বাজারদর ভালো পেলে কৃষক মজিবরের টার্গেট ৫০ লাখ

বাজারদর ভালো পেলে কৃষক মজিবরের টার্গেট ৫০ লাখ

প্রবাস জীবনে সাফল্য না পেলে কৃষিতে সফল হয়েছেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের চামারখাই গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান। ২২ বছর আগে ৫ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কৃষি কাজ। শুরু দিকে তেমন লাভবান না হলেও হাল ছাড়েননি। ফুলি কপিসহ অন্যান্য সবজি চাষ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন। কঠিন পরিশ্রম আর ঝুঁকি নিয়েই কৃষিকাজে মাধ্যমে সফল হয়েছেন।

প্রবাস জীবনে সাফল্য না পেলে কৃষিতে সফল হয়েছেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের চামারখাই গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান। ২২ বছর আগে ৫ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কৃষি কাজ। শুরু দিকে তেমন লাভবান না হলেও হাল ছাড়েননি। ফুলি কপিসহ অন্যান্য সবজি চাষ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন। কঠিন পরিশ্রম আর ঝুঁকি নিয়েই কৃষিকাজে মাধ্যমে সফল হয়েছেন।

সবজি চাষে সুনাম রয়েছে রাজধানীর পাশের জেলা মানিকগঞ্জের। অনুকূল আবহাওয়া আর উত্তম পরিচর্যায় এখানকার সবজির ফলনও হয় ভালো। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় জেলার উৎপাদিত সবজিগুলোর চাহিদাও রয়েছে বেশ। সবমিলে ফুলকপি চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন এখানকার কৃষকেরা। এতে আগামজাতের ফুলকপিসহ রবি মৌসুমের আবাদ দিন দিন বাড়ছে।

জেলার সাতটি উপজেলায় কম বেশি সবজির আবাদ হলেও সিংগাইর সাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ সদরে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ করা হয়। এর মধ্যে আগাম ফুলকপিসহ সারা বছরই বাণিজ্যিকভাবে নানান জাতের সবজি চাষ করেন এসব এলাকার কৃষকেরা। কম খরচে বেশি লাভের আশায় শীতকালীন আগাম সবজি চাষের ধুম চলে এসব এলাকার কৃষক পরিবারগুলোতে।

জেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে শীতকালীন আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মূলা, করলা, পটল, লাল ও পালং শাক, শসাসহ বিভিন্ন জাতের সবজি। ভোর থেকে কৃষকেরা ফসলের ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত।

সরেজমিনে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের চামারখাই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ভোর থেকে সবজি ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা। কেউ ফুলকপি ক্ষেতে কেল কাটছে আবার কেউ করলা ক্ষেতে কীটনাশক দিচ্ছে। শ্রমিকদের সঙ্গে সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা করতে দেখা গেছে অনেক কৃষককে।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, গত রবি মৌসুমে জেলায় ৯ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করেছিল কৃষকেরা। এবছর সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৩৮২ হেক্টরের জমি। গতবছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে সবজির আবাদ কমেছে ১০ হেক্টরের। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে সবজির।

আগাম ফুলকপি আবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষক মজিবর রহামন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অনুকূল আবহাওয়া আর বাজারদর ভালো পেলে চলতি রবি মৌসুমে আগাম ফুলকপি চাষ করে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার বিক্রির টার্গেট করেছি। এবারে ১৮ বিঘা জমিতে শীতকালীন আগাম ফুলকপি আবাদ করছি। এবার ৩০ বিঘার মত জমিতে ফুলকপি চাষ করার পরিকল্পনা করছি। বাকি ১২ বিঘা জমিতে মধ্যমকালীন ফুলকপির চারা রোপণের জন্য জমিও তৈরি করা হয়েছে আর চারাগুলোর প্রস্তুত করা হয়েছে।

মজিবর বলেন, ‘ফুলকপির বীজ, চারা উৎপাদন থেকে জমি তৈরি, হালচাষ, চারা রোপণসহ জমির পরিচর্যায় শ্রমিকের মজুরিসহ বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। তাতে ১৮ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে এখন পর্যন্ত ৭ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। তবে ফুলকপি বাজারে বিক্রির উপযোগী হওয়া পর্যন্ত বিঘা প্রতি আরো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। সে হিসেবে ১৮ বিঘা জমিতে ফুলকপি আবাদে এবার মোট খরচ হবে প্রায় ১১ লাখ টাকা। এক সপ্তাহ পর থেকেই আগাম জাতে ফুলকপি ফলন তুলতে পারবো। এবারে ফুলকপি মৌসুমে ৫০ লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রির টার্গেট করেছি। আশা করছি, অনুকূল আবহাওয়া আর পাইকারি বাজারে প্রতিপিস ফুলকপির দরদাম ভালো পেলে সব খরচ বাদে এবছরও ৩০ লাখ টাকার মত লাভ হবে।

শুধু কৃষক মজিবর রহমানেই নয়, তার মত স্বপ্ন বুনছেন আরও অনেক ফুলকপি চাষি। জেলা শহরের ইসলামি ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আশায় গতবছর থেকে ফুলকপির চাষ করছেন কৃষক বশিদ আহমেদ। 

আলাপকালে তিনি বলেন, ‘অনুকূল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন আর বাজারদর ভালো পেলে আগাম ফুলকপি চাষে লাভবান হবো। কিন্তু আগাম ফুলকপি সবজি আবাদে ঝুঁকি রয়েছে অনেক। অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত আর ফসলের সঠিক পরিচর্যার না হলে ফলন ভালো হয় না। অন্যদিকে সবজির পাইকারি বাজারে দরদাম ভালো না পেলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

বশির বলেন, ‘গতবছর ফুলকপি চাষে বেশ লাভ হয়েছিল। এ বছর ১২ বিঘার বেশি জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। সবমিলে এখন পর্যন্ত আমারা প্রায় ৫ লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। আশা করছি, বাম্পার ফলন আর বাজারদর ভালো থাকলে ৩০ লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রির টার্গেট করেছি। তাতে সব খরচ বাদে এবারও বেশ লাভ হবে বলে তিনি জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক ড. বরীআহ নূর আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলার কৃষকেরা আগামজাতে ফুলকপির আবাদ শুরু করেছে। কিছুদিন পরেই ফলনও তুলতে পারবে। কৃষি অফিস থেকে ফুলকপি চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাতে ফুলকপির চারার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকরা ফুলকপির চাষ করছে। আমরা আশা করছি, অনুকূল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন আর বাজারদর ভালো পেলে ক্ষতি পুষিয়ে আগামীতে ফুলকপি চাষীরা বেশ লাভবান হবেন।

সোহেল হোসেন/এমএসএ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *