চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. নাছিম আখতারের পাঠানো আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. নাছিম আখতারের পাঠানো আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ওই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) পৃথক দুটি বিবৃতিতে প্রত্যাখ্যানের কথা জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) চাঁবিপ্রবির শিক্ষক সমিতি ও একাধিক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক ও সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মো. জাহিদুল ইসলাম এবং ব্যবসায়ে প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক খাদিজা খাতুন টুম্পা। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে দেওয়া বিবৃতিটি ‘সিএসটিউই ইনসাইডার’ নামক ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়।
শিক্ষক সমিতির দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৯ সেপ্টেম্বর উপাচার্য তার অফিসিয়াল ইমেইল ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক অফিস আদেশের মাধ্যমে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক নাজিম উদ্দিন এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক প্রিন্স মাহমুদকে অব্যাহতি দেন।
ওই অফিস আদেশে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বেতন ভোগী শিক্ষক বা কর্মচারীকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে কোনো তদন্ত কমিটি দিয়ে তদন্ত অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এবং তাকে ব্যক্তিগতভাবে বা কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করে চাকরি থেকে অপসারণ বা পদচ্যুত করা যাবে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভিসি আইন লঙ্ঘন করেছেন। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারবিরোধী আন্দোলনে অব্যাহতি প্রাপ্ত শিক্ষকদ্বয়সহ সকল শিক্ষকদের সমর্থন থাকায় উপাচার্য ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তাদেরকে কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে অব্যাহতি দেন। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সকল শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উপাচার্যের এহেন সিদ্ধান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে এবং ওনার বিধিবহির্ভূত সকল কর্মকাণ্ডের জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বৈরাচারী উপাচার্য ড. মোহাম্মদ নাছিম আখতার অবৈধভাবে গত ৯ সেপ্টেম্বর যে অফিস আদেশ জারি করেছেন, তা চাঁবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করেছে। স্বৈরাচারী উপাচার্য নাছিম আখতার কর্তৃক প্রদত্ত কোনো আদেশ চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানবে না। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, চাঁবিপ্রবির স্বৈরাচারী উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের অব্যাহতি দিয়ে জারি করা অবৈধ অফিস আদেশ বাতিল না করা পর্যন্ত চাঁবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা কোনো প্রকার অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে না।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে উপাচার্য সরাসরি বাধা দেন এবং ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে নিজের লেখা একটা বই উৎসর্গ করেছেন তিনি। সরকার পতনের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাস ছেড়ে ‘অজ্ঞাতস্থানে’ অবস্থান করছেন তিনি।
আনোয়ারুল হক/এএমকে