প্রায় এক মাস ধরে রাজবাড়ী আধুনিকৃত সদর হাসপাতালে র্যাভিস ভ্যাকসিন (জলাতঙ্কের টিকা) সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত রোগীদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে এ ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে।
প্রায় এক মাস ধরে রাজবাড়ী আধুনিকৃত সদর হাসপাতালে র্যাভিস ভ্যাকসিন (জলাতঙ্কের টিকা) সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত রোগীদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে এ ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে।
শুধু জেলা সদর হাসপাতালেই নয় জেলার সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ। ফলে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
জেলা শহরসহ উপজেলা শহরগুলোতে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সী মানুষ কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত এসব রোগীরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভিড় করলেও সেখানে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে র্যাভিস ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই। এতে করে আক্রান্ত রোগীদের বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে। আবার অনেকের পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
গতকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজবাড়ী আধুনিকৃত সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগীরা জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে আসছেন। কিন্তু হাসপাতালে ভ্যাকসিন না থাকায় অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে বাইরে ওষুধের দোকান থেকে কিনে নিয়ে আসছেন। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে দ্বিতীয় তলায় ২০৩ নম্বর কক্ষে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেওয়ার কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই কক্ষের দরজায় বেশ লেখা রয়েছে ‘গত ১৩ অক্টোবর থেকে বিড়াল, কুকুড়ের ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই’।
টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নার্স রওশন আরা বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১০০ রোগী জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে আসে। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। হাসপাতালে সাপ্লাই না থাকায় সবাই বাইরে থেকে ক্রয় করে আমাদের এখানে ভ্যাকসিন নিয়ে যাচ্ছে। এরপর আমরা রোগীদের ভ্যাকসিন প্রদান করি। বাইরে এই ভ্যাকাসিন ৫০০ টাকা করে বিক্রি হয়। একটা ভ্যাকসিন গ্রুপ করে ৪ জনের নিতে হয়।
রাজবাড়ী মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন শেখ বলেন, গত পরশু দিন আমাকে বিড়ালে কামড় দিয়েছে। আমি সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসককে দেখালে তিনি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দ্বিতীয় তলায় ২০৩ নম্বর কক্ষ ভ্যাকসিন নিতে গেলে তারা বলেন ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই। বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। পরে ৪ জন গ্রুপ করে বাইরে থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন ও ৪০ টাকা দিয়ে ৪টি সিরিঞ্জ কিনে এনে তাদের থেকে ভ্যাকসিন নিয়ে নেই।
দাদশী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা মৌসুমি খাতুন বলেন, বিড়াল কামড় দেওয়ায় ভ্যাকসিন নিতে গত ৫/৬ দিন আগে সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই।পরবর্তীতে তারা বলেন চার জন গ্রুপ করে বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসেন। পরে আমি ফিরে চলে আসি।
গত রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে গোয়ালন্দের বাসিন্দা রতন কুমার রায়কে শিয়ালে কামড় দেই। তিনি চিকিৎসার জন গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে গেলে চিকিৎসক তাকে ভ্যাকসিন নিতে বলেন। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় তাকে চড়া দামে বাইরে থেকে কিনে ভ্যাকসিন নিতে হয়েছে।
পাংশা উপজেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নুসরাত জাহান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের এখানে জলাতঙ্কের টিকা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। রোগী এলে আমরা তাদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেই। যদি কোনো রোগীর আর্থিক অবস্থা ভালো থাকে তবে তাদের বাইরের ফার্মেসী থেকে টিকা কেনার পরামর্শ দেই। টিকা কিনে আনার পর আমাদের হাসপাতাল থেকে টিকা দিয়ে দেওয়া হয়।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শেখ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সাপ্লাই না থাকায় সাময়িকভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম টিটন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই বেশ কিছুদিন যাবৎ। আমরা ঢাকায় চাহিদা জানিয়েছি। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে চলে আসবে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরকে