‘স্বামী দিনমজুর। বাড়িতে এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে আমি ছিলাম। বৃষ্টি পানিতে চারপাশ তলিয়ে যায়। ঘরের ভেতর হাঁটু পানি হয়। সন্ধ্যার আগে মনে হয় বাড়িতে থাকলে পানির নিচে পড়ে মারা যামু। তাই প্রাণে বাঁচতে বাড়ি-ঘর রাখি ছেলে-মেয়ে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছি। আল্লাহ আল্লাহ করতেসি যেন পানিটা নামি যায়।’
‘স্বামী দিনমজুর। বাড়িতে এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে আমি ছিলাম। বৃষ্টি পানিতে চারপাশ তলিয়ে যায়। ঘরের ভেতর হাঁটু পানি হয়। সন্ধ্যার আগে মনে হয় বাড়িতে থাকলে পানির নিচে পড়ে মারা যামু। তাই প্রাণে বাঁচতে বাড়ি-ঘর রাখি ছেলে-মেয়ে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছি। আল্লাহ আল্লাহ করতেসি যেন পানিটা নামি যায়।’
বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে এভাবেই নিজের কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ ইউনিয়ন ৭ নং ওয়ার্ডের উত্তম পুর লামছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া রোকেয়া বেগম।
কেবল রোকেয়া বেগম নয়। এই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই মিলেছে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের। তোফায়েল আহমেদ নামের এক বৃদ্ধ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দিনভর বৃষ্টি আর বৃষ্টি। কোনো থামাথামি নাই। পানি বাড়তেই ছিল, কোনো কমার নাম গন্ধ নাই। আল্লাহ জানে বাড়িঘর রাতে কি হয়। যদি আল্লাহ বৃষ্টি না কমায় তাহলে আমগো সব শেষ হই যাইবো। ঘরে খাবারদাবার সব আছে। কিন্তু আনতে পারি নাই। ইউএনও স্যার খাবার দিছে তাই খাইসি। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতাসি।’
জানা যায়, টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ আট উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে। ফেনী জেলার পানি নোয়াখালী সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও পৌর এলাকায় ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করায় জলাবদ্ধতার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
কবিরহাট উপজলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সাথে সকল আশ্রয়কেন্দ্রের যোগাযোগ রয়েছে। ছাত্র জনতা পাহারা দিচ্ছে। কেউ কেউ খাবারও বিতরণ করছে। আমাদের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা অবৈধ বাধ কেটে দিয়েছি। বৃষ্টির পরিমাণ কম হলে আস্তেধীরে পানি নেমে যাবে বলে আমরা মনে করছি।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেনীর মহুরী নদীর পানি নোয়াখালী ঢুকতেছ। মুহুরী নদীর পানি বেশি প্লাবিত হওয়াতে নোয়াখালীও প্লাবিত হচ্ছে। জেলার কয়েকটি নিম্ন অঞ্চলে অস্বাভাবিক জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় ওইসব এলাকার লোকজন পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয় ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।
এদিকে অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ওঠায় ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় বুধবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে নোয়াখালী ও ফেনী। নোয়াখালীতে প্রায় চার লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে আরো এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়তে পারে।
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জিএম মো. জাকির হোসেন বলেন, আমাদের এই সমিতিতে ৭ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। আমাদের কয়েকটি সাবস্টেশনসহ বিদ্যুৎ বিতরণকারী বেশির ভাগ এলাকায় ইতিমধ্যে বন্যার পানি ওঠে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকি এড়াতে ৫০ শতাংশের বেশি (প্রায় চার লাখ) গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। সন্ধ্যায় আমাদের অফিসের ভিতরেও পানি প্রবেশ করেছে।
হাসিব আল আমিন/পিএইচ