‘পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা’ নারীদের মধ্যেও আছে

‘পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা’ নারীদের মধ্যেও আছে

‘পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা’ নারীদের মধ্যেও আছে। এ জন্য তৃণমূলে পরিবারের সদস্যদের মানসিকতা পরিবর্তনে সচেতনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

‘পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা’ নারীদের মধ্যেও আছে। এ জন্য তৃণমূলে পরিবারের সদস্যদের মানসিকতা পরিবর্তনে সচেতনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন মেহেরুন্নেছা পরশমণি, রওনক জাহান, ওয়াসিমা ফারজানা, নারীবাদী সংগঠক তৃষিয়া নাশতারান, নিহা, আফসা এবং মণি দীপা চক্রবর্তী, সায়মা আলী অদিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তানজিনা হাফসা, কলেজ শিক্ষার্থী তানিয়া, ওয়াইডব্লিউ সিএ এর শিক্ষার্থী স্তুতি, দেবলীনা ভট্টাচার্য, ফিল্মমেকার সাদিয়া আফরীন অরণী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সিউতি সবুর এবং বহ্নিশিখার তাসাফ্ফি হোসেন।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, পরিবার থেকে ছেলে-মেয়েদের জেন্ডার ভূমিকা নির্ধারণ করে দেওয়ার ফলে অনেক নারী গৎবাঁধা ভূমিকার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত হওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। পরিবার থেকে মেয়েদের চলার ফেরায় যে গণ্ডি বেঁধে দেওয়া হয় তা পরিবর্তনে স্কুল কলেজের কিশোরী মেয়েদের মধ্যে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে, রাজনৈতিক চর্চা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পাঠ্যসূচিতে মেয়েদের রাজনৈতিক চর্চা বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তৃণমূলে কাজ করতে হবে। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য দূর করতে সকল ধরনের সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক কারণে আসা বাধা দূর করাসহ, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার উপর গুরুত্ব দিতে হবে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হলে নারীর অধিকার আদায়ের পথ সুগম হবে।

সভায় ড. সিউতি সবুর বলেন, গত ৫ বছরে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি অনেক বড় ইস্যুতে মহিলা পরিষদ যেমন আন্দোলন করেছে, তেমন ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও আন্দোলন করেছে। পাশাপাশি তরুণীদের নিয়ে নেটওয়ার্ক গঠনের কাজ করছে। তবে আগামীতে নারী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে সম্মিলিতভাবে একটা বড় ধরনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা আবশ্যক।

নারীবাদী সংগঠক তৃষিয়া নাশতারান বলেন, নারী আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণমূলক হওয়ার পাশাপাশি গঠনমূলক, সুচিন্তিত মতামতের আলোকে হওয়া উচিত। মৌলবাদী আক্রমণের মূল লক্ষ্য থাকে নারীকে অদৃশ্য করা, এক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি আরো দৃশ্যমান হওয়া আবশ্যক। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নারী আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।

মেহেরুন্নেছা পরশমণি বলেন, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মূলভিত্তি নারী-পুরুষের সমতা। গ্রামের নারীকে এখনো পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যেতে দেওয়া হয় না, এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে তরুণীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পরিবারের পুরুষদের নারীর সমান ও অধিকারের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। 

রওনক জাহান বলেন, নারীকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও সচেতন করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিকতা কেবল পুরুষের মধ্যে নয় এমন মানসিকতা নারীদের মধ্যেও রয়েছে। এ জন্য তৃণমূলে পরিবারের সদস্যদের মানসিকতা পরিবর্তনে  সচেতনমূলক কর্মসূচি করার জন্য মহিলা পরিষদকে আহ্বান জানান তিনি।

ওয়াসিমা ফারজানা বলেন, সিদ্ধান্তগ্রহণে নারী এখনো পিছিয়ে আছে, তাদের মধ্যে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আছে। এ বিষয়ে নারীদের সচেতন করে তুলতে পারলে তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে আগ্রহী হবে।

উপস্থিত- অন্যান্য বক্তারা বলেন, ঢাকার অনেক সচ্ছল পরিবারে নারীরা কাজ করার জন্য পরিবারের বাইরে যেতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে মেনে নিচ্ছেন। এর বিপরীতে মফস্বলের নারীরা পরিবারের সঙ্গে সমঝোতায় একা বাইরে লেখাপড়া করেন, বিয়ের পরেও চাকরি করছেন। অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, নারীদের নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার বেশি হয় নারীরা, এতে নারীদের মনোবল ভেঙে যায়- এ বিষয়ে জোরালোভাবে কাজ করতে হবে। নারীদের সবার মধ্যেই নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা আছে কিন্তু তাদের মধ্যে থাকা হীনম্মন্যতার জন্য তারা পিছিয়ে যায়, নেতৃত্বে গ্যাপ তৈরি হয়। 

এজন্য তাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে, নিজের মধ্যে থাকা ভিন্ন গুণাবলীর বিকাশের জন্য কাজ করতে হবে, প্রতিটি নারীকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবিলার জন্য দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে।

মহিলা পরিষদ সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী আন্দোলন সরলরৈখিক নয়, আন্দোলনকে অগ্রগামী করতে কাজের অনেক সম্ভাবনা আছে। আজকের  আলোচনার মাধ্যমে আসা বিষয়সমূহ যেমন : মহিলা পরিষদের সঙ্গে তরুণীদের যোগসূত্র তৈরি করে একটা বড় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা, নারী নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্পেস তৈরি করতে হবে, সাইবার বুলিং প্রতিরোধ, নারীর অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে আগামীতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী আন্দোলন বহমান, বহুমাত্রিক ও বৈচিত্র্যময়। আন্ত:প্রজন্মগত যে বৈচিত্র্য আছে নারী আন্দোলনকে তা এখন ধারণ করতে হবে। সমসাময়িক আন্দোলন, চলমান আন্দোলন, আগামীর আন্দোলন- এই তিন ধরনের আন্দোলনকে একত্র করে কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, নারীকে চিন্তার দিক থেকে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অগ্রগামী হতে হবে, তাকে নিজের শর্তে বাঁচতে হবে।

প্রেক্ষাপট উপস্থাপনে সীমা মোসলেম বলেন, নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। কাজের ক্ষেত্রে  নারী সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করে তোলা, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সহ সকল ক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন, সমতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা, নারীর প্রতি প্রচলিত অধ:স্তন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আন্দোলন, অ্যাডভোকেসি-লবি, গঠনমূলক আন্দোলন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ নির্মূল করতে সেবামূলক কাজ, আন্দোলনমুখী কার্যক্রম এবং অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন আইন সংস্কারের আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

জেইউ/এমএসএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *