দীর্ঘদিন যাবৎ খানাখন্দে বেহাল দশায় নেত্রকোণা শহরের চকপাড়া মোড় থেকে রাজুর বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কটি এখন ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে।
দীর্ঘদিন যাবৎ খানাখন্দে বেহাল দশায় নেত্রকোণা শহরের চকপাড়া মোড় থেকে রাজুর বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কটি এখন ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে।
পৌর এলাকার উত্তরাপূর্ব এলাকা, নেত্রকোণার চার উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার মানুষ এ সড়ক দিয়ে ভোগান্তি ও ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে। রাস্তা ভাঙা থাকায় সড়কে বেশিরভাগ সময় যানজট লেগেই থাকে।
রাস্তার করুণ এ অবস্থায় একদিকে যেমন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারীরা তেমনি যানবাহন নষ্ট হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যানবাহন মালিকরা। পাশাপাশি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায় সময়। এদিকে কাজের অগ্রগতি নিয়ে কিছুই জানে না মূল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
আবাদুল আওয়াল নামের ওই এলাকার এক বাসিন্দা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, তেরীবাজার থেকে রাজুর বাজার পর্যন্ত যেতে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট লাগার কথা। কিন্তু এ রাস্তা ভাঙা থাকার কারণে এক ঘন্টার ওপরে লেগে যায়। এই রাস্তা দিয়ে চার উপজেলার লোকজনের যাতায়াত। উপজেলা থেকে জেলা শহরে রোগী নিয়ে আসছে যতটা না কষ্ট হয় তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয় এই এক কিলোমিটার রাস্তা দিয়ে আসতে। রাস্তা ঠিক মতো মেরামত করা হয় না, গর্ত থাকে। অল্প একটু সুরকি দিয়ে বন্ধ করে দেয়, আবার গর্ত আগের অবস্থায় চলে যায়। এ রাস্তা নিয়া কারো কোনো মাথা ব্যাথা নাই। আর মাঝ রাত পর্যন্ত এ রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে।
মকবুল মিয়া নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান, এ রাস্তা ভাঙা থাকায় ছোট ছোট গাড়িগুলো খুব বেশি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। পাশাপাশি যানজট সর্বক্ষণ লেগেই থাকে। প্রতিদিন যানজটে পড়তে হয়। সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যানজট থাকে। খুব অশান্তিতে আছি ভাই। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নাই, এদিকে হেঁটে যাওয়ার মতো অবস্থা থাকে না।
রশিদ মিয়া নামের এক রিকশা চালক বলেন, তেরীবাজার মোড় থেকে রাজুর বাজার পর্যন্ত রাস্তাটা ভাঙা থাকার কারণে আমরা ঠিক মতো রিকশা চালাতে পারি না। গাড়ি কাত হয়ে যায়, মাঝে মাঝে গাড়ি উল্টে যায়, গাড়ির ক্ষতি হয়, যাত্রী আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আর বৃষ্টি হইলে তো এই রাস্তায় চলার উপায় থাকে না। কোথায় গর্ত আর কোথায় সমান বোঝা যায় না। এমন বাজে অবস্থা হয় যে গাড়ি চালানোর কোনো উপায় থাকে না। এ রাস্তাটা নিয়ে আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি।
মো. আব্দুল মোমেন এর মালিকানাধীন ‘মেসার্স ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ’ নামের কিশোরগঞ্জের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজটি পেলেও, আব্দুল মোমেন এই কাজটির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে তিনি জানিয়েছেন। এমনকি কত টাকার কত মিটার কাজ করা হচ্ছে তাও তিনি জানেন না। আব্দুল মোমেন বলেন, নেত্রকোণার মো. মোশারফ হোসেন ও তার পার্টনার মিলে কাজটি নিয়েছেন। তিনি শুধু তার লাইসেন্স দিয়ে সহায়তা করেছেন। এর বাইরে তিনি কিছুই জানেন না।
‘মেসার্স ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ’ এর নামে কাজ নেয়া মো. মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, চুক্তিপত্র সম্পাদন করে গত জুলাইয়ে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্য প্রচুর বৃষ্টির কারণে রাস্তা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়। তখন পৌরসভার চাহিদা অনুযায়ী জনগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে পূজার আগে আমরা গর্তগুলো ভরাট করে দেই। আমরা আশা করছি এখন থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারব। আমাদের নির্ধারিত সময় ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এর মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দিতে আমরা সক্ষম হব। রাস্তাটি তিন ইঞ্চি সিসি এবং সাত ইঞ্চি আরসিসি ঢালাই মিলে মোট ১০ ইঞ্চি হবে বলে জানিয়েছেন মো. মোশারফ।
সড়ক সংস্কারের জন্য দুইমাস আগে ঠিকাদার নিয়োগ হলেও দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সড়কটি সংস্কার কাজে ধীরগতি রয়েছে বলে জানিয়েছে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, শহরের মিফতাহুল উলুম মাদরাসা থেকে রাজুর বাজার পর্যন্ত ৯৩০ মিটার রাস্তাটি ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়েছে। ‘মেসার্স ভাটি বাংলা’ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। রাস্তাটি সংস্কারে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজটির জন্য তারা গত জুলাইয়ে চুক্তিপত্র সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজটি যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। এখন আমরা কাজ শুরু করেছি তবে পুরোদমে কাজ শুরু হয়নি। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তারা ইতোমধ্যে খানা-খন্দগুলো ভরাট করে রাস্তাটা চলার উপযোগী করছেন পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজটি শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।
চয়ন দেবনাথ/আরকে