বাসা থেকে ১১০০ টাকা নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী গোলাম মোস্তফা। বাজারে এসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে রীতিমতো মাথায় হাত তার।
বাসা থেকে ১১০০ টাকা নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী গোলাম মোস্তফা। বাজারে এসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে রীতিমতো মাথায় হাত তার।
ইলিশ কিনতে এসে তিনি বলেন, ইলিশ তো ধরাই যায় না, ধরতে গেলেই ছ্যাকা লাগে। আসার সময় ছেলে মাহিন আবদার করেছিল ইলিশ কিনে নেওয়ার জন্য। সন্তানের ইচ্ছা পূরণে ৮৫০ টাকায় ছোট একটা ইলিশ কিনেছি। চাল আর ইলিশ কেনার পর টাকা না থাকায় প্রয়োজনীয় অনেক কিছু না নিয়ে বাসায় ফিরছি। এ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পটুয়াখালী পৌর নিউমার্কেট, নতুন বাজার, পুরান বাজার ও হেলাতালিয়া বাধঘাট মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজির ওজনের ইলিশ ১৭০০ টাকা দরে, ৮০০ গ্রামের প্রতি কেজি ইলিশ ১৩০০ টাকা দরে, ৫-৬০০ গ্রামের প্রতি কেজি ইলিশ ১২০০ টাকা দরে এবং ৩-৪০০ গ্রামের ইলিশ ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে ইলিশের দাম চড়া হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অধিকাংশ জেলের।
চরমোন্তাজ এলাকার জেলে মো. রফিক মাঝি বলেন, আমরা তো মাছের ন্যায্য দাম পাই না। খালি শুনি বাজারে নাকি ইলিশের দাম চড়া যায়, কই আমাগো পর্যন্ত তো পৌঁছায় না। আজ ১ কেজি ১০০ গ্রামের একটা মাছ বিক্রি করছি ১৩০০ টাকায়, কেজি ধরছে সাড়ে ১১০০ টাকা। যদি দাদন থিকা বের হইতে পারতাম তাহলে হয়তো আর একটু ভালো থাকতে পারতাম। এছাড়া নদীতে বর্তমানে মাছ একটু কম।
জেলেদের অভিযোগ নদীতে পর্যাপ্ত মাছ না থাকলেও কাগজে কলমে বাড়ছে ইলিশের উৎপাদন।
পৌর নিউমার্কেটের খুচরা মৎস্য ব্যবসায়ী শ্রী বিষ্ণু বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে ইলিশ নাই তাই ইলিশের দাম তুলনামূলক বেশি। আমাগো কেনা বেশিতে, তাই বাধ্য হইয়া বেশিতে বিক্রি করা লাগে। ইলিশের দাম এতবেশি কেন? প্রশ্নে তিনি আড়ৎদারের (মনির হাওলাদার মৎস্য আড়ৎ) দোহাই দেন।
বিষ্ণু বাবুর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যোগাযোগ করা হয় মনির হাওলাদার মৎস্য আড়তের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর গাজীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা পাইকারি বিক্রি করি। ব্যাপারী অথবা ফরিয়ারা গলাচিপা, পানপট্টি চরমোন্তাজ থেকে মাছ নিয়ে আসে, আমরা বিক্রি করে তাদের টাকা পরিশোধ করি। তবে নিউ মার্কেটের একাধিক মাছ ব্যবসায়ী জানান, এই বাজারে ইলিশের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে এই আড়তের ব্যবসায়ীরা।
মনির হাওলাদার মৎস্য আড়তের সূত্র ধরে জেলার গলাচিপা উপজেলার বোয়ালি খেয়াঘাট এলাকায় সন্ধান মেলে সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যের। তিনি গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, চরমোন্তাজ, চরবিশ্বাস এলাকার দাদোন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করে পটুয়াখালী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন খুচরা বাজারে পাঠিয়ে থাকেন। পটুয়াখালী নিউমার্কেট পর্যন্ত ১০০ কেজি মাছ পরিবহন করতে খরচ হয় ১৩৫০ টাকা।
নাম না প্রাকাশের শর্তে তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী মাছ কম ধরা পড়ে না তাই দাম বেশি। যারা বেশি টাকা দিয়া কিনতে পারে তারা খাইতে পারে, যারা কিনতে পারে না তারা খাইতে পারে না। ধরেন চাহিদা আছে একশ টন বাজারে ওঠে পঞ্চাশ টন, তখন যে বেশি দাম দিয়ে কিনতে পারে সে মাছ নিয়ে যায়। আর আমাদের হাতে কিছু নাই, আমরা যেমন কিনি তেমন বিক্রি।
কত দরে মাছ ক্রয় করছেন জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক কেজির ওজনের ইলিশ ক্রয় করছি ১২০০ টাকা দরে, ৮০০ গ্রামের প্রতি কেজি ক্রয় করছি এক হাজার টাকা দরে, ৫-৬০০ গ্রামের প্রতি কেজি ইলিশ ক্রয় করছি ৮০০ টাকা দরে এবং ৩-৪০০ গ্রামের ইলিশ ৬০০ টাকা দরে ক্রয় করছি।
চরমোন্তাজ মায়ের দোয়া মৎস্য আড়তের মালিক মো. ফয়সাল বলেন, আমাদের কাছে জেলেরা মাছ রাইখা যায়। আমরা খাতায় লেইখা রাখি। সব জেলেদের মাছ একত্রিত করে গলাচিপায় নিয়ে যাই, সেখানে যেমন দাম পাই, সেই হিসেবে জেলেদের টাকা পরিশোধ করি।
কিন্তু চরমোন্তাজ এলাকার জেলেদের বক্তব্য আলাদা। দাদনের জাল থেকে বের হতে পারছেন না তারা। আর এই দাদান প্রথার কারণেই তারা ইলিশের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে জানান। সরকার যদি জেলেদেরকে কৃষকদের মতো সহজভাবে ঋণের ব্যবস্থা করে দিতেন, তাহলে হয়তো দাদন মালিকদের কাছ থেকে রেহাই পেত উপকূলের জেলেরা।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক মো. রাকিব হাসান বলেন, ইলিশ সম্পদ রক্ষায় কাজ করছে সরকার। গত জুলাই মাসে জেলায় আহরিত ইলিশের পরিমাণ হয়েছে ৩৩৬৩ মেট্রিক টন এবং গত আগস্ট মাসে আহরিত ইলিশের পরিমাণ ৩৭৭৬ মেট্রিক টন। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি যাতে মাছের দাম হাতের নাগাদের মধ্যে থাকে। তবে মাছের আমদানি বাড়লে ইলিশের দাম কমবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর পটুয়াখালীর সহকারী পরিচালক মো. শাহ শোয়াইব মিয়া বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। ইতোমধ্যে আমরা একাধিকবার অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বাজারের সব পণ্য ক্রেতাদের হাতের নাগালে রাখার।
মো. রায়হান/আরকে