ফ্লিক মাস্টারক্লাস– যে কৌশলে রিয়ালকে উড়িয়ে দিলো বার্সেলোনা

ফ্লিক মাস্টারক্লাস– যে কৌশলে রিয়ালকে উড়িয়ে দিলো বার্সেলোনা

বার্সেলোনা সম্ভবত নিজেদের পরবর্তী নিউক্লিয়াস পেয়েই গিয়েছে। ইয়োহান ক্রুইফ, রোমারিও, রোনালদিনহোর পর লিওনেল মেসি দীর্ঘদিন ছিলেন বার্সেলোনার প্রাণশক্তি। আশেপাশে জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, পেদ্রো, স্যামুয়েল ইতো কিংবা কার্লোস পুয়োলরা থাকলেও বার্সেলোনার নিউক্লিয়াসটা ছিলেন লিওনেল মেসিই।

বার্সেলোনা সম্ভবত নিজেদের পরবর্তী নিউক্লিয়াস পেয়েই গিয়েছে। ইয়োহান ক্রুইফ, রোমারিও, রোনালদিনহোর পর লিওনেল মেসি দীর্ঘদিন ছিলেন বার্সেলোনার প্রাণশক্তি। আশেপাশে জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, পেদ্রো, স্যামুয়েল ইতো কিংবা কার্লোস পুয়োলরা থাকলেও বার্সেলোনার নিউক্লিয়াসটা ছিলেন লিওনেল মেসিই।

আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা ক্লাব ছাড়ার পরে বার্সেলোনা অনেককেই দলে নিয়েছে। তবে কেউই পারেননি ব্লু-গ্রানাদের উড়ন্ত সময় এনে দিতে। মাঝে বার্সেলোনার দাপট বা ম্যাচ জয়গুলো সাময়িক স্বস্তি দিলেও কাতালুনিয়ার জায়ান্টরা খুব দৃঢ়ভাবে ফিরে এসেছে এমন বলার সুযোগ ছিল না সেই অর্থে। তবে এবার বার্সেলোনা খুঁজে পেয়েছে তাদের নতুন নিউক্লিয়াস। তিনি খেলোয়াড় নন। জার্মান কোচ হ্যান্সি ফ্লিকই কাতালান অঞ্চলের নতুন প্রাণশক্তি।  

২০১৮-১৯ মৌসুমের পর এবারেই তাই এল-ক্লাসিকো ছড়িয়েছিল নতুন উত্তাপ। অনেকের মতেই নতুন প্রজন্মের ক্লাসিকো দ্বৈরথের শুরু এই ম্যাচ থেকেই। সেখানে বার্সেলোনা পেয়েছে উড়ন্ত সূচনা। রিয়াল মাদ্রিদকে তাদেরই ঘরের মাঠে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে হ্যান্সি ফ্লিকের দল। জোড়া গোল করেছেন লেভানডফস্কি, একটি করে গোল এসেছে লামিনে ইয়ামাল এবং রাফিনিয়ার।

ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে বার্সা কোচ ফ্লিক জানিয়েছিলেন, হাই লাইন ডিফেন্স প্রতি ম্যাচেই ব্যবহার করবেন এমন পরিকল্পনা নেই তার। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে প্রেসিং ফুটবলের পারফেক্ট রূপ দেখিয়েছেন এই জার্মান কোচ। ম্যাচের শুরুর ৪৫ মিনিটে রিয়াল আধিপত্য দেখিয়েছে ঠিকই। তবে সেটাই পরের ৪৫ মিনিটের জন্য ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর রাস্তা খুলে দেয় বার্সার জন্য। 

প্রথমার্ধের ৩০ মিনিটের মাঝেই কিলিয়ান এমবাপে অফসাইডের ফাঁদে পড়লেন ৬ বার। এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা আর অরেলিন চুয়ামেনিরা বল পেলেই প্রেসিং করেছেন পাউ কুবারাসি, জ্যুলস কুন্ডেরা। মাদ্রিদের মিডফিল্ডের প্রতিটা ডিফেন্সচেরা পাসেই তাই এমবাপে-ভিনিসিয়ুসরা ছিলেন অফসাইডে। 

৩০ মিনিটে এমবাপের গোল বাতিলের পর থেকে অতিমাত্রায় সাবধানী হয়ে ওঠা কিংবা মাদ্রিদের পাল্টা হাইপ্রেসিং ফুটবলের প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। সেকেন্ড হাফে যেটা বার্সেলোনা পাল্টা কৌশল হিসেবে আগেই ভেবে রেখেছিল।

প্রথমার্ধে নাম্বার টেন রোলে ছিলেন ফারমিন লোপেজ। খেলার ধরণে কিছুটা ধীরগতির কিন্তু পাসিংয়ে পারফেক্ট। দ্বিতীয়ার্ধে ফারমিনকে তুলে নেন ফ্লিক। নামানো হয় ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়াংকে। আর পেদ্রিকে তুলে দেয়া হয় নাম্বার টেন রোলে। পেদ্রি বল পারে অসাধারণ, ডামি রানিং-ট্র্যাক ব্যাক কিংবা থ্রু পাসের কমপ্লিট প্যাকেজ। আক্রমণে তার সংযুক্তি খেলার ধার বাড়িয়েছিল। 

তবে এরচেয়ে বড় কাজ করেছেন ডি ইয়াং। দ্বিতীয়ার্ধে এই ডাচম্যান খেলেছেন বিটুইন দ্য লাইনে। আরও স্পষ্ট করে বললে অ্যাংকর রোলে। চুয়ামেনি এবং কামাভিঙ্গার মাঝে সংযোগ নষ্ট করেছে। আর তার নামার পরেই মার্ক ক্যাসাদোকে খেলানো হয় ডিপ লাইয়িং মিডফিল্ডার হিসেবে। ডি ইয়ং মাঠে থাকায় বার্সেলোনা বল পায়ে রেখেছে বেশি সময়। খেলার গতি অনেকটাই ধীর করেছে। 

বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদ প্রথমার্ধের পর বার্সাকেই চেপে ধরতে চেয়েছিল হাই লাইন ডিফেন্সে। লেভানডফস্কির প্রথম গোলটাও এসেছে এমন দুই দলের এমন ভিন্নধর্মী ট্যাকটিক্সে। বার্সার ধীরগতির কারণে ফার্লান্দ মেন্দি খানিকটা নিচেই রয়ে গিয়েছিলেন। লেভানডফস্কির কাছে থ্রু বল গিয়েছিল একেবারেই ঠিকঠাক। সেখান থেকে আসে প্রথম গোল। 

দ্বিতীয় গোলে বালদেকে লম্বা পাসটাও দিয়েছিলেন এই ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়াং। তার এমন দুর্দান্ত একটা পাস বুঝে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিলেন লুকাস ভাস্কেজ। এদের মিলিতার ও অ্যান্তোনিও রুদিগার পজেশন ঠিক করার আগেই বালদের ক্রস খুঁজে নেয় লেভানডফস্কিকে। বার্সা নাম্বার নাইনের হেড এনে দেয় ২ গোলের লিড।

পুরো ম্যাচে ইংলিশ মিডফিল্ডার জ্যুড বেলিংহামকে একেবারেই নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল বার্সেলোনা। চলতি মৌসুমে অবশ্য বেলিংহাম নিজেই খাবি খেয়েছেন ভিনিসিয়ুস এবং এমবাপে কম্বিনেশনে। ক্লাসিক্যাল নাম্বার টেন রোলে গতকাল তাকে নামিয়েছিলেন কোচ আনচেলত্তি। সেই কাজটা ঠিকঠাক করা হয়নি তার।

লুকা মদ্রিচের ফ্রি-কিক থেকে সহজ সুযোগ মিস করেছেন। একপর্যায়ে বেলিংহামকে নিয়ে আসা হয়েছিল ডানপ্রান্তে লুকাস ভাস্কেজের কাছাকাছি। তাতে আরও বেশি নিষ্ক্রিয় হয়েছেন এই ইংলিশম্যান। লামিনে ইয়ামাল বারবারই ট্র্যাক ব্যাক করে বেলিংহামকে আটকেছেন। তাতে রিয়ালের ভোগান্তিটাও বেড়েছে অনেকখানি। 

হ্যান্সি ফ্লিক জানতেন তার দলের ছেলেরা অক্টোবর মাসে টানা তিন ম্যাচে কঠিন পরীক্ষা দেবে। সেভিয়া, বায়ার্ন মিউনিখ আর রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে সেই পরীক্ষায় দারুণভাবে উৎরে গিয়েছে বার্সা। ফ্লিকও কঠিন এই সূচির পর দলকে দিয়েছেন ছুটি। বার্সেলোনার নতুন নিউক্লিয়াস বেশ ভালোভাবেই জানেন, এবারের মৌসুমে আরও বড় প্রত্যশার চাপ সামাল দিতে হবে তাকে।  

জেএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *