ভবিষ্যতে পুলিশকে যেন ছাত্র-জনতার মুখোমুখি হতে না হয়   

ভবিষ্যতে পুলিশকে যেন ছাত্র-জনতার মুখোমুখি হতে না হয়   

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মেজাজি বক্তব্যের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে নজিরবিহীন দমন-পীড়ন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরিস্থিতি বুঝেও শেষ সময়েও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং আরও রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

পরিস্থিতি যখন একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তখনও মানতে চাননি তিনি। পরে পরিবারের সদস্যরা বোঝানোর পর পদত্যাগে রাজি হন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে গোপনে বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। কিন্তু মাঝখান থেকে ঝড়ে যায় ছাত্র-জনতার ৪ শতাধিক প্রাণ।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। থানায় থানায় হামলা পুলিশ সদস্যদের ধরে ধরে মারধর ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরকার বা আওয়ামী ঘেঁষা কেউ আটক হন কেউ বা আত্মগোপনে চলে যান। এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়েছে পুলিশের চেইন অব কমান্ড। দাবি উঠেছে পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন ও সংস্কারের।

অতি উৎসাহী, অপেশাদার এবং পক্ষপাতদুষ্ট কিছু পুলিশ সদস্য স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ নিয়ে নিরীহ ছাত্র-জনতাকে হত্যাসহ অত্যাচার ও নিপীড়ন চালিয়েছে। ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনীকে একই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বা ছাত্র-জনতার সম্মুখীন হতে না হয় এজন্য পুলিশ বাহিনীতে আমূল সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করছে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিকেলে রাজারবাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, ২০০৭ সালে তদানীন্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ইউএনডিপির সহায়তায় পুলিশ রিফর্ম প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় নিয়ে বিভিন্ন উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের পুলিশি ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে ‘দি বাংলাদেশ পুলিশ অর্ডিন্যান্স ২০০৭’ এর খসড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়নি। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ জারি করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

আমাদের সমিতি তাদের পক্ষপাতমূলক অপেশাদারি ও জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করছে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করছে। একইসঙ্গে নিরপরাধ পুলিশ সদস্য এবং তাদের পরিবারবর্গ যাতে হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঐতিহ্যবাহী পুলিশ বাহিনীকে দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে নিরাপদে এবং নবোদ্যমে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী সমাজ ও দেশ গঠনের আন্দোলনের শুরু থেকে এ যাবৎ ছাত্র-জনতা, পুলিশ, আনসার, সাংবাদিক যারা দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার শান্তি এবং যারা গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। দেশের জনগণের জান-মাল ও সরকারি সম্পত্তি হেফাজতে রাখার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পুলিশের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা বর্তমানে আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। আসুন আমরা এ পবিত্র দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করি।

এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী আরও বলেন, বিগত সরকারের একটি বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের কারণে ২০২০ সালের জানুয়ারির আগে যারা অবসরে গেছেন তারা রেশন সুবিধা হতে বঞ্চিত হয়েছেন। বঞ্চিত সকল অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা রেশন সুবিধার দাবি করছি।

অধস্তন সকল পুলিশ সদস্যকে আইজিপির নির্দেশে যথা শিগগিরি নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানপূর্বক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কাজে নিজেদের নিয়োজিত করার জন্য আহ্বান জানাই। তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে।

জেইউ/এসকেডি

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *