কল রেকর্ড ফাঁস ও ইন্টারনেট বন্ধের নেপথ্যে জিয়াউল আহসান

কল রেকর্ড ফাঁস ও ইন্টারনেট বন্ধের নেপথ্যে জিয়াউল আহসান

কল রেকর্ড ফাঁস করে তা ভাইরাল করে দেওয়া ও ছাত্র আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের নেপথ্যে ছিলেন আলোচিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

কল রেকর্ড ফাঁস করে তা ভাইরাল করে দেওয়া ও ছাত্র আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের নেপথ্যে ছিলেন আলোচিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া জিয়াউল আহসান ২০২২ সাল থেকে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এনটিএমসির দায়িত্বে থাকাকালীন একের পর এক কল রেকর্ড ফাঁস করেন তিনি। রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য হুমকি এমন সব ব্যক্তির স্পর্শকাতর কল রেকর্ড জিয়াউল আহসানের নির্দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্মে ছড়িয়ে দেওয়া হতো।

সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউল আহসান এনটিএমসির দায়িত্বে থাকাকালীন সংস্থাটির আড়িপাতার সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়। এই সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে জিয়াউলের নির্দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মোবাইল ফোনের আড়িপাতা হতো। এরপর ওইসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কল রেকর্ড সংগ্রহ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হতো। এসব কল রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে অনেক সুশীল সমাজের লোকজনকে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হতো।

আরও জানা যায়, এনটিএমসি মোবাইল ফোনের ভয়েস ও এসএমএস, ল্যান্ডফোন ভয়েস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আড়ি পাততে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে ফেসবুক, টুইটার (বর্তমানে এক্স), টেলিগ্রাম, ভাইবার, ইমো, স্কাইপি অ্যাপেও আড়ি পাততে পারে এনটিএমসি। অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে ওয়েবসাইট ব্লগ, ই-মেইলেও শতভাগ আড়িপাতার সক্ষমতা রয়েছে সংস্থাটির।  এসব সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দিনের পর দিন অন্যায়ভাবে মানুষের কল রেকর্ড ফাঁস করা হয়েছে।

জিয়াউল আহসানের নির্দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যতবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছিল তা জিয়াউল আহসানের নির্দেশে বন্ধ করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলার সময় গত ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায় জিয়াউল আহসানের নির্দেশে। টানা পাঁচদিন সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা বন্ধ ছিল ১৩ দিন।

সূত্র জানায়, ১৭ জুলাই থেকে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনাগুলো মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সংস্থা এনটিএমসি থেকেই আসতে থাকে। এছাড়া জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অসংখ্য ব্যক্তিকে গুম করার অভিযোগও রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দিন ৬ আগস্ট জিয়াউল আহসানকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালকও ছিলেন।

নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মহা. আশরাফুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা দোকান কর্মচারী হত্যা মামলায় (৮ নম্বর মামলা) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এমএসি/এমএসএ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *