প্রায় চারমাস সাগরে মাছ শিকার করেছেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার এমভি আহাদ-২ নামের ট্রলারের ২১ জন জেলে। উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করে এই সময়ে পেয়েছেন ৪০ লাখ টাকার মাছ। খরচ শেষে জনপ্রতি পেয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। ২২ দিন মাছ শিকার বন্ধ তাই বাড়ি ফিরবেন জেলেরা। তবে কিছুটা ভিন্নতায়, পুরো ট্রলার সাজিয়ে এক রকমের পোষাক পরে তারা ফিরলেন বাড়ি।
প্রায় চারমাস সাগরে মাছ শিকার করেছেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার এমভি আহাদ-২ নামের ট্রলারের ২১ জন জেলে। উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করে এই সময়ে পেয়েছেন ৪০ লাখ টাকার মাছ। খরচ শেষে জনপ্রতি পেয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। ২২ দিন মাছ শিকার বন্ধ তাই বাড়ি ফিরবেন জেলেরা। তবে কিছুটা ভিন্নতায়, পুরো ট্রলার সাজিয়ে এক রকমের পোষাক পরে তারা ফিরলেন বাড়ি।
জানা গেছে, ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে মৎস্য আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান প্রযোজ্য হবে। তাই এই সময়টা পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে কাটাতে বাড়ি ফিরলেন জেলেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এমভি আহাদ-২ নামের একটি ট্রলার সজ্জিত হয়ে চেয়ারম্যান ঘাটে মাছ নিয়ে ফিরছেন। সকল জেলে পরিধান করেছেন এক রকমের পোশাক। তাদের দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়।
জেলে মো. রাফুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সবার বাড়ি হাতিয়া উপজেলায়। প্রায় চার মাস আমরা সাগরে মাছ ধরেছি। আমরা সাগরের ভেতর কীভাবে ছিলাম তা আল্লাহ আর আমরা ছাড়া কেউ জানেন না। ঘুর্ণিঝড়ের সময় ধরেই নিয়েছিলাম, আমরা কেউই আর বাঁচতে পারবো না। কেউ আমাদের উদ্ধার করবে সেই সুযোগও ছিল না। এখন বাড়ি ফিরবো তাই আমাদের ভেতর আনন্দ কাজ করছে। সেইজন্য সবাই খুশিতে ট্রলারকে সাজিয়েছি এবং নিজেরা এক রকমের কাপড় পড়েছি।
মো. মামুন নামের এক জেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাছ ধরতে ভালো লাগে। চার মাস মাছ ধরে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি। নতুন একটা জায়গা কিনেছি। নদী ভাঙনে বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। তাই নতুন একটা জায়গা কিনতে হলো। সরকার যদি হাতিয়ার নদী ভাঙন রোধে কাজ করতো তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো।
ট্রলারের মাঝি শুভ চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রায় ৯ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরি। আমাদের এমভি আহাদ-২ ট্রলারটির বয়স চার বছর। আমরা ২১ জন জেলে এখানে মাছ ধরি। আমাদের রুজিরোজগার এই ট্রলার ঘিরে। শেষ দিন স্মৃতিময় করতে বাড়ি ফেরার আগে আমরা পুরো ট্রলারটি সাজিয়েছি। পাশাপাশি আমরা সবাই এক রকমের পোষাক পরিধান করেছি। আমাদের মালিক আরিফ মাঝিকেও পাঞ্জাবি উপহার দিয়েছি। পুরোটা খরচ আমি বহন করেছি।
ট্রলারের মালিক মো. আরিফ মাঝি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ট্রলারের মালিক হলেও আমিও মাঝি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে জেলে পেশায় জড়িত। আমরা ২১ জনের একটা পরিবার। সব সময় আমরা একে অন্যের পাশে থাকি। নদীতে এ বছর চার মাসে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ পেয়েছি। গত বছর প্রায় ৭০ লাখ টাকার মাছ পেয়েছিলাম। এবার খরচ গেছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। বাকি টাকা জেলেদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। ৪০ থেকে ৪৫ হাজারের মতো টাকা পাবেন। তারা সবাই খুব আনন্দিত তাই ট্রলারটি সাজিয়েছি।
চেয়ারম্যান ঘাটের আড়তদার মাহবুবুল আলম ইউসুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে একটা রেওয়াজ ছিল জেলেরা বাড়ি ফেরার পথে ট্রলার সাজিয়ে বাড়ি ফিরতেন। বর্তমানে মাছ কম তাই রেওয়াজ অনেকেই পালন করেন না। তবে এমভি আহাদ-২ সেই রেওয়াজ পালন করছেন। তা দেখার জন্য অনেক মানুষ চেয়ারম্যান ঘাটে ভিড় করেছেন। এমন সজ্জিত ট্রলার দেখতে আসলে দারুণ লাগে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরা বাড়ি ফিরছেন। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে। অভিযান এবং নজরদারি রাখবে মৎস্য বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আশাকরি নিষেধাজ্ঞা সফল হলে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়া যাবে। মাছ পেলে জেলে ও সংশ্লিষ্টরা উপকৃত হবে।
হাসিব আল আমিন/এএমকে