ইলিশের ডিমে অর্থনীতির অপার সম্ভাবনা

ইলিশের ডিমে অর্থনীতির অপার সম্ভাবনা

আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ। মাছের রাজা ইলিশের স্বাদে সবাই মুগ্ধ। বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক এই মাছ, সেইসঙ্গে স্বাদে, গন্ধে ও বর্ণে লোভনীয়। বাংলা নববর্ষ উদযাপন থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎসবে ও অতিথি আপ্যায়নে ইলিশ মাছ যেন অপরিহার্য একটি খাবার। ইলিশ নিয়ে ভোজনপ্রেমী বাঙালির আগ্রহের শেষ নেই। আর সেই আগ্রহ দিন দিন বাড়ছেই। এর স্বাদ ও গন্ধ ক্ষুধা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ খাওয়ার প্রতি সবারই কমবেশি আগ্রহ থাকে। ইলিশের ডিম দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। এর পাশাপাশি ইলিশের ডিমে রয়েছে অর্থনীতিতে নতুন সোনালি সম্ভাবনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ। মাছের রাজা ইলিশের স্বাদে সবাই মুগ্ধ। বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক এই মাছ, সেইসঙ্গে স্বাদে, গন্ধে ও বর্ণে লোভনীয়। বাংলা নববর্ষ উদযাপন থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎসবে ও অতিথি আপ্যায়নে ইলিশ মাছ যেন অপরিহার্য একটি খাবার। ইলিশ নিয়ে ভোজনপ্রেমী বাঙালির আগ্রহের শেষ নেই। আর সেই আগ্রহ দিন দিন বাড়ছেই। এর স্বাদ ও গন্ধ ক্ষুধা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ খাওয়ার প্রতি সবারই কমবেশি আগ্রহ থাকে। ইলিশের ডিম দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। এর পাশাপাশি ইলিশের ডিমে রয়েছে অর্থনীতিতে নতুন সোনালি সম্ভাবনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইলিশের শহর চাঁদপুর। প্রতি মৌসুমে চাঁদপুর মাছঘাটে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়। এসব ইলিশ আসে সাগর মোহনা অঞ্চল থেকে। তা ছাড়া চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায়ও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘাটে চলে ইলিশের কারবার। প্রতিটি আড়তের সামনে ইলিশের বড় বড় স্তূপ তৈরি করা হয়। পাশেই বরফ ভেঙে প্যাকেটজাত করা হয় ইলিশ। বরফ ও মাছের চাপ এবং পরিবহনের সময় কিছু ইলিশ নরম হয়ে যায়। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এসব ইলিশ অল্প দামে কিনে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করেন। ইলিশের ডিমও সংরক্ষণ করেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, আড়তগুলোর কর্মচারীরা নরম ইলিশ কেটে লবণ দিয়ে নোনা ইলিশ তৈরি করছেন। মাছের ডিমগুলো আলাদা করে প্লাস্টিকের বক্সে করে সংরক্ষণ করছেন। আর মাছগুলো সারিবদ্ধভাবে স্তূপ করে রাখছেন। তবে ডিমের দাম চড়া হওয়ায় ক্রেতাদের খালি হাতেই ফিরে যেতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের নোনা ইলিশের পাশাপাশি ইলিশের ডিমের চাহিদা রয়েছে দেশ- বিদেশ। দেশের উত্তরবঙ্গে নোনা ইলিশ বিক্রয় করা হয়। নরম ইলিশের ডিম প্লাস্টিকের বক্সে করে সংরক্ষণ করা হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে চাঁদপুরের ইলিশের ডিম অনলাইনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। চাঁদপুর থেকে এসব ডিম ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। তারপর ভারত, সৌদি আরব, দুবাই—মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে রফতানি করেন তারা। চাঁদপুরে প্রায় ৩০টি আড়ত নোনা ইলিশের পাশাপাশি ইলিশের ডিম সংরক্ষণ করে থাকে। মৌসুমে প্রতিটি আড়তে  ৩০ টন লোনা ইলিশ সংগ্রহ করার হয়। প্রতি মণ ইলিশে ৪-৫ কেজি ডিম পাওয়া যায়। তবে এবার ঘাটে কম মাছ আসায় আগের তুলনায় কম লোনা ইলিশ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ইলিশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সচেতনভাবে ইলিশের ডিম সংরক্ষণ করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন সোনালি সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিম ক্রয় করতে আসা আব্দুর রহমান নামে একজন বলেন, আগের তুলনায় ইলিশে ডিমের দাম অনেক বেশি । তাই ডিম না কিনে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।

লোনা ইলিশের আড়তদার জমির শেখ বলেন, আমরা প্রথমে মাছ থেকে ডিমগুলো আলাদা করে। পরে অনেকে এখান থেকে ডিম কিনে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছ থেকে ডিম কিনে মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করে ।

আরেক বিক্রেতা ইয়াহিয়া তালুকদার বলেন, প্রতি মণ ইলিশে চার-পাঁচ কেজি ডিম পাওয়া যায়। আমরা তিন থেকে চার টন ইলিশ লোনা করে থাকি। লোনা ইলিশগুলো চৈত্র-বৈশাখ মাসে উত্তরাঞ্চালে বিক্রয় করে থাকি।

আড়তদার আবুল মিয়া বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে ডিম বিক্রয় করি। তারা বিদেশে রপ্তানি করে। অনেকে এখান থেকে খাওয়ার জন্য কিনে নিয়ে যায়। ডিমের আকার দুটি সাইজ হয়ে থাকে। ছোট সাইজের কেজি ২৫শ টাকা, বড় সাইজের ডিমের কেজি ৩২শ টাকা বিক্রয় করে থাকি। চৈত্র-বৈশাখ মাসে ধান কাটার সময়ে বংপুর, দিনাজপুর, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লোনা ইলিশ করা হয়। ইলিশের ডিমের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির সোনালি সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ডিমগুলো বিদেশে রপ্তানি হয়। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

আড়তদার আক্তার হোসেন বলেন, আমরা তাজা ইলিশ মণ হিসেবে ক্রয় করি। তারপর ইলিশগুলো কাটলে ডিম বের হয়। এই ডিম কেজি হিসেবে পাইকারি বিক্রয় করি। আগে পাইকারি দামে ২৪শ টাকা কেজি ছিল, এরপর ২৭শ টাকা দরে বিক্রয় করেছি। আগে এক মণ ইলিশ কিনেছি ২২ হাজার টাকায়। এখন ২৬ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। একই রকমের মাছ গত বছর কিনেছি ১৭ হাজার টাকায়। তখন ডিমের কেজি ছিল ২২শ টাকা। এখন নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। যার কারণে মাছের দাম বেশি। বিভিন্ন কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে ডিম কিনে নেন। তারা সৌদি আরব, দুবাইসহ মধ্যপাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে রফতানি করেন। এ ছাড়া কাটা ইলিশগুলো লবণ দিয়ে ছয় মাস সংরক্ষণ করে রেখে দিই। তারপর এপ্রিল মাসে এগুলো বিক্রয় শুরু করি।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, ইলিশের ডিমের অনেক চাহিদা রয়েছে। ডিম যদি সঠিকভাবে রপ্তানি হয়। তাহলে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে যাবে। তবে গত দুই বছর ধরে ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এ কারণে আমরা হতাশ। ইলিশ ও ডিম দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। কিন্তু আমাদের এখানে সেই পরিমাণ মাছ নেই। গত তিন বছর আগে যে পরিমাণ ইলিশ ঘাটে পাওয়া যেত সেই পরিমাণ ইলিশ এখন পেলে মাছ এবং ডিম দিয়ে দেশ অনেক এগিয়ে যেতো। দেশ-বিদেশে ইলিশের ডিমের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশে ইলিশ নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন মা ইলিশ রক্ষার অভিযান যাচাই-বাছাই করে দেয়। তাহলে অর্থনীতিতে ব্যাপকহারে উন্নতি লাভ করবে।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মামুন উল হক বলেন, ইলিশ দেশের প্রধান অর্থকড়ি মাছ। এই প্রজাতিটি আমাদের দেশে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এর মধ্যে মিঠাপানিতে আসা ইলিশ সংরক্ষণ করতে না পারলে ইলিশের সম্ভাবনা ব্যাহত হবে পারে। কারণ এ জাতীয় ইলিশ রপ্তানি করেই দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াবে।

তিনি আরও বলেন, ইলিশের ডিমকে ঘিরে যেই বাজারটি তৈরি হচ্ছে , তাকে সাধুবাদ দেওয়া যায়। আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, মিঠা পানিতে আসা ইলিশের ডিম সংরক্ষণ করতে উৎসাহী করা যাবে না। এতে ইলিশ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বাড়ানো ব্যাহত হতে পারে। এক্ষেত্রে যেসব ইলিশ সাগরে ডিম পাড়ে। ওইসব ইলিশের ডিম সংরক্ষণ করলে প্রকৃত উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করবে না। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত উপায়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি শুধু ডিম আহরণ করলেই হবে না। ডিম সংরক্ষণ এবং স্বাস্থ্যসম্মত বাজারজাত করতে হবে। সঠিকভাবে ডিম সংগ্রহ করলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

চাঁদপুর নদীকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু কাউচার দিদার বলেন, ইলিশের চাহিদা সবসময় সবারই থাকে। এর পাশাপাশি ডিমের চাহিদাও আছে। আমাদের গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে ২২ দিন মা ইলিশ, (মার্চ-এপ্রিল) এই দুই মাস এবং সাগরের ৬৫ দিন জাটকা ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকে। এ ছাড়াও সাড়ে ৬ সেমি জালের দৈর্ঘ্যের পাস ব্যবহার করে যদি ইলিশ আহরণ করা হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে ইলিশের ম্যনেজম্যানটা ঠিক থাকবে। আহরণ বন্ধের পরবর্তী সময়ে সংরক্ষিত ইলিশের ডিমের সংগ্রহ অর্থনীতিতে বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে। ইলিশের চাহিদা দেশে-বিদেশেও রয়েছে। তাই এর মাধ্যমে অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনা সম্ভব।

ইলিশ গবেষক ও মৎস্য বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, সঠিকভাবে ডিম সংরক্ষণ করতে হবে। যারা ডিম সংগ্রহে নিয়োজিত থাকবে তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।

এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *