প্লাস্টিকের ব্যাংকে জমানো সব টাকা বন্যার্তদের দিয়ে গেল ছোট্ট আফরা

প্লাস্টিকের ব্যাংকে জমানো সব টাকা বন্যার্তদের দিয়ে গেল ছোট্ট আফরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গণত্রাণ কর্মসূচি চলছে। যদিও এখানে আজ শুধু নগদ অর্থ আর ওষুধসামগ্রী গ্রহণ করা হচ্ছে। আর জিমনেশিয়াম মাঠে জমা নেওয়া হচ্ছে অন্য সকল ধরনের ত্রাণসামগ্রী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গণত্রাণ কর্মসূচি চলছে। যদিও এখানে আজ শুধু নগদ অর্থ আর ওষুধসামগ্রী গ্রহণ করা হচ্ছে। আর জিমনেশিয়াম মাঠে জমা নেওয়া হচ্ছে অন্য সকল ধরনের ত্রাণসামগ্রী।

বিগত কয়েক দিনের মত আজও হাজারো মানুষের ভিড় সেখানে। দুপুরের দিকে টিএসসির গেট দিয়ে প্রবেশ করলো ছোট্ট এক শিশু। মাথায় পরা আছে পতাকার আদলে গোল ব্যান্ড। এক হাতে চকলেট, অন্য হাতে প্লাস্টিকের একটি ব্যাংক। দেখেই বোঝা গেল এই শিশুটি প্লাস্টিকের এই ব্যাংক নিয়ে কেন এদিকে এগিয়ে আসছে। তবুও দেখার অপেক্ষা সে আসলে কী করে। সঙ্গে আছেন তার মা। মায়ের সঙ্গেই সে এগিয়ে গেল টিএসসিতে নগদ অর্থ জমা নেওয়ার বুথের দিকে।

শেষ পর্যন্ত সে তার জমানো টাকার প্লাস্টিকের ব্যাংকটি বুথে জমা দিয়ে দিল। ধন্যবাদ এবং করতালির মাধ্যমে শিশুটিকে অভিবাদন জানালো বুথের সদস্যসহ উপস্থিত সবাই। ছোট্ট এই শিশুটি প্লাস্টিকের ব্যাংক সেখানে জমা দিয়ে ফিরে আসার সময় শুধু একবার পিছনে ফিরে দেখে নিলো তার প্রিয় ব্যাংকটিকে। যে প্লাস্টিকের ব্যাংকে এতদিন ধরে সে টাকা জমিয়েছিল।

ভিড় ঠেলে তার মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে আসার পর কথা হয় এই ছোট্ট এই শিশুটির সঙ্গে। তখনই প্রথম সে জানালো তার নাম আফরা। বয়স দুই বছরের একটু বেশি। মায়ের সঙ্গে সে কেরানীগঞ্জ থেকে টিএসসিতে এসেছে তার জমানো টাকার ব্যাংকটি জমা দিতে। সে জানতো না বন্যা কি। সেখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আর্তনাদ কেমন। তবে মানুষ ছোট্ট হলেও তার মায়ের কাছে সে এসব গল্প শুনেছে। মায়ের ফেসবুক টাইমলাইনে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ, ছোট শিশুদের অসহায়ত্বের ছবি দেখেছে।

তার মা তাকে গল্প শুনিয়েছে, সবাই যে যার মতো করে এসব মানুষের জন্য টাকা, ত্রাণ পাঠাচ্ছে। তার মাও সেখানে টাকা দেবে। এতেই ছোট্ট দুই বছরের শিশু আফরাও তার মাকে জানিয়ে দিয়েছে সেও তার প্লাস্টিকের ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে দেবে বন্যার্ত মানুষের জন্য। এছাড়া গতকাল টিভিতে সে নিজেও দেখেছে ছোট্ট ছোট্ট শিশু এখানে এসে তাদের ব্যাংকগুলো জমা দিয়ে যাচ্ছে দুর্ভোগে থাকা মানুষদের জন্য। যেই চিন্তা সেই কাজ, আজ কেরানীগঞ্জ থেকে এসে এখানে আফরা তার প্লাস্টিকের ব্যাংক জমা দিয়ে গেল।

কথা হয় আফরার মায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, তার দুই বছরের এই মেয়েটি এখানে তার ব্যাংকের টাকা জমা দিতে রীতিমতো জেদ করে বসেছে। সে আসবে, আর তার দাদা, দাদি, নানা, নানি, চাচা, ফুপুসহ যত আত্মীয় স্বজন তাকে টাকা দেন, সেই টাকাই সে এই প্লাস্টিকের ব্যাংকে জমা করে। তার প্রিয় এই ব্যাংকটিও আজ সে এখানে জমা দিলো। সে খুশি আমরাও খুশি। আমিও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সামান্য কিছু অনুদান দিলাম। পরিবার যেভাবে একটি শিশুকে শেখাবে, সে সেভাবেই শিখবে। দাঁড়াবে মানুষের পাশে। এটাই মা হিসেবে আমার প্রত্যাশা।

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘গণত্রাণ’ কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শুধু বুথ থেকেই সর্বমোট ২ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭০ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগের দিন শুক্রবার যার পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আজও সকাল থেকে এখানে সবাই অনুদান হিসেবে টাকা জমা দিচ্ছে। জমা নেওয়া শেষে আজও মধ্যরাতে আজকের জমা হওয়া টাকার পরিমাণ জানানো হবে।

ফান্ড কালেকশনের সঙ্গে যুক্ত থাকা সহ-সমন্বয়ক মো. জহির রায়হান শনিবার রাতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সর্বশেষ রাত ১১টা পর্যন্ত টিএসসিতে নগদ অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭০ টাকা।

গতকাল গণত্রাণ কর্মসূচির তৃতীয় দিন সকাল থেকেই টিএসসিতে ত্রাণ দিতে মানুষের ঢল নামে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্রাক, সিএনজি, ভ্যান ও রিকশায় বন্যার্তদের জন্য খাবার, জামা-কাপড়, ঔষধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসছেন। বিকেলে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবকদের। সন্ধ্যা নাগাদ তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এসময় ট্রাক ভরে ভরে ত্রাণ সামগ্রী আসতে থাকে।

দিনভর বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী আসায় টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া ও গেমস রুম বারান্দা ও অন্যান্য জায়গা ত্রাণসামগ্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়। টিএসসির বারান্দাতে ত্রাণ সামগ্রীর বিশাল স্তূপ লক্ষ্য করা যায়। বিপুল পরিমাণ জরুরি ঔষধ টিএসসির দ্বিতীয় তলায় রাখা হয়। ফলে টিএসসিতে নতুন করে ত্রাণ রাখার জায়গা শেষ হয়ে যায়। পরে রাত ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠ সংলগ্ন জিমনেশিয়ামে ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ ও রাখা শুরু হয়।

এএসএস/পিএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *