ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বোবা শয়তানকে বলা হয়েছে যাকে

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বোবা শয়তানকে বলা হয়েছে যাকে

রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালোভাবে তার মেহমানের উত্তম সমাদার করে। তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ উত্তম সমাদার মানে কী? তখন তিনি বললেন, তার একদিন ও এক রাত (বিশেষ মেহমানদারী)। আর (সাধারণভাবে) মেহমানদারীর সময়কাল তিন দিন। এর চাইতে বেশী দিন মেহমানদারী করা, তার জন্য সাদকা স্বরূপ। 

রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালোভাবে তার মেহমানের উত্তম সমাদার করে। তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ উত্তম সমাদার মানে কী? তখন তিনি বললেন, তার একদিন ও এক রাত (বিশেষ মেহমানদারী)। আর (সাধারণভাবে) মেহমানদারীর সময়কাল তিন দিন। এর চাইতে বেশী দিন মেহমানদারী করা, তার জন্য সাদকা স্বরূপ। 

তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা নীরব থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৩৬৪)

হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ঈমানের মূল স্তম্ভ সাতটি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাদের প্রতি বিশ্বাস, আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস, শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস, তাকদীরে বিশ্বাস এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস। 

এ হাদিসে ঈমানের মূল স্তম্ভগুলোর মধ্য থেকে দুটি অর্থাৎ আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ এ দুটির উপর যার বিশ্বাস আছে, বাকি পাঁচটিতে বিশ্বাস এমনিতেই তার ওপর অবধারিত হয়ে যায়। শরীয়তের যাবতীয় বিধানের ভিত্তি মূলত এ দুটি বিশ্বাসের উপরই। 

কারণ, যার আল্লাহর উপর বিশ্বাস আছে এবং আখেরাতের হিসাব-নিকাশেরও ভয় আছে, সে শরীয়ত মেনে চলতে সচেষ্ট থাকবে। এমন বিশ্বাস থাকলেই সে আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূলের শিক্ষার দ্বারস্থ হবে। 

হাদিসের শেষাংশে বলা হয়েছে, যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার কর্তব্য ভালো কথা বলা, নয়তো চুপ থাকা। অর্থাৎ সে কথা বললে ভালো কথা বলবে। অর্থাৎ, ভালো কথা বলতে না পারলে চুপ থাকাই শ্রেয়। কথা বলার অনুমতি আছে তখনই, যখন কথাটা ভালো হয়। ভালো কথা মানে এমন কথা, যাতে কোনও গুনাহ নেই বরং সওয়াব আছে। যেমন সৎকাজের আদেশ করা, অসৎকাজে নিষেধ করা, ভালো পরামর্শ দেওয়া ইত্যাদি। 

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

 لَا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا 

‘মানুষের বহু গোপন কথায় কোনও কল্যাণ নেই। তবে কোনও ব্যক্তি দান সদাকা বা কোনও সৎকাজের কিংবা মানুষের মধ্যে মীমাংসার আদেশ করলে, সেটা ভিন্ন কথা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এরূপ করবে, আমি তাকে মহাপ্রতিদান দেব।

যে কথায় সওয়াবও নেই গুনাহও নেই, এরকম প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথা বলারও অনুমতি আছে। কিন্তু যে কথার কোনও প্রয়োজন নেই, তা বাহ্যত বৈধ হলেও সে কথা পরিহার করা উচিত। কারণ, তাতে অন্ততপক্ষে সময় তো নষ্ট হয়। অহেতুক সময় নষ্ট করাও ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী। 

এক হাদিসে বলা হয়েছে, من حسن إسلام المرء تركه ما لا يعنيه 

‘অহেতুক সবকিছু পরিহার করা কোনও ব্যক্তির ইসলামের সুষ্ঠুতার পরিচায়ক। অর্থাৎ এর দ্বারা বোঝা যায় সে একজন ভালো মুসলিম, সে নিষ্ঠার সঙ্গে ইসলামের উপর আছে।

আর হাদিসে বলা হয়েছে, যদি ভালো কিছু বলার না থাকে তাহলে চুপ থাকবে। অর্থাৎ চুপ থাকাটা হতে হবে ইচ্ছাকৃত, অক্ষমতার কারণে নয়। যেমন এক ব্যক্তি বোবা, সে কথাই বলতে পারে না অথবা বাকশক্তি আছে বটে, কিন্তু কোনো কিছু বলার ক্ষমতা বা সাহস রাখে না, তাই বাধ্য হয়েই চুপ করে আছে, এমন চুপ থাকাটা কোনও সওওয়াবের কাজ নয়। চুপ থাকা সওয়াবের কাজ হবে তখনই, যখন তা ইচ্ছাকৃত হয়। 

যেমন চাইলে সে কোনো শক্ত ও রূঢ় কথা বলতে পারে, তা সত্ত্বেও বলছে না, এ ক্ষেত্রে চুপ থাকাটা একটি সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য হবে। 

একবার এক সাহাবি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে পৌঁছাবে। উত্তরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একের পর এক বিভিন্ন আমলের কথা বলতে থাকেন। সবশেষে বলেন, ‘যদি তাও না পার, তবে ভালো কথা ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে তোমার জিহ্বা সংযত রাখবে।

অপর এক হাদিসে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি নীরবতা অবলম্বন করল সে মুক্তি পেল।

আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে চুপ থাকাটা গুনাহের কাজও বটে। যেমন কারও সামনে কেউ অন্যায় কিছু বলছে, কিন্তু ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সে তার প্রতিবাদ করছে না, এটা অন্যায়কে সমর্থন করারই নামান্তর। এমন চুপ থাকা নিঃসন্দেহে একটি গুনাহের কাজ। তাই বলা হয়, যে ব্যক্তি সত্য বলার স্থানে চুপ করে থাকে সে এক বোবা শয়তান। (অবশ্য এটি হাদীছ নয়)।

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *