পূর্বাভাস না পাওয়ায় বিপর্যস্ত কুমিল্লার বন্যার্তরা

পূর্বাভাস না পাওয়ায় বিপর্যস্ত কুমিল্লার বন্যার্তরা

কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুমিল্লার চার নদীর পানি। ফলে জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। দিন যত বাড়ছে, জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।

কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুমিল্লার চার নদীর পানি। ফলে জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। দিন যত বাড়ছে, জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) জেলার গোমতী, সালদা, ডাকাতিয়া এবং কাঁকড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার ১ মিটারের বেশি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বানের পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। 

আগে থেকে বন্যার কোনো আভাস না পাওয়ায় কুমিল্লার বন্যার্তরা অনেক বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এত খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে এমন কোনো ধারণাই ছিল না তাদের। ফলে তাদের গবাদিপশু, আসবাবপত্রসহ অনেক জরুরি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তলিয়ে গেছে পানিতে।

জেলার গোমতীর তীরবর্তী আদর্শ সদর উপজেলা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও তিতাস উপজেলায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এছাড়া ডাকাতিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও লালমাই উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে কাঁকড়ি নদীর তীরে অবস্থিত চৌদ্দগ্রাম উপজেলায়। এ উপজেলার পৌর সদরসহ প্রতিটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে হেক্টর হেক্টর ফসলি জমি। অনেকে পানিতে আটকা পড়ে আছেন। বুধবার (২১ আগস্ট) রাত থেকেই বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ।

কুমিল্লার কোনো অঞ্চলই দুর্গম না হলেও বেশ কিছু এলাকায় মানুষ পানিতে আটকে থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পর্যাপ্ত উদ্ধারকর্মী না থাকা এবং বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকায় অনেকে আটকে থাকার খবর বা সাহায্য চাইতে পারছেন না। ফলে দুর্দশার সর্বোচ্চ পর্যায়ে সময় পার করছেন জেলার ৫ লাখের বেশি মানুষ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার গোমতী নদীর বেড়িবাঁধে গিয়ে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধ ছুঁইছুঁই করছে পানি। বাঁধের ২-৩ ফুট নিচে থাকলেও ঘণ্টায় ১০-১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর তীরবর্তী ৬-৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকে বাঁধের বিপরীত পাশে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। কোনোরকম একবার বাঁধ ভেঙে গেলে কুমিল্লা শহর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শহরের মানুষ।

বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ সেসব পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও বাঁশ দিয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপদে আশ্রয়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।

সেখানের বাসিন্দারা বলেন, বাঁধের পাশে আমাদের ঘর-বাড়ি। ঘরে সব জিনিসপত্র অনিরাপদ রেখে এভাবে চলে গেলে কীভাবে হবে? আমরা যদি সবাই চেষ্টা করে বাঁধ সুরক্ষিত রাখতে পারি, তাহলে আমাদের ঘর-বাড়ি রক্ষা পাবে। শহর রক্ষা পাবে।

রেজিনা বেগম নামে এক বানভাসি বলেন, আমাদের আগে একটু সতর্ক করলে আমরা ঘরের সবকিছু নিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে পারতাম।

সুজন দাস নামে বানভাসি বলেন, রাতে শুয়েছিলাম এমন সময় হঠাৎ পানি এসে ঘর ডুবিয়ে দিয়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনোরকম প্রাণে বাঁচলেও গরু-ছাগল, হাঁসমুরগিসহ ঘরের হাঁড়িপাতিল ভেসে গেছে।

স্বপ্না বেগম নামে এক বানভাসি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, চারজনের একটা সংসার আমার। পানিতে সব তলিয়ে গেছে। আমরা এখন রাস্তায় বসেছি। সরকারি কোনো ত্রাণ কিংবা অন্য কিছুও পাইনি। মানুষ যা দিচ্ছে তা খেয়ে জীবন কাটাচ্ছি।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান ওয়ালিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুমিল্লার নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার অনেকটা ওপরে আছে। এর মাত্রা আরও বাড়তে পারে। বেড়িবাঁধ এলাকার মানুষদের বার বার আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।

কুমিল্লা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান বলেন, দুপুরের পর থেকে কুমিল্লায় বৃষ্টি নেই। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ দুর্বল হয়েছিল আগেই। তবে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তায় বৃষ্টি হয়েছিল বুধবার ও বৃহস্পতিবার। আশা করছি পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে।

আরিফ আজগর/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *