যাচারও বেড়েছে অনেক। কিন্তু আমরা অভিযোগ জানানোর জায়গা পাচ্ছি না। এছাড়া, মশক নিধন কর্মীদেরও মাঠে দেখতে পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এতে করে আমরা সবাই আতঙ্কিত।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন শনিরআখড়া এলাকার বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, ইদানীং মশার উপদ্রব খুব বেড়েছে। আমাদের এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু মশার ওষুধ ছিটাতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের এলাকায় আগে থেকেই মশার উপদ্রব বেশি, বর্তমান সময়ে এসে এ উপদ্রব আরো বেড়েছে। অথচ সিটি কর্পোরেশনের কোনো কাউন্সিলর না থাকায় আমরা অভিযোগ জানাতে পারছি না। মনে হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে।

তিনি বলেন, বাসায় ছোট বাচ্চা থাকার কারণে দিনের বেলাতেও ঘরে মশারি টানিয়ে রাখতে হয় আমাদের। যে হারে আমাদের এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, এতে করে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে আছি আমরা। সিটি কর্পোরেশনের প্রতি দাবি জানিয়ে বলতে চাই, মশার অত্যাচার থেকে আমাদের রক্ষা করতে আপনারা মশক নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করুন। ডেঙ্গু রোগী কমাতে, ডেঙ্গু থেকে আমাদের মুক্তি দিতে আপনারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। আমরা এ সমস্যা থেকে মুক্তি চাই। 

যা বলছেন সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্টরা

মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ এলাকাবাসী অভিযোগ জানালেও ভিন্ন কথা বলছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। দুই সিটিরই দাবি, এডিস মশা বাসাবাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্মায়। এর দায় নাগরিকদের সবচেয়ে বেশি। তাই মশা নিধনে নিজ বাড়ির আঙিনা নিজেকেই নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। আর বাইরে ড্রেন, নালা বা অন্য কোনো স্থানে মশা জন্মালে সিটি কর্পোরেশন তা নিধন করবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কর্মী জহুরুল ইসলাম বলেন, মশক নিধন কার্যক্রমে সকাল এবং বিকেলে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। আগে কাউন্সিলর অফিস থেকে আমাদের তদারকি করা হতো। এখন মশক নিধন সুপারভাইজাররা আমাদের মনিটরিং করেন। আমাদের কার্যক্রমে চলমান আছে। তবে, এ কথা সত্য যে, কাউন্সিলররা না থাকায় কার্যক্রমে কিছুটা ভাঁটা পড়েছে। কিন্তু আমরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছি না। এই ডেঙ্গু মৌসুমে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রমের একজন সুপারভাইজার মাসুদ রানা বলেন, আমাদের কর্মীরা সকাল এবং বিকেল দু-বেলাতেই নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। কারো ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সবসময় এসব কার্যক্রম মনিটরিং করে যাচ্ছি। তবে, এ কথা সত্য যে ইদানীং ডেঙ্গুর প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। হয়তো কাউন্সিলররা থাকলে আরও আগে থেকে নানাভাবে সাধারণ মানুষদের সম্পৃক্ত করে মশক নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। কিন্তু বর্তমানে কাউন্সিলররা না থাকায় এই কার্যক্রমে কিছুটা ছন্দপতন হয়েছে। আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি মশক নিধন কার্যক্রম আরও জোরদার গতিতে পরিচালনা করতে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মুখপাত্র আবু নাছের বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণে দৈনন্দিন নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি সব ওয়ার্ডে ক্রমান্বয়ে বিশেষ পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন‌ কার্যক্রম, চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। 

এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মুখপাত্র মকবুল হোসাইন বলেন, সপ্তাহব্যাপী মশক নিধনে পরিচালিত বিশেষ কার্যক্রমে এক লাখ ২১ হাজার ৮৮৬টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এসব লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে। মশা নিধনে আমাদের কোনো কার্যক্রমই থেমে নেই। মশক নিধনে যাবতীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও আমরা পরিচালনা করছি।

নানান উদ্যোগেও ব্যর্থ সিটি কর্পোরেশন

বাস্তব চিত্র বলছে, প্রতি বছর শত কোটি টাকা খরচ করেও রাজধানীবাসীকে মশার কবল থেকে মুক্তি দিতে পারছে না দুই সিটি কর্পোরেশন। নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হলেও সবকিছু ব্যর্থ করে দিয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বিস্তার হচ্ছে এডিস মশা।

বিগত বছরগুলোতে মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ হাতে নেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। দুই বছর আগে মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজতে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করেছিল ডিএনসিসি। এছাড়া, শহরজুড়ে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এডিস মশার প্রজননস্থল এবং পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, ডাবের খোসা, অব্যবহৃত টায়ার, কমোড ও অন্যান্য পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। যদিও এসব তেমন কোনো কাজে আসেনি। তারা যখন এসব কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছিল, তখন মশা মারতে অভিনব এক পদ্ধতি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। মশা মারতে দুই বছর আগে খাল, নালা, ড্রেনসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ব্যাঙ ছেড়েছিল সংস্থাটি।

ওই সময় দক্ষিণ সিটির কর্তৃপক্ষ মনে করেছিল যে, বাস্তুতন্ত্রের অংশ হিসেবে ব্যাঙগুলো পানিতে ভাসতে থাকা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলবে। ফলে সেসব স্থানে মশা আর বংশবিস্তার করতে পারবে না। এছাড়া, জিঙ্গেল বাজিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে তারা। এমন নানা উদ্যোগ নিয়েও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীকে মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে পারেনি।

সার্বিক বিষয় নিয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় সামনের দিনগুলোর পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে। একে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আগামী দিনগুলোয় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও সিটি কর্পোরেশনকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম আরও বেগবান করতে হবে।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ডেঙ্গু রোগীর বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রতিটি বাড়ির চতুর্দিকে ফগিং করে উড়ন্ত মশাকে মেরে ফেলতে হবে। যাতে কোনোভাবেই ডেঙ্গু বহনকারী মশাটি অন্য কাউকে আক্রান্ত করতে না পারে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হাসপাতালগুলোর চতুর্দিকে নিয়মিত ফগিং করতে হবে। যাতে সেখানে কোনো এডিস মশা বেঁচে না থাকে। হাসপাতাল এবং বাড়িতে থাকা যেকোনো ডেঙ্গু রোগীকে সবসময় মশারির ভেতরে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব এলাকায় এখনো ডেঙ্গু ব্যাপক আকার ধারণ করেনি, সেসব এলাকায় লার্ভা ধ্বংসের কীটনাশক ব্যবহারে জোর দিতে হবে।

এএসএস/কেএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *