রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। প্রতিটি হাসপাতালে অন্যান্য রোগীর চেয়ে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। সেই চাপ সামলাতে ডিএনসিসি হাসপাতালে সরকারি ছুটির দিনেও রোগীদের সেবা দিচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। মাত্র ২০ টাকার টিকিটে ডেঙ্গুর পরীক্ষাসহ চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে হাসপাতালটি। দুর্গাপূজার ছুটিতে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা না আসলেও ডিউটিতে থাকা চিকিৎসকদের সেবা দিতে দেখা যায়।
রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। প্রতিটি হাসপাতালে অন্যান্য রোগীর চেয়ে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। সেই চাপ সামলাতে ডিএনসিসি হাসপাতালে সরকারি ছুটির দিনেও রোগীদের সেবা দিচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। মাত্র ২০ টাকার টিকিটে ডেঙ্গুর পরীক্ষাসহ চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে হাসপাতালটি। দুর্গাপূজার ছুটিতে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা না আসলেও ডিউটিতে থাকা চিকিৎসকদের সেবা দিতে দেখা যায়।
রোববার (১৩ অক্টোবর) ডিএনসিসি হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর ভিড়। সকাল থেকেই টিকিট কেটে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন। এখানে আসা সেবাপ্রত্যাশীদের ২০ টাকার টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। আগতদের বেশিরভাগই এসেছেন ডেঙ্গুর উপসর্গ জ্বর, মাথা ও শরীর ব্যথা, ঠাণ্ডাজনিত রোগ ও পেটের সমস্যা নিয়ে।
রাজধানীর বাড্ডা থেকে জ্বর নিয়ে গতকাল রাতে হাসপাতালে আসেন আব্দুল গনি মিয়া। রাতেই ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করেন। সকাল ১০টায় রিপোর্ট নেওয়ার জন্য আসেন। পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজিটিভ আসার পরও দুই লাখের মতো প্লাটিলেট থাকার কারণে ভর্তি নেওয়া হয়নি তাকে। এর পরিবর্তে ব্যবস্থাপত্রে ওমিপ্রাজল, জিংক ডিসপারসিবল ট্যাবলেট ২০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট ও ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
ডিএনসিসি হাসপাতালের তথ্যমতে, সেখানে শয্যা রয়েছে এক হাজার ৫৪টি। তবে রোববার সকাল পর্যন্ত সেখানে ১৯৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের ২১২টি আইসিইউয়ের মধ্যে ফাঁকা ছিল ১৯০টি। হাসপাতালের এইচডিইউ ২৮৮টি বেড ফাঁকা রয়েছে। ৩৭৭টি জেনারেল বেডের মধ্যে ১৭৭টিতে রোগী ভর্তি আছেন। বাকিগুলো ফাঁকাই রয়েছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন একজন।
হাসপাতালে দীর্ঘ লাইনে থাকা রোগীদের একজন বলেন, তিন-চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছি। কোনোভাবেই জ্বর কমছে না। স্থানীয় ডাক্তাররা ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে বলেছেন। তাই এসেছি। অনেকে জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা ও বমি নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। যার অবস্থা খারাপ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।
মহাখালী থেকে আসা মো. নাদিম বলেন, তিন দিন ধরে প্রচণ্ড জ্বর ও ঠান্ডা। এখন একটু কমছে। কিন্তু গত কয়েকদিনে সেটা বেশ বেড়েছিল। সঙ্গে পাতলা পায়খানা। কিছুই খেতে পারছি না। তাই সরকারি ছুটির দিন সত্ত্বেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসি।
সকালে শিশুসন্তান মুস্তাকিমকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন বাবা-মা। গত তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছে মুস্তাকিম। তার বাবা-মাকে মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ভর্তির জন্য টিকিট কাটতে দেখা যায়।
গাজীপুর থেকে আসা ডেঙ্গু রোগী দুলাল মিয়া বলেন, গাজীপুরে জ্বরের চিকিৎসা নিয়েছি। পরে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। কিন্তু হঠাৎ করে রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় ঢাকায় চলে আসি। এখন রক্তের প্লাটিলেট একটু বেড়েছে।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, দুর্গাপূজার ছুটির কারণে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগটি পুরো বন্ধ। প্রতিটি দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। হাসপাতালের দোতলায় শিশু, তৃতীয় তলায় নারী ও চতুর্থ তলায় পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি বেডেই মশারি টানানো। আর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নিয়মিত কথা বলছেন রোগীর স্বজনদের সঙ্গে। নার্সরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কাছে ডেঙ্গু রোগীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তাদের অনেকে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তারা বলেন, আমরা মিডিয়ার সামনে কথা বলতে পারব না। ডিরেক্টর স্যারের অনুমতি ছাড়া কথা বলা যাবে না। কাল আসুন, স্যার আসলে তারা রেফার করবেন কোন ডাক্তার মিডিয়াকে তথ্য দেবেন।
তবে, সরকারি ছুটি হওয়ায় প্রশাসনের কোনো অনুমতি পাওয়া যায়নি।
এমএসআই/পিএইচ