দাম বেড়েছে ইলিশের, ভাগ্য বদলায়নি জেলেদের

দাম বেড়েছে ইলিশের, ভাগ্য বদলায়নি জেলেদের

গভীর সমুদ্রে প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে ইলিশ ধরেন জেলেরা। বিপরীতে লাভের অংশ কিছুই পান না তারা। বরং দাদনের টাকা শোধ দিতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের। অন্যদিকে জেলেদের হাত থেকে ছাড়ার পর ইলিশের দাম বাড়ে তিন-চার ধাপে। এতে সাধারণ মানুষও ন্যায্য দামে ইলিশ পান না। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে দিনে দিনে ইলিশের দাম হয়েছে আকাশচুম্বী। এখন এর স্বাদ ভুলতে বসেছেন বাঙালি মধ্যবিত্তরাও।

গভীর সমুদ্রে প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে ইলিশ ধরেন জেলেরা। বিপরীতে লাভের অংশ কিছুই পান না তারা। বরং দাদনের টাকা শোধ দিতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের। অন্যদিকে জেলেদের হাত থেকে ছাড়ার পর ইলিশের দাম বাড়ে তিন-চার ধাপে। এতে সাধারণ মানুষও ন্যায্য দামে ইলিশ পান না। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে দিনে দিনে ইলিশের দাম হয়েছে আকাশচুম্বী। এখন এর স্বাদ ভুলতে বসেছেন বাঙালি মধ্যবিত্তরাও।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিন আসে ট্রলারভর্তি রুপালি ইলিশ। সেখান থেকে পাইকাররা কিনে নেন শত শত মণ মাছ। তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা দাম হাঁকান ইচ্ছামতো। এভাবে তিন-চার হাত বদল হয়ে কেজিতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়ে যায় ইলিশের দাম। 

আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, থরে থরে সাজানো ইলিশ। রুপালি ইলিশের গায়ে সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। চলছে পাইকার এবং আড়তদারদের দর কষাকষি।

প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও দাম কেন নাগালের বাইরে- এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ইলিশের দাম। এক কেজির একটি ইলিশ জেলেদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় কিনে পাইকাররা বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫৭৫ টাকায়। তারা আবার আরও ৭৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে। এভাবে অন্তত ৩ থেকে ৪ হাত ঘুরে ইলিশ পৌঁছায় ক্রেতার হাতে।

বুধবার (৯ অক্টোবর) আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৩ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের ইলিশ ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা এবং জাটকা ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।

সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে সোহেল বলেন, আমরা সারা বছর গভীর সমুদ্রে জীবন বাজি রেখে, রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়-বন্যার মধ্যে মাছ ধরি। কিন্তু এত কষ্ট করেও আমরা ন্যায্য দাম পাই না। আড়তদার, পাইকার, খুচরা বিক্রেতা এ রকম তিন-চারটি ধাপ যদি না থাকত, তাহলে সরাসরি কাস্টমারদের কাছে মাছগুলো বিক্রি করতে পারতাম। তাহলে আমরা অনেক লাভবান হতাম। কিন্তু দাদনের বেড়াজাল ছিঁড়ে সাধারণ জেলেরা কোনোদিন বের হতে পারে না।

এ বিষয়ে আলীপুর মনি ফিসের পরিচালক মিজান খান বলেন, জাল ও নৌকাসহ মাছ ধরার সকল সরঞ্জাম কেনার জন্য আমরা জেলেদের ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকাও ঋণ দিয়ে থাকি। এটাকে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় দাদন বলি। এই দাদনের বিনিময়ে আমরা তাদের কাছ থেকে মাছ অনুযায়ী কমিশন নিই। এখানে জেলেদের সহযোগিতার মাধ্যমে আমারা কমিশন নিয়ে থাকি। 

তিনি বলেন, মূলত চাহিদার তুলনায় ইলিশের সরবরাহ কম। অন্যদিকে ইলিশ বাজারে এলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কেনাবেচা হয়। যার ফলে ইলিশের দাম কমছে না। 

কুয়াকাটা মাছ বাজারের পাইকার মো. হাসান বলেন, মূলত গত কয়েক বছর ধরে ইলিশের সরবরাহ কম। বিশেষ করে গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশের ব্যাপক চাহিদা। দাম বেশি থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদা কমেনি। ফলে দাম কমার সুযোগ থাকে না। কিন্তু এই বন্দরে যে ইলিশ বিক্রি হয় তা স্থানীয় সাগরের। ঢাকায় যে ইলিশগুলো বিক্রি হয় তা খুচরো পাইকার এবং ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করেন। তারা প্রতি কেজি ইলিশে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি বিক্রি করেন।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ইলিশ মাছের দাম নির্ধারণ কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতাই নেই মৎস্য বিভাগের। এমনকি জেলেরাও মাছের দাম নির্ধারণ করতে পারেন না। মাছের দাম বাড়লেও জেলেরা তেমন উপকৃত হয় না। মধ্যস্বত্বভোগী আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারা নিজেদের মতো দাম বাড়িয়ে মাছ বিক্রি করেন। জেলেরা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে বন্দরের আড়তে নিয়ে আসেন। সেখানে থাকা আড়তদার ও পাইকাররা মাছের দাম হাঁকেন। জেলেদের পছন্দ না হলেও সেই দামে বিক্রি করতে হয়। বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আড়তদার ও পাইকাররা দাম নির্ধারণ করেন।

আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *