কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর চরের সকল অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েকশ পরিবার।
কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর চরের সকল অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েকশ পরিবার।
বুধবার (২১ আগস্ট) ভোরে আকস্মিক পানিতে তলিয়ে যায় গোমতী নদীর চরের গ্রামগুলো। দুপুর ১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। বিকেল ৪টার দিকে ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। নদীর বিপৎসীমা ১১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে গোমতী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ডম্বুরা লেকের বাঁধ খুলে দেওয়ায় ত্রিপুরার বন্যার পানি নেমে আসছে কুমিল্লার দিকে গোমতী নদী দিয়ে। তবে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গোমতীর বাঁধের কোথাও কোনো সমস্যার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে গোমতীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীর চরের সকল অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়েছে কয়েকশ পরিবার। জেলার আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কারচর, চাঁনপুর, ডুমুরিয়া চাঁনপুর, পালপাড়াসহ নদীর গহ্বরে বসতি গড়া সকল পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সেসব পরিবারের মানুষেরা।
চাঁনপুর এলাকার বানভাসি শাহিদা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল রাতেও পানি অনেক কম ছিল। আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি এমন হবে। ভোর হওয়ার কিছুটা আগে থেকে দেখি পানি ঘরে প্রবেশ করছে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ঘরে পানি ঢুকে দুপুরের দিকে ঘরের অর্ধেক তলিয়ে গেছে।
জয়নাল মিয়া নামে আরেকজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে জানলে গতকালই ঘরের আসবাব সব তুলে নিতাম বাঁধে। আজ সকালে হঠাৎ পানি এসে আমাদের ডুবাতে শুরু করল। অন্যদের সহযোগিতায় গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি এবং ঘরের অন্যান্য মালামাল বাঁধের সড়কে তুলেছি। এগুলো সড়কের ওই পাড়ে জেঠাতো ভাইয়ের বাসায় নিচ্ছি গাড়িতে করে। আমরা আপাতত সেখানেই উঠব।
বিকেল ৪টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি পরিবারকে উদ্ধার কাজে সহায়তা করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা। এছাড়াও বানভাসি মানুষদের মাঝে রান্না করা খাবারও বিতরণ করতে দেখা গেছে তাদের।
কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি পারভেজ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা এখানে বানভাসি মানুষের সহায়তায় এসেছি। গোমতী নদীকে শেষ করে দিয়েছে দানব এমপি বাহার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ভূমি খেকো সেসব দানবের কারণে এ নদী আজ হুমকির মুখে। আমি সারা কুমিল্লার মানুষকে অনুরোধ করব বানভাসি মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য।
অপরদিকে পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য সদর উপজেলায় তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে একশর মতো পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া আশপাশের উঁচু অঞ্চলের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় এবং মাদরাসাগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্রশাসন থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে পানিবন্দি পরিবারের অনেকে নিকটাত্মীয়ের বাসার দিকে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমেন রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি। বানভাসি মানুষের খাদ্য সহায়তা চলমান রয়েছে।
এছাড়াও কাকড়ি নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার চৌদ্দগ্রামে অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১০-১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। তাছাড়া সালদা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ ওয়ালিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানি নদীর বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গোমতীর বাঁধ অক্ষত আছে। আশা করছি বাঁধে তেমন সমস্যা হবে না। গোমতীর গহ্বরে অবৈধভাবে বসতি গড়া পরিবারগুলোই আক্রান্ত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসসহ আমাদের বেশ কয়েকটি টিম নদীর তীরে অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত আছে। প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমানকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
আরিফ আজগর/আরএআর