ছাই-পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকেন জয়পুরহাটের প্রসেনজিৎ

ছাই-পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকেন জয়পুরহাটের প্রসেনজিৎ

বাম হাতে বোর্ড, তার ওপরে কাগজ আর ডান হাতে পেন্সিল। এই নিয়ে তার সামনে বসা মানুষের ছবি আঁকা শুরু। পেন্সিল নিয়ে হাত চলছে, আর তার চোখের পাতা একবার মানুষটির দিকে আবার কাগজের দিকে। এভাবে মনোযোগ দিয়ে দেখে আর পেন্সিল দিয়ে এঁকে কয়েক মিনিটেই সেই মানুষটির ছবি আঁকা শেষ করলেন তিনি।

বাম হাতে বোর্ড, তার ওপরে কাগজ আর ডান হাতে পেন্সিল। এই নিয়ে তার সামনে বসা মানুষের ছবি আঁকা শুরু। পেন্সিল নিয়ে হাত চলছে, আর তার চোখের পাতা একবার মানুষটির দিকে আবার কাগজের দিকে। এভাবে মনোযোগ দিয়ে দেখে আর পেন্সিল দিয়ে এঁকে কয়েক মিনিটেই সেই মানুষটির ছবি আঁকা শেষ করলেন তিনি।

শুধু তাই নয়, ছাই ছিটিয়ে অল্প সময়েই তৈরি করে ফেললেন লিওনেল মেসিকে। আবার আখের ছোবলা দিয়েও তৈরি করছেন মানুষের চিত্র। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই এমন ছবি এঁকেছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার পূর্ব দোগাছী গ্রামের প্রসেনজিৎ বর্মন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল চন্দ্র বর্মন ও শোভা রানীর একমাত্র ছেলে প্রসেনজিৎ। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে প্রিন্ট মেকিং বিষয়ে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন। ছোটবেলা থেকে এই মেধাবী শিক্ষার্থীর ছবি আঁকার শখ ছিল। কিন্তু তার বাবা কৃষক ও মা গৃহিণী হওয়ায় তাদের জমির সামান্য আয় থেকে কোনো রকমে দিন চলতো। তাই ছবি আঁকার পাশাপাশি টিউশনি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ালেখার খরচ প্রসেনজিৎ নিজেই জুগিয়েছেন।

প্রসেনজিতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, অভাব-অনটনের কারণে ছবি আঁকার শখ পূরণ করতে গিয়ে তাকে পরিশ্রম করতে হয়েছে। এখন তার আঁকানো ছবি থেকে যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে রঙ-পেন্সিলসহ অন্যান্য জিনিস কিনতে পারেন। তিনি নিজ এলাকার মানুষদের ছবি এঁকে দিয়েছেন। তা ছাড়া বিখ্যাত ব্যক্তিদেরও ছবি সহজেই এঁকে ফেলেন। তবে সরকারি বা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা পেলে প্রসেনজিত আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে।

চিত্রশিল্পী প্রসেনজিৎ বর্মণ বলেন, আমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছবি আঁকা শিখিনি। আমি যখন চতুর্থ কিংবা পঞ্চম শ্রেণিতে ছিলাম তখন প্রাইমারি স্কুলের একজন স্যার ব্ল্যাক বোর্ডে চক দিয়ে পাখি, গাছপালা আঁকিয়ে দিতেন। সেগুলো দেখে দেখেই আমি ছবি আঁকানোর কৌশল আয়ত্ত করি। আর নিজে নিজেই চেষ্টা করতাম। পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজ করতাম।

তিনি বলেন, ভালো কোনো বিষয় নিয়ে পড়াশোনার চিন্তা ছিল। আমার পরিবার আমাকে চালানোর জন্য সেভাবে সক্ষম ছিল না। এজন্য টিউশনি করানোর চিন্তা মাথায় আসে। আমি কলেজে পড়াশোনার সময় ছবি আঁকানোর পেন্সিল বা অন্যান্য জিনিসের দাম বেশি থাকায় সেভাবে তা কিনতে পারতাম না। এজন্য টিউশনির টাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের পেন্সিল কিনতাম, আর ছবি আঁকাতাম। এখন ছবি আঁকানোর টাকা থেকে সেগুলো কিনতে পারি। আমার ক্রিয়েটিভ কিছু নিয়ে ছবি আঁকানো বেশি পছন্দ। ছাই বা অন্যান্য কিছু দিয়েও ছবি আঁকতে পারি। এগুলো দেখতে খুবই সুন্দর লাগে।

তিনি আরও বলেন, চারুকলা নিয়ে আমার তেমন ধারণা ছিল না। আমার স্বপ্ন আমি একজন ভালো মানের আর্টিস্ট হবো। অনেকেই চারুকলা নিয়ে পড়তে চায় না বা জানে না। তাই চারুকলার যে বিশাল আয়োজন রয়েছে, সেটি সবার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করার আশা প্রসেনজিতের।

প্রসেনজিতের মা শোভা রানী বলেন, ছোটবেলা থেকেই সে (প্রসেনজিৎ) ছবি আঁকতো। ছবি দেখে অনেকেই প্রশংসা করে। অন্যদের ছবি এঁকে কিছু টাকা পেতো, সেই টাকা দিয়ে রং-পেন্সিল কিনতো। অভাবের সংসারে ছেলেকে ভালো রঙ-পেন্সিল বা খাতা কিনে দিতে পারিনি। তার বাবা অসুস্থ, ওষুধ কিনতে টাকা লাগে। তাই সে প্রাইভেট পড়াতো। সেই টাকা দিয়ে রঙ-পেন্সিল কিনে আরও ভালো ভালো ছবি আঁকে। এখন তাকে নিয়ে মা হিসেবে আমার গর্ব হয়। সে আরও বড় কিছু হোক—এটিই আমার চাওয়া।

বাবা শ্যামল চন্দ্র বর্মন বলেন, ছেলের ছবিগুলো দেখে প্রতিবেশীরা অনেক ভালো কথা বলে। এগুলো শুনে আমার নিজের খুব ভালো লাগে। ছেলে কখন, কীভাবে এগুলো শিখলো তা আমি নিজেই জানি না। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। এখন কীভাবে কী করবো, তা নিয়ে একটু চিন্তা হয়। তাকে একটু সহযোগিতা করলে সে আরও ভালো কিছু করতে পারবে।

খনজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সে (প্রসেনজিৎ) স্কুলে থাকা অবস্থায়ও ছবি আঁকতো। ছবি এঁকে পুরস্কারও পেয়েছে। তার ছবি দেখে সেই সময় থেকেই মুগ্ধ হয়েছি। কোনো প্রতিষ্ঠান তাকে সহায়তা করলে সে ভবিষ্যতে আরও সাফল্য লাভ করবে।

এএমকে

 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *