পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে অভিনব উপায়ে প্রতারণা

পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে অভিনব উপায়ে প্রতারণা

যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া কথিত ব্যক্তির বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে অভিনব উপায়ে প্রতারণার ঘটনায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের আরও এক সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির নিউমার্কেট থানা পুলিশ।

যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া কথিত ব্যক্তির বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে অভিনব উপায়ে প্রতারণার ঘটনায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের আরও এক সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির নিউমার্কেট থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তের নাম পান্না বেগম (৪১)।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর ২০২৪) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আদায়কৃত নগদ ৬ লাখ ১ হাজার ২৫০টাকা, বিভিন্ন  ব্যাংকের ৩৬ টি অ্যাকাউন্টের চেকের পাতা, ৩টি ভিসা কার্ড, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল ফোন, ৮টি সিমকার্ড, পান্না ইন্টারন্যাশনাল নামক ভুয়া এজেন্সির ৮ টি  ভিজিটিং কার্ড, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১টি রাবার স্ট্যাম্প ও ১টি সিল প্যাড এবং ১টি অফিসিয়াল হাত ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও জানান, পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ভিকটিম মো.নুরুজ্জামান বাদী হয়ে গত ১২ অক্টোবর নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা রুজু করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে অ্যান্না হ্যারিসন নামে ফেসবুক আইডির সঙ্গে বাদী মো. নুরুজ্জামানের যোগাযোগ হয়। সে বাদীকে জানায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মি.মোহাম্মদ বেলটন নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত থাকা অবস্থায় মারা যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের এলাইনস ব্যাংকে বেলটনের পাঁচ মিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। সে বাদীকে মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার জন্য বলে এবং এলাইনস ব্যাংক ম্যানেজারের আরেকটি হোয়াটস অ্যাপ নম্বর দেয়। অ্যান্না হ্যারিসন তার বানানো ম্যাসেজ সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে দিতে বলে। তারপর বাদীকে সে তার কথিত আইন উপদেষ্টার নম্বর দিলে বাদী তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। কথিত আইন উপদেষ্টা বিমার টাকা পাওয়ার জন্য বাদীকে ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার প্রেরণ করতে বলেন। পরবর্তী সময়ে অ্যান্না হ্যারিসর ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধের একটি পেমেন্ট স্লিপ বাদীকে প্রদান করে।

পরবর্তী সময়ে কথিত ব্যাংক ম্যানেজার বিমার ৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য একটি শিপিং কোম্পানির নিকট ২টি ল্যাগেজ প্রদান করেছেন বলে বাদীকে জানান এবং প্রমাণ স্বরূপ একটি ভিডিও দেখান। ব্যাংক ম্যানেজার বিমা খরচ এবং ডেলিভারি খরচ বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা প্রদান করার কথা বললে বাদী তার কথা মতো ডাচ বাংলা ব্যাংকের উত্তরা শাখার একটি অ্যাকাউন্টে তা প্রদান করে।

এরপর গত ৩ অক্টোবর সকাল আটটায় একটি নম্বর থেকে অজ্ঞাতনামা একজন ফোন করে নিজেকে ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেয় এবং বাদীর দুটি ল্যাগেজ কাস্টমসে আটকে আছে বলে জানায়। লাগেজ দুটি ছাড়াতে ৪ লক্ষ ৭ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে বাদী তাদের কথা মতো ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে তা প্রদান করে। এরপর বাদী কথিত কাস্টমস কর্মকর্তার কথা মতো আয়কর ও ট্যাক্স বাবদ আরো ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ইসলামী ব্যাংকের আরেকটি অ্যাকাউন্টে প্রদান করে। এসব টাকা প্রদান করার পরও তারা বাদীর কাছে আরও ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চায়। এভাবে বার বার টাকা চাওয়ায় বাদীর সন্দেহ হলে তিনি বিমানবন্দর কাস্টমসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। এভাবে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি বাদীর কাছ থেকে সবমিলিয়ে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়।

থানা সূত্র আরও জানায়, তদন্তাধীন এই মামলায় তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পান্না বেগমকে গতকাল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার ভুলতা বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার পান্না বেগম সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য হিসেবে মূলত অ্যান্না হ্যারিসর নামে ফেক ফেসবুক আইডিটি পরিচালনা করত এবং নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমদের ফোন করে তাদের কাছে টাকা চাইত। এভাবে প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত একই কৌশলে অসংখ্য মানুষকে ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে।

এমএসি/এসকেডি 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *