ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, দুর্ভোগ কমেনি বানভাসিদের

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, দুর্ভোগ কমেনি বানভাসিদের

ফেনীতে বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। জেলার দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার কিছু অংশে লোকালয়ে এখনো পানি থাকলেও অন্যান্য উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে পানি কমলেও বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি। 

ফেনীতে বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। জেলার দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার কিছু অংশে লোকালয়ে এখনো পানি থাকলেও অন্যান্য উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে পানি কমলেও বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় প্লাবিত হওয়া পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও এখনো পানি রয়েছে। সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় ট্রলি ও ট্রাকে করে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন মানুষজন। দাগনভূঞা উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও রাজাপুর, সিন্দুরপুর, পূর্ব চন্দ্রপুর, রামনগর, ইয়াকুবপুর, মাতুভূঞা, জায়লস্কর, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার কিছু স্থানে মানুষজন এখনো পানিবন্দি রয়েছেন। জেলার সোনাগাজী উপজেলার সুলাখালী, মানোমিয়ার বাজার এলাকা, ডাকাবাংলা থেকে ভোর বাজার সড়ক, আমিন উদ্দিন মুন্সি বাজারের আশপাশ, মতিগঞ্জ বাজার, ভোয়াগ গ্রাম ও ইসলামপুরে এখনো পানিবন্দি শত শত পরিবার। এ ছাড়া ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ও মোটবী, কালিদহ ও ফাজিলপুর ইউনিয়নের অনেক এলাকায় এখনো পানি নামেনি। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুসমান পানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি রয়েছে। 

ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলায় ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারমধ্যে দেড়লাখ মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে করে খাবার পাঠানো হচ্ছে। জেলায় একটি এবং ছয় উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি সাতটি হাসপাতালে মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে। 

পরশুরাম উপজেলার টেটেশ্বর এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসেম বলেন, বন্যার পানি থেকে বাঁচলেও এখন মনে হয় খাবারের জন্য মরতে হবে। রান্না করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। ঘরে থাকা চাল-ডাল, ধানসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পানিতে ভিজে গেছে। আবার টাকা থাকলেও সরবরাহ না থাকায় বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। 

একই উপজেলার বীরচন্দ্র নগর গ্রামের বাসিন্দা মীর হোসেন বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ১০দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। নেটওয়ার্ক না থাকায় স্বজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। গ্যাস সংকট আবার চার্জ দিতে না পারায় সিএনজি- ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোও বন্ধ রয়েছে। 

ফেনী সদরের শর্শদি ইউনিয়নের উত্তর আবুপুর গ্রামের বাসিন্দা নিয়াজ আহম্মদ বলেন, বাড়ির সামনে এখনো কোমরসমান পানি। কোনো ধরনের ত্রাণসামগ্রী পাইনি। শহরের একপাশে হওয়ায় এদিকে কেউ আসছেন না। খুব খারাপ সময় পার করছি আমরা।

বন্ধুয়া এলাকার বাসিন্দা মো. সাকিব বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো শত শত মানুষ। প্রচুর পরিমাণ ত্রাণের গাড়ি আসলেও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন এখনো খাবার পাচ্ছে না। সঠিকভাবে সমন্বয় করা গেলে আমাদের এতটা দুর্ভোগে পড়তে হতো না।

বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে দাগনভূঞা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবেদিতা চাকমা বলেন, পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। যারা নিজ উদ্যোগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের কাছে শুকনো খাবার, পানি পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। 

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‍্যাব এবং ছাত্র-জনতার চেষ্টায় উদ্ধার এবং খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে খাবার পাঠানো হচ্ছে।

তারেক চৌধুরী/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *