পুরোমাত্রার যুদ্ধের পথে লেবানন-ইসরায়েল, নেতানিয়াহুর লক্ষ্য কী?

পুরোমাত্রার যুদ্ধের পথে লেবানন-ইসরায়েল, নেতানিয়াহুর লক্ষ্য কী?

ইসরায়েলের দাবি, সীমান্তে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হিজবুল্লাহর ওপর হামলার প্রয়োজন রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত করছেন তিনটি কারণের দিকে। এক বছর আগে লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলের সীমান্ত এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু করলে প্রায় ৬০ হাজার ইসরায়েলিকে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়।

ইসরায়েলের দাবি, সীমান্তে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হিজবুল্লাহর ওপর হামলার প্রয়োজন রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত করছেন তিনটি কারণের দিকে। এক বছর আগে লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলের সীমান্ত এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু করলে প্রায় ৬০ হাজার ইসরায়েলিকে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিজবুল্লাহর সশস্ত্র শাখাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। হিজবুল্লাহর দাবি, গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সমর্থনে তারা রকেট হামলা চালাচ্ছে।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে অন্তত ৪১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইসরায়েলের বিমান হামলা, যোগাযোগ ডিভাইসের বিস্ফোরণে লেবাননজুড়ে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল পরিস্থিতিকে ‘প্রায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক সানাম ভাকিলের মতে, বর্তমান সামরিক অভিযান ও সংঘাতের বিপজ্জনক মোড় প্রধানত ‘‘ইসরায়েলের উত্তরে বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিজের এলাকায় ফেরত চাওয়ার ন্যায্যতা বা আবরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।’’

তার মতে, লেবাননে ইসরায়েলের বর্তমান হামলার পেছনে আরও কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রথমত, ইসরায়েল তার সীমান্তে গাজা ও হিজবুল্লাহ ফ্রন্টকে আলাদা করার চেষ্টা করছে। ভাকিল মনে করেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি অর্জন করতে পারেনি এবং গাজার কারণে হিজবুল্লাহর কাছ থেকেও শান্তি চুক্তি আদায় করে নিতে পারেনি।

অন্যদিকে, ইরান এবং ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ, হামাস এবং ইয়েমেন-ভিত্তিক হুথিদের মতো একাধিক সশস্ত্র সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ তাদের বাহিনীগুলোকে একত্রিত করে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

ভাকিল বলেন, দ্বিতীয়ত, লেবাননের হিজবুল্লাহর কারণে চিরস্থায়ী নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে ইসরায়েল। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি মাসব্যাপী যুদ্ধ জাতিসংঘের ১৭০১ রেজল্যুশনের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে চলা প্রথম যুদ্ধের পর এটিকে দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধ বলা হয়।

জাতিসংঘের শর্তগুলো ছিল তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, দক্ষিণ লেবাননে লেবানিজ সৈন্য ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন, একই এলাকা থেকে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং হিজবুল্লাহর প্রত্যাহার, সেইসাথে হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ।

তবে শর্ত অনুযায়ী, হিজবুল্লাহ লেবাননের লিতানি নদী পর্যন্ত পিছু হটেনি। সীমান্ত থেকে নদীটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। শিয়া মিলিশিয়াটির সদস্যরা অস্ত্রও ত্যাগ করেনি। বরং পরের বছরগুলোতে ইরানের সমর্থনে হিজবুল্লাহর সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত যোদ্ধার সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।

এর ফলে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ভবিষ্যতে ইসরায়েলি নাগরিকদের তাদের ভূখণ্ড থেকেই অপহরণ করতে পারে, এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। ভাকিলের মতে, ইসরায়েল আরো একবার হিজবুল্লাহকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ মেনে নিতে বাধ্য করতে চাইছে।

তৃতীয় কারণ হিসাবে ভাকিল মনে করেন, লেবাননে এই অপারেশনের ফলে, গাজার দিক থেকে দৃষ্টি সরেছে। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছর পরও হামাসের বন্দিদশায় থাকা ৯০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি জিম্মি রয়ে গেছেন। কিন্তু তারপরেও লেবাননের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মনোযোগ গাজা থেকে সরে গেছে বলে মনে করেন তিনি।

ভাকিলের মতে, গাজা থেকে বের হয়ে আসার কোনও কৌশল ইসরায়েলের নেই এবং তারা কী পরিকল্পনা করছে সেটাও স্পষ্ট করেনি। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি প্রক্রিয়ার কথাও তারা বলছে না।

তার দৃষ্টিতে, লেবাননের যুদ্ধ গাজায় কৌশলের অভাব থেকে দৃষ্টি সরানোর একটি প্রচেষ্টা।

ইসরায়েলি জনগণ ক্রমশ অধৈর্য্য হয়ে উঠছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে।

বৈরুত-ভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পরামর্শদাতা লরেঞ্জো ট্রম্বেটা বলেছেন, ইসরায়েলের দৃষ্টিকোণ থেকে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ খুব বেশি এবং প্রতি সপ্তাহে তা তীব্রতর হচ্ছে।

তার ধারণা, ইসরায়েলি সরকারের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে। ট্রম্বেটা মনে করেন, এটা অর্জনের একটা উপায় হতে পারে উত্তর ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, তবে ইসরায়েল তা অর্জনে সক্ষম হবে কি না সেটা বলা কঠিন। ট্রম্বেটার প্রশ্ন, ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হবে কি না বা কখন হবে, কে জানে! হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলে ইরান কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে?

এসএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *