চা শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা করার দাবি

চা শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা করার দাবি

চা শ্রমিকের মজুরি সাড়ে ৮ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল ও গেজেট প্রত্যাহার করে ৫০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা এবং ভূমির অধিকারসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন চা শ্রমিক নেতারা।

চা শ্রমিকের মজুরি সাড়ে ৮ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল ও গেজেট প্রত্যাহার করে ৫০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা এবং ভূমির অধিকারসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন চা শ্রমিক নেতারা।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে শ্রম উপদেষ্টার কক্ষে এক বৈঠকে এসব দাবি জানানো হয়। বৈঠকে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নেতারা চা শ্রমিকদের নানা দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। তারা বলেন, দুই বছর পরপর শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘ ১৯ দিন আন্দোলনের পরে সর্বশেষ ২০২১-২২ সালের মজুরি ২০২২ সালের আগস্ট মাসে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারিত হয়। তৎকালীন সরকার শ্রমিকপক্ষকে বাদ দিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে একতরফা মিটিং করে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। যদিও নিয়ম হচ্ছে শ্রমিকপক্ষ ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মজুরি নির্ধারণ করা। অসহায় চা শ্রমিকরা নিরুপায় হয়ে ১৭০ টাকা মজুরিতেই কাজে যোগদান করেন। ৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রায় ৩১ হাজার টাকা হলেও মালিকরা তৎকালীন সরকারের সহযোগিতায় মাত্র ১১ হাজার টাকা পরিশোধ করে। বাকি ২০ হাজার টাকা থেকে চা শ্রমিকদের বঞ্চিত করে।

তারা বলেন, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই সরকার ২০২৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ শতাংশ (৮.৫০ টাকা) হারে চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। শ্রমিকরা সেই গেজেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তা বাতিলের দাবি তোলেন এবং দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি ঘোষণার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন। জুলাই-আগস্ট মাস চা-বাগানে চা-পাতার সিজন, তাই এ সময়ে চা-শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের ডাক দেয়। এবার জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন শুরু করতে পারেনি।

তারা আরও বলেন, প্রায় ২০ মাস পেরিয়ে গেলেও চা-শ্রমিকদের ২০২৩-২৪ মেয়াদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে বাগান মালিকদের কোনো তৎপরতা ছিল না। গেজেট অনুযায়ী ২০২৪ সালে ৫ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধি কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হলে চা শ্রমিকরা আন্দোলনে যাবে, তা বাগান মালিকরা জানতো। তাই বর্তমান পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে মালিকরা হুট করে চা শ্রমিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিগত সরকারের গৃহীত গেজেট অনুযায়ী চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা থেকে মাত্র ৮.৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৭৮.৫০ টাকা নির্ধারণ গত ৮ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি দেয়, যা ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

চা শ্রমিক নেতারা বলেন, শুধু ডাল-ভাত খেয়েও দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে ৫/৬ জনের সংসার চালানো বর্তমান বাস্তবতায় একেবারেই অসম্ভব। চা-শ্রমিকরা ১৭০ বছর পরেও ভূমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়নি। ন্যূনতম চিকিৎসার অধিকার বাগান মালিকরা নিশ্চিত করেনি। অপুষ্টিতে ভুগছে  চা শ্রমিক ও তাদের পরিবারে। অতি নিম্ন মজুরিতে চা-শ্রমিকদের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই দুই বেলা দু-মুঠো খাবারের নিশ্চয়তার জন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মজুরি হওয়া দরকার। অতিদ্রুত গেজেট অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, গেজেট বাতিল এবং দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান সরকারের উচিত দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যথায় চা শ্রমিকদের কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার বিকল্প থাকবে না।

শ্রমিক নেতাদের কথার প্রেক্ষিতে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া বলেন, চ-বাগান শ্রমিকদের বঞ্চনার কথা আমি মন দিয়ে শুনলাম। আমি মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। আপনাদের দাবির বিষয়ে আমি খোঁজখবর ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

‘চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি’ পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ কাফি রতন, সমন্বয়ক এসএম শুভ, আহ্বায়ক এবং খাদিম চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সবুজ তাঁতি, মালনিছড়া চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি জিতেন সবর, বুরজান চা-কারখানা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি বিলাস ব্যানার্জি, ছড়াগাংগ চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি কমল চাষা, বুরজান চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রতিলালা নায়েক, কালাগুল চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রঞ্জু নায়েক, গুলনি চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় কুর্মি ও সাধারণ সম্পাদক মংগল মুন্ডা, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য কৃষ্ণদাশ অলমিক, কেন্দ্রীয় সংগঠক মনীষা ওয়াহিদ প্রমুখ।

/এমএইচএন/এমএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *