শারদীয় দূর্গাপূজায় মিলেছে চারদিনের ছুটি। এ ছুটি উপভোগ করতে ভ্রমণে বেড়িয়েছেন মানুষ। দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটের মতো উত্তরের পর্যটন এলাকা পঞ্চগড়েও পর্যটকের উপচে পড়া ঢল নেমেছে। বিনোদন স্পট, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে পর্যটকের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। এতে করে ব্যস্ত সময় পার করছে পর্যটননির্ভর বিভিন্ন যানবাহন, আবাসিক, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। পর্যটকদের জন্য রয়েছে জোরদার নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও প্রশাসন।
শারদীয় দূর্গাপূজায় মিলেছে চারদিনের ছুটি। এ ছুটি উপভোগ করতে ভ্রমণে বেড়িয়েছেন মানুষ। দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটের মতো উত্তরের পর্যটন এলাকা পঞ্চগড়েও পর্যটকের উপচে পড়া ঢল নেমেছে। বিনোদন স্পট, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে পর্যটকের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। এতে করে ব্যস্ত সময় পার করছে পর্যটননির্ভর বিভিন্ন যানবাহন, আবাসিক, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। পর্যটকদের জন্য রয়েছে জোরদার নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও প্রশাসন।
শনিবার (১২ অক্টোবর) সকাল থেকে জেলার প্রধান পর্যটন স্পট তেঁতুলিয়ায় ঘুরে দেখা যায়, পূজার ছুটি উপভোগ করতে ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার, বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট ও রওশনপুর শিশুপার্কসহ বিনোদন জায়গাগুলোতে নানা বয়সী পর্যটকের ঢল নেমেছে। পর্যটকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশের সীমান্তবর্তী হিমালয়কন্যা খ্যাত উত্তরের পর্যটন এলাকাটিতে। পর্যটকরা দল বেধে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব সহজেই আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।
তবে পূজার ছুটি উপভোগ্য হলেও হতাশ করেছে উত্তরের আকাশে মেঘে ঢাকা হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা। সময় অনুযায়ী অক্টোবরের শরতের সাদামেঘ হাওয়ায় সরে গিয়ে দেখা দেওয়ার কথা থাকলেও নিরাশ হতে হচ্ছে। উত্তরের আকাশে পরিষ্কার নীল আকাশে মায়াজাল ছড়িয়ে দেয় এই মোহনীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সেই মায়াজালের সৌন্দর্যের রূপ দেখতে ছুটে আসেন প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক। সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা মেঘের আড়ালে ঢাকা রয়েছে পূজার সময়ে। এতে হতাশ কাঞ্চনজঙ্ঘার আভা দেখতে আসা পর্যটকরা।
কাঞ্চনজঙ্ঘা হতাশ করলেও হতাশ করেনি নদী তীরের কাশফুল, সবুজ চা বাগান, ইংরেজ আমলের ডাকবাংলোর জেলা পরিষদ স্থাপনা, পিকনিক কর্নার, চারদেশীয় স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, বাংলাদেশ-ভারতের জিরোপয়েন্ট, সীমান্ত প্রবাহিত মহানন্দা নদী, নদীর সূর্যাস্ত, কাজী অ্যান্ড কাজী টি স্টেটের আনন্দধারা ও শিশুপার্ক, আনন্দগ্রাম, একাত্তরের মুক্তাঞ্চল, ভেতরগড় প্রত্নতত্ত্ব দুর্গনগরী, পনেরো বছরের প্রাচীন মহারাজা দিঘী, দক্ষিণ এশিয়ার রক্স মিউজিয়াম, হিমালয় পার্ক, ভীমের জঙ্গল, বাংলার শ্রেষ্ঠ সুলতান হোসেন শাহের হোসেন দিঘীর গড়, মোগল সেনাপতি মীর জুমলার মীরগড়, ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির রাজনগড়, ডিসি পার্ক, বিজিবি ক্যান্টিন, মীর্জাপুর শাহী মসজিদ, বার আউলিয়া মাজার, ইমাম বাড়া, বদ্বেশরী মন্দিরের মতো নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রাচীন স্থাপনার নিদর্শন। এসব পর্যটন স্পটে পর্যটকের সমাগম লক্ষ্য করা গেছে।
পর্যটকরা হাতের মুঠোয় স্মার্টফোনে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে নানা ভঙ্গিমায় ছবি তুলে সে ছবি ফেসবুকসহ নানান সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেকে নাচগানে মুখরিত করে তুলেছেন বিনোদন কেন্দ্রটি। কেউ ছবি তুলছেন লাভ পয়েন্টে গিয়ে তো কেউ কেউ সমতলের চা বাগান ঘুরতে যাচ্ছেন।
ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারে ঘুরতে আসা মিথিলা, সৌরভ, হিমেল ও সবুজসহ কয়েকজন পর্যটক জানান, পূজার ছুটিতে আমরা ঘুরে বেড়ানোর জন্য তেঁতুলিয়াকে বেছে নিয়েছি। অনেক ঘুরেছি। তবে এ সময়ে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দেওয়ার কথা। কিন্তু মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ থাকায় দেখা দিল না কাঞ্চনজঙ্ঘা। এখানকার শান্ত প্রকৃতি, পরিবেশ, মানুষের সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার ও দর্শনীয় স্থান ও ইতিহাস-ঐতিহ্য ও স্থানীয় সংস্কৃতি আমাদের মুগ্ধ করেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে।
বাংলা হোটেলের স্বত্বাধিকারী আজিজুল হক জানান, গত দুইদিন থেকে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছে তেঁতুলিয়ায়। পর্যটকদের ঘিরে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। হোটেলে প্রচুর ভিড় সামলাতে হচ্ছে। পর্যটক আসায় ব্যবসা হচ্ছে।
হোটেলের সীমান্তের পাড়ের ব্যবস্থাপক আতিকুজ্জামান শাকিল ও কাজী ব্রাদার্স এর রবিউল ইসলামসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলের পরিচালনকারী জানান, সেপ্টেম্বর থেকে এ এলাকায় পর্যটকের সমাগম ঘটে থাকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ার কারণে। চলতি বছর থেকেই পর্যটক ছিল না বললেই চলে। কিন্তু গত দুই দিন ধরে পূজার ছুটি ঘিরে পর্যটকের পরিমাণ বেড়েছে। এখানকার হোটেলগুলো বুক হয়ে গেছে। এরপরেও অনেকে হোটেলে থাকার জন্য যোগাযোগ করছেন। আমরা চেষ্টা করছি প্রত্যাশিত সেবা দেওয়ার।
তেঁতুলিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের এক পরিচালক আহসান হাবিব জানান, শরৎ, হেমন্ত ও শীত ঋতু ঘিরেই এখানে পর্যটনের সময়। এ সময়টাতে তেঁতুলিয়ার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা। তবে বর্তমানে কাঞ্চনজঙ্ঘা সেভাবে দেখা না গেলেও পূজার ছুটি কাটাতে পর্যটকের সমাগম ঘটেছে আমাদের তেঁতুলিয়ায়। পর্যটক সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরাও চেষ্টা করছি সেবা দেওয়ার।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পঞ্চগড় জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মতিন বলেন, দেশের অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পর্যটন এলাকা পঞ্চগড়। এ জেলার মূল আকর্ষণই হচ্ছে ত্রি-সীমান্ত বেষ্টিত তেঁতুলিয়া। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকেই এখানকার পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড় দেখা। এর মধ্যে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর শারদীয় দূর্গাপূজার টানা চারদিনের ছুটি থাকায় পর্যটকের সমাগম বেড়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে সর্বদাই ট্যুরিস্ট ও মডেল থানা পুলিশসহ প্রশাসন তৎপর রয়েছেন। পর্যটকরা এখানে এসে নির্বিঘ্নে দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়াবেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী জানান, প্রতি বছর শরৎ-হেমন্ত ঋতুতে দেশের একমাত্র উত্তরের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ উপভোগ করতে প্রচুর পরিমাণে পর্যটকরা ছুটে আসেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও থাকার ব্যবস্থা হিসেবে রেস্ট হাউজ প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি পর্যটক সেবা প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে।
এসকে দোয়েল/পিএইচ