গাইবান্ধায় পাবলিক লাইব্রেরিতে লুটপাট, বই ফেরত চেয়ে লেখকের আকুতি

গাইবান্ধায় পাবলিক লাইব্রেরিতে লুটপাট, বই ফেরত চেয়ে লেখকের আকুতি

গাইবান্ধার শতবর্ষী পাবলিক লাইব্রেরিতে ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হয়েছে। লুটপাটকারীরা কম্পিউটার, টিভি, ফ্যান, চেয়ার, ঘড়ি, আইপিএস ও সাউন্ড সার্ভিসসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে গেছে। এ ছাড়া তারা লাইব্রেরি ভেঙে অন্তত ছয় হাজার বই লুট করে নিয়ে গেছে। যার মধ্যে রয়েছে বহু দুষ্প্রাপ্য বই। লুট হওয়া ওইসব দুষ্প্রাপ্য বই লাইব্রেরিতে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ গাইবান্ধা আহম্মদ উদ্দিন শাহ শিশু নিকেতন স্কুল ও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাজহার-উল-মান্নান।

গাইবান্ধার শতবর্ষী পাবলিক লাইব্রেরিতে ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হয়েছে। লুটপাটকারীরা কম্পিউটার, টিভি, ফ্যান, চেয়ার, ঘড়ি, আইপিএস ও সাউন্ড সার্ভিসসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে গেছে। এ ছাড়া তারা লাইব্রেরি ভেঙে অন্তত ছয় হাজার বই লুট করে নিয়ে গেছে। যার মধ্যে রয়েছে বহু দুষ্প্রাপ্য বই। লুট হওয়া ওইসব দুষ্প্রাপ্য বই লাইব্রেরিতে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ গাইবান্ধা আহম্মদ উদ্দিন শাহ শিশু নিকেতন স্কুল ও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাজহার-উল-মান্নান।

ফেসবুকে গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বই ফেরত চেয়ে ওই স্ট্যাটাস দেন তিনি। পরে শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে তার স্ট্যাটাসটি নজরে আসে এই প্রতিবেদকের। এর আগে ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরির তালা ভেঙে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

স্ট্যাটাসে প্রবীণ শিক্ষক ও লেখক মাজহার-উল-মান্নান বলেন, ‘গাইবান্ধার শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরির আসবাবপত্রসহ বহু মূল্যবান দুষ্প্রাপ্য বই লুট হয়ে গেছে। আসবাবপত্র হয়ত পুনরায় সংগ্রহ করা যাবে কিন্তু মহামূল্যবান গ্রন্থগুলোর কী হবে? যারা এগুলো নিয়ে গেছেন তাদের হয়ত তেমন কোনো কাজেই আসবে না। হয়ত আলমারিতে সাজিয়ে রাখবেন। কিন্তু তা কি খুব মর্যাদার হবে? প্রতিনিয়ত বিবেকের তাড়নায় আপনি আত্মগ্লানিতে ভুগবেন। আমি একজন প্রবীণ শিক্ষক এবং জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে আপনাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ করি আপনারা দয়া করে বইগুলো লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষের হাতে ফেরত দিয়ে নিজেদের বিবেকের দায় থেকে মুক্ত হন। মন পরিষ্কার হবে, শান্তি পাবেন।’

তবে, স্ট্যাটাসের পর এবং লুট হওয়ার এক সপ্তাহেও ফিরে আসেনি একটি বইও। যদিও গণভবনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু লুট হওয়া সম্পদ ইতোমধ্যে ফেরত আসতে শুরু করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে।

গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি অ্যান্ড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় উল্লাসের সময় আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে দুষ্কৃতকারীরা অযৌক্তিকভাবে তালা ভেঙে, কর্মচারীদের মারধর করে এখানকার মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট এবং ভাঙচুর করে নিয়ে যায়, যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।

তিনি বলেন, এই লাইব্রেরি সবার, এখানে সকল দলের, সকল মতের মানুষ প্রোগ্রাম করে। এটাতে লুটপাট-ভাঙচুর করা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতোমধ্যে গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি অনেকাংশে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। যা উন্নয়ন হয়েছিল এই লুটপাটে তা আগামী ২০ বছর পিছিয়ে গেল। এ সময় তিনি লুট করে নিয়ে যাওয়া বইসহ লাইব্রেরির মালামাল ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানান।

পাবলিক লাইব্রেরি অ্যান্ড ক্লাবের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা থেকে জানা যায়, সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ, মিলনায়তন শাখা ও লাইব্রেরি শাখাসহ তিনটি শাখাতেই লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ছয় লাখ টাকা। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে, জিএফসি স্ট্যান্ড ফ্যান, ৩২ ইঞ্চি টিভি, একটি কম্পিউটার পূর্ণাঙ্গ সেট, কাঠের গদির চেয়ার, দেয়াল ঘড়ি, কাঠের হাতাওয়ালা ও হাতা ছাড়া চেয়ার লুট করেছে দুর্বৃত্তরা।

এ ছাড়া মিলনায়তন শাখার ৫৬ ইঞ্চি ও ৩২ ইঞ্চি টিভি, ডিজিটাল ঘড়ি, মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সার্ভিস, স্টেজ চেয়ার, সোফা, এলইডি বাল্ব এবং ১৩৫টি প্লাস্টিক চেয়ার লুট করা হয়েছে।

এ ছাড়া লাইব্রেরি শাখা থেকে বইয়ের আলমারির গ্লাস ভেঙে আনুমানিক ছয় হাজার বই (মোট বইয়ের ৩০ শতাংশ), আইপিএস, ব্যাটারি, দেয়াল ঘড়ি ও কালো হাতাওয়ালা চেয়ার লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুর করা হয়েছে টেবিল টেনিস বোর্ড, সাধারণ সম্পাদকের টেবিল ও লাইব্রেরির লিওন সাইনবোর্ডে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ এবং একই দিন বিকেল ৩টায় সেনাপ্রধান ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই গাইবান্ধায় মিছিল করে ছাত্র-জনতা। এ সময় রাজনৈতিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। এর সুযোগে লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন সাধারণ ব্যবসায়ীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও লুটপাট চালানো হয়।

রিপন আকন্দ/এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *