এটি এমন একটি রাস্তা যা দেখলে মনে হবে কোনো এক অনুন্নত মফস্বল এলাকা এটি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একটি রাস্তার যে এই অবস্থা হতে পারে তা না দেখলে বোঝার উপায় নেই। অসংখ্য খানাখন্দে ভরা এই রাস্তায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি। ভাঙাচোরা ও খানাখন্দের কারণে প্রায় প্রতিদিন ঘটে দুর্ঘটনা।
এটি এমন একটি রাস্তা যা দেখলে মনে হবে কোনো এক অনুন্নত মফস্বল এলাকা এটি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একটি রাস্তার যে এই অবস্থা হতে পারে তা না দেখলে বোঝার উপায় নেই। অসংখ্য খানাখন্দে ভরা এই রাস্তায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি। ভাঙাচোরা ও খানাখন্দের কারণে প্রায় প্রতিদিন ঘটে দুর্ঘটনা।
গুলশান গুদারাঘাট থেকে লেকের পাড় ধরে মার্কিন ও ভারতীয় দূতাবাসের পেছনের অংশ পর্যন্ত যাওয়া রাস্তাটির অবস্থা ৩-৪ বছর ধরে একইরকম- এক কথায় তথৈবচ! রাস্তাটির পূর্বদিকে উত্তর বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকা। মাঝামাঝি একপাশে মানারাত স্কুল, আর বরাবর উত্তর দিকে গেলে ভারতীয় ও মার্কিন দূতাবাস। রাস্তার পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে সারি সারি বসত বাড়ি। কিছু জায়গা অবশ্য এখনো খালি আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং এই পথে চলাচলকারীরা বলছেন, প্রায় ৪ বছর ধরে রাস্তাটির কোনো সংস্কার হয়নি। দিনে দিনে চলাচলের পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এটি। পিচ ঢালাই রাস্তাটির বেশিরভাগ জায়গায় ভেঙে ঢালাই উঠে গেছে। রাস্তার প্রতি এক দুই হাত পরপর অসংখ্য খানাখন্দ, কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সামান্য সময়ের জন্যও যদি বৃষ্টি হয় তাহলে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলের আর কোনো সুযোগ থাকে না। রাস্তাটিতে রিকশা, মোটরসাইকেল প্রায়ই খানাখন্দে পড়ে উল্টে যায়। বিশেষ করে এই রাস্তায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে রিকশায়। এলাকাবাসীর মতে, এটি এমন একটি রাস্তা যেখানে প্রতিদিন যাত্রীসহ রিকশা উল্টে যায়।
প্রগতি সরণি ও গুলশানের প্রধান সড়কের যানজট এড়াতে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন লেকের পাড়ের এই রাস্তাটি ব্যবহার করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তাটির এমন বেহাল দশা যে, যাতায়াত করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বলতে গেলে রাস্তার প্রতি এক মিটার পরপর একটি করে খানাখন্দ রয়েছে। রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে নিচের মাটি পর্যন্ত বের হয়ে গেছে। গেল কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাস্তার খানাখন্দে এখনো পানি জমে আছে। যে কারণে চালকরা দেখে বুঝতে পারছেন না এসব গর্তের গভীরতা কতটুকু। রিকশা থেকে শুরু করে অন্যান্য যানবাহনগুলো খুব ধীর গতিতে চলাচল করতে হচ্ছে।
কথা হয় ওই সড়কে রিকশা চালানো ফরিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেহেতু পাশের এলাকাতেই এই রিকশার গ্যারেজ, তাই বাধ্য হয়ে এই ভাঙাচোরা রাস্তায় রিকশা চালাতে হয়। তবে এখন বেশিরভাগ চালকই এই রাস্তায় ট্রিপ পেলে যাত্রী নেয় না।
তিনি বলেন, প্রতিদিন আমি রিকশা উল্টে যেতে দেখি, আমি নিজেও যাত্রী নিয়ে দুইবার উল্টে পড়েছি। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির এই খারাপ অবস্থা, কেউ এটি ঠিক করে না।
কথা বলতে বলতে সেখানে আসে একটি প্রাইভেট কার। চালক এরশাদ আলীর কাছে জানতে চাই প্রতিক্রিয়া। তিনি একই অভিযোগ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির বেহাল দশা, হাজার হাজার প্রাইভেট কার, রিকশা মোটরসাইকেল এই রাস্তায় চলাচল করে। কেউ রাস্তাটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না।
রাস্তাটির পাশের গুপিপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ফরহাদ রেজা বলেন, একটু বৃষ্টি হলে রাস্তাটি ডুবে যায়, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। পানি জমে গেলে বোঝা যায় না কোথায় গর্ত, কোথায় ভালো। তাই প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বৃষ্টি থেমে গেলেও বৃষ্টির পানি চার পাঁচ দিন খানাখন্দে জমে থাকে। এমন কোনো দিন নেই যেদিন এখানে দুর্ঘটনা ঘটে না।
তিনি বলেন, আমাদের গুপিপাড়ার মধ্য থেকে উত্তর বাড্ডা ইউটার্ন পর্যন্ত ভেতরের রাস্তাতেও এমন সমস্যা ছিল দীর্ঘদিন ধরে, সঙ্গে ছিল জলাবদ্ধতার সমস্যাও। ছয় সাত মাস আগে ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ঢালাই রাস্তা করে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার এই রাস্তার বিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও এটি ঠিক করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংস্থাটি।
রাস্তাটির পাশে একটি খাবার হোটেলের মালিক আজিজুর রহমান বলেন, অল্প কিছুদিন হলো দোকানটি ভাড়া নিয়ে আমি হোটেল বানিয়েছি। কিন্তু এই রাস্তায় হোটেল করা লস হয়ে গেল। না পারছি দোকান ছেড়ে দিতে, না পারছি ব্যবসা চালিয়ে যেতে। রাস্তা খুবই ভাঙাচোরা, গর্তগুলোতে পানি জমে থাকে, সে কারণে মানুষের যাতায়াত কম। যার কারণে খাবার হোটেলে খুব বেশি কাস্টমার পাওয়া যায় না। ভাঙা রাস্তা দিয়ে এসে কেউ হোটেলে খেতে চায় না। পাশাপাশি সব সময় রাস্তায় ধুলোবালি উড়তে থাকে। ফলে এখানে হোটেল করে মহাবিপদে পড়েছি।
রাস্তাটির পাশের একটি পাঁচতলা বাড়ির ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে আমাদের এই বাসাসহ আশপাশের অন্যান্য বাসাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে অনেকগুলো ফ্ল্যাট ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ভাড়াটিয়ারা এই এলাকায় বাসা ভাড়া নিচ্ছে না। আর যারা রয়েছে তারাও বাসা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে।
বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় কিছুদিন আগে রাস্তাটির পাশ দিয়ে ড্রেনেজ লাইনের পানি প্রবাহ ঠিক করতে কাজ করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। সেই কাজে অংশ নেওয়া সংস্থাটির আঞ্চলিক অফিসের ড্রেনেজ লাইন সুপারভাইজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটির বেহাল দশা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। কিছুদিন আগে সেখানকার ড্রেনেজ লাইন পরিষ্কার করেছে আমাদের কর্মীরা। পাঁচ-ছয় মাস আগে রাস্তার সংস্কার কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই উদ্যোগটি আপাতত কার্যকর হয়নি। আগামীতে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সড়কের কাজ করা হবে, আশা করা যায় সেই সময় এই রাস্তার সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান বলেছেন, ডিএনসিসিতে নতুনভাবে সংযুক্ত এলাকায় স্থায়ীভাবে টেকসই উন্নয়নের জন্য রাস্তা ও ড্রেনেজ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। রাস্তা ও ড্রেনেজের কাজগুলো চলছে। ক্রমান্বয়ে অন্যান্য এলাকাতেও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোর কাজ করা হবে। এ বছর বর্ষায় সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসেও প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় স্বাভাবিক গতিতে কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। মানুষের ভোগান্তি লাঘবে কাজের গতি বাড়িয়ে দ্রুত সময়ে কাজগুলো করা হবে।
এএসএস/এমএ