‘এটা গোল হবে কখনও ভাবিনি’

‘এটা গোল হবে কখনও ভাবিনি’

বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা। সদ্য সমাপ্ত নারী সাফে তিনি টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার হয়েছেন। গতকাল দেশে ফিরে সাফ, নারী ফুটবল ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়েরের সঙ্গে।

বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা। সদ্য সমাপ্ত নারী সাফে তিনি টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার হয়েছেন। গতকাল দেশে ফিরে সাফ, নারী ফুটবল ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়েরের সঙ্গে।

দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা। ভাবতে কেমন লাগছে?

ঋতুপর্ণা : আসলে সত্যিকার অর্থে আমি ভাবিনি দক্ষিণ এশিয়ার সেরা খেলোয়াড় হব। এটা একটা স্বপ্নের মতো। সব কিছু মিলিয়ে ভালো লাগছে। 

ফরোয়ার্ড লাইনে সাবিনা-তহুরা, গোলরক্ষক রুপ্না, ডিফেন্ডার মাসুরা ও মিডফিল্ডার মারিয়া প্রায় সময় আলোচনায় আসেন। আপনি থাকেন অনেকটা পর্দার আড়ালে। এবার হঠাৎ করে টুর্নামেন্ট সেরা হয়ে বেশ আলোচনায়…

ঋতুপর্ণা : আমি যে পজিশনে খেলি সেখানে মূলত গোল বানিয়ে দেওয়াটাই আসল কাজ। আমি সেটাই করি। ব্যক্তিগতভাবে আলোচনায় না থাকতে পারলেই আমি খুশি। চেষ্টা করি যত কম আলোচনায় আসা যায়। এবার স্বীকৃতি পেলাম, আপনারা আলোচনা করছেন। এত দূর আসতে পেরেছি আপনাদের আশীর্বাদে। 

গোল করতে নাকি করাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

ঋতুপর্ণা : গোল করতে কে না পছন্দ করে! গোল করতে অবশ্যই ভালো লাগে। তবে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য পাই গোল করাতে (অ্যাসিস্ট)।

আপনার গোলই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আবার সেরার ট্রফি পেয়েছে। ফাইনালে যে পজিশন থেকে গোল করেছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন গোল খুব কমই-

ঋতুপর্ণা : ওই পজিশন থেকে শট করার দরকার ছিল, করেছি। আসলে এটা গোল হবে কখনও ভাবিনি।

আপনার গোল নিয়ে সব জায়গায় আলোচনা ও মুগ্ধতার রেশ। বন্ধু মহলে কেমন সাড়া ফেলেছে?

ঋতুপর্ণা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বন্ধুরা গোলের জন্য অনেক অভিনন্দন জানিয়েছে। দর্শন বিভাগের অনেকেই গোলটি নিয়ে মুগ্ধ। এতে আমি গর্বিত।

গতি, স্কিল, বল নিয়ন্ত্রণ ও শুটিং– সবমিলিয়ে আপনাকে পরিপূর্ণ ফুটবলার হিসেবে গণ্য করা হয়। আপনার দৃষ্টিতে আপনার বিশেষত্ব কোনটি?

ঋতুপর্ণা : অনেকেই বলে আমার দূর থেকে শট নেওয়া ভালো। তবে সত্যিকার অর্থে আমার নিজের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। মনে হয় এখনও অনেক ভুল হয়, শেখার বাকি।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। খেলা ও পড়াশোনা একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টকর…

ঋতুপর্ণা : অবশ্যই অনেক কষ্টের। প্রতিদিন সকালে কঠিন অনুশীলন থাকে। সেই অনুশীলনের পর রিকভারি করতে হয়। ফলে আমার পক্ষে নিয়মিত ক্লাস করা সম্ভব হয় না। আমার বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকদের সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।

আপনি কিছুদিন আগে ভুটানের লিগ খেললেন। দেশের বাইরে আরও খেলতে চান কি না?

ঋতুপর্ণা : অবশ্যই আমি আরও বেশি দেশের বাইরের লিগ খেলতে চাই। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব হয়, আবার আমার বাড়তি অভিজ্ঞতাও অর্জন হয়। 

নেপালের ফরোয়ার্ড সাবিত্রা ভান্ডারী ফ্রান্স লিগে খেলেন। নেপালের ফুটবলার খেলছে, বাংলাদেশের কারও ইউরোপে খেলা কি অসম্ভব?

ঋতুপর্ণা : সাবিত্রা আমার আইকন। তার খেলা আমার খুব ভালো লাগে। সে দক্ষিণ এশিয়ার কিংবদন্তি। আমারও ইচ্ছে আছে ইউরোপে খেলার। সুযোগ পেলে আমিও একদিন ইউরোপের লিগে খেলব।

রাঙামাটির চাকমা পরিবারে বেড়ে উঠে এক নারী দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। এই পথ নিশ্চয়ই অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল!

ঋতুপর্ণা : অবশ্যই অনেক চ্যালেঞ্জিং। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা নয়, এটা শিখতে হয়েছে। বাংলা অনেক উচ্চারণ এখনও পুরোপুরি ভালো পারি না। আমাদের আদিবাসীদের (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) জন্য জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অনেক কঠিন। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় দেশকে সাফল্য এনে দিতে পেরেছি। 

রাঙামাটি থেকে আপনারা ফুটবলে আসলেন কীভাবে?

ঋতুপর্ণা : সেটা অনেক বড় গল্প। আজ ক্লান্ত, আরেকদিন বলব। আমার কাকা বিয়াশন চাকমার পাশাপাশি যার মাধ্যমে ফুটবলে লাথি দেওয়া শিখেছি তিনি শান্তমনি চাকমা। আমি, রুপ্না ও মনিকা আমাদের তিনজনের বাড়ি কাছাকাছি। আমরা তিন জনই তাদের কাছ থেকে শিখছি। বঙ্গমাতা ফুটবল নিয়ে আমার প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের যাত্রা শুরু। এরপর বিকেএসপি ও বাফুফে ক্যাম্প হয়ে এখন এই পর্যায়ে।

আপনার বাবা নেই, ছোট ভাই হারালেন দুই বছর আগে। পারিবারিক চাপ কাটিয়ে মাঠে মনোযোগ রাখা বেশ কঠিন…

ঋতুপর্ণা : আমাদের নারী দল আরেকটা পরিবার। এখানে সবাই সবার বন্ধু। না হলে আমার পক্ষে শোক কাটিয়ে ফুটবল খেলা কঠিনই ছিল।

আপনি জাতীয় দলে এখন সিনিয়র খেলোয়াড়ের কাতারেই পড়েন। যদিও বয়স মাত্র বিশ পেরিয়েছে। ক্যারিয়ার কোথায় শেষ করতে চান?

ঋতুপর্ণা : আমি আরও অনেকদিন জাতীয় দলে খেলতে চাই। নিজে আরও বেশি গোলের পাশাপাশি আরও গোল করাতে চাই। বাংলাদেশ ফুটবল দলকে আরও বেশি সাফল্য এনে দিতে চাই।

এবার কোচ ও সিনিয়র-জুনিয়র বির্তকের মধ্যেই শিরোপা জিতলেন…

ঋতুপর্ণা : সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যে অত্যন্ত সুন্দর সম্পর্ক। বাইরে যে আলোচনা এটা সঠিক নয়।

আপনাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নয়– বিষয়টি এমন নয়। কোচ দলের সিনিয়রদের অগ্রাহ্য করেন, সেটাই তো দ্বন্দ্বের বিষয়!

ঋতুপর্ণা : প্রতি কোচেরই আলাদা চিন্তা ও নীতি থাকে। টুর্নামেন্ট শেষ, এ নিয়ে এখন আর আমি মন্তব্য করতে চাই না।

 বাংলাদেশ নারী ফুটবলে দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়ন। আপনাদের এই দলের পক্ষে কতটুকু যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন?

ঋতুপর্ণা : আমাদের এবার সাফ জিততে অনেক কষ্ট হয়েছে। টুর্নামেন্টের আগে অনুশীলন ম্যাচ খেলতে পারলে আমাদের জন্য সহজ হতো। আমাদের যদি সব দিকে সুযোগ-সুবিধা দেয়, আমরা শুধু সাফ নয়, এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়েও থাকতে পারব।

আপনারা সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে দেশকে টানা দুটি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দিলেন। অথচ বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েও সফল নয়। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনের অনেকের দৃষ্টিতে ‘আপনারাই প্রকৃত তারকা ক্রীড়াবিদ’

ঋতুপর্ণা : এরকম আমরাও শুনি, শুনতে ভালো লাগে। সব খেলার খেলোয়াড়রা দেশের জন্য ভালো কিছু আনার চেষ্টা করে। সবসময় সবাই সফল হন না। সব খেলা ও সব খেলোয়াড়ের প্রতি আমার সমান সম্মান ও ভালোবাসা।

এজেড/এএইচএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *