গেল বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছিল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে। এ বছরও ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ বাড়ছে হাসপাতালটিতে। ইতোমধ্যে রোগীতে ঠাসা এ হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিট।
গেল বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছিল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে। এ বছরও ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ বাড়ছে হাসপাতালটিতে। ইতোমধ্যে রোগীতে ঠাসা এ হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিট।
গতকাল রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিটে শতাধিক সিট রয়েছে। এর মধ্যে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালের অষ্টম তলায়। এ ছাড়া বয়স্কদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে হাসপাতালের ১১তলায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডেঙ্গু ইউনিটের প্রায় প্রতিটি সিটেই রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিন সুস্থ হয়ে অনেকে বাসায় ফিরছেন। আবার নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হতে আসছেন অনেকে। সেক্ষেত্রে সিট খালি থাকা সাপেক্ষে নতুন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত স্ত্রী নুসরাতকে নিয়ে তিন দিন ধরে মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন রাজধানীর মধুবাগের বাসিন্দা মো. শরীফ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তিন দিন ধরে এ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও প্লাটিলেট প্রতিদিন কমছে। এটিই এখন ভয়ের কারণ।
শরীফ বলেন, এ হাসপাতালে আসার দিন থেকেই দেখছি প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী আসছেন, ভর্তিও হচ্ছেন। তবে, এখন রোগী বেশি আসছে।
মোহাম্মদ মঈন মিয়ার ভাই শাহিনও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন এখানে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বাড়ি নরসিংদী। আমার ভাইয়ের ডেঙ্গু হয়েছে। তাকে গত বৃহস্পতিবার এ হাসপাতালে এনেছি। এখন তার চিকিৎসা চলছে। আমার ভাইয়ের অবস্থা এখন ভালোর দিকে।
তিনি আরও বলেন, এ হাসপাতালে প্রতিদিনই নতুন রোগী আসছেন। আজও নতুন করে কয়েকজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন আট হাজার ৮১০ জন। তাদের মধ্যে ৩২ জন মারা গেছেন। শুধু সেপ্টেম্বরেই ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ২৭০ জন রোগী। এর মধ্যে মারা গেছেন আটজন।
নাম প্রকাশ না করে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে আমাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়েছিল। এ বছর এখনও সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে, আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সেজন্য আমাদের হাসপাতালেও চাপ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, এ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য শতাধিক সিট রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সব সিটেই রোগী আছে। সিট খালি হলেই নতুন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। খালি না থাকলে অন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য রোগীর স্বজনদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, এ বছর দেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন হাসপাতালে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে। এরপর রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুও সবচেয়ে বেশি হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে।
এ বছর ডেঙ্গুতে পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। তবে, বেশি মৃত্যু হয়েছে নারীদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
এসএইচআর/এসএসএইচ