কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ইউপি চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টুকে (৬০) হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নিহতের অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ইউপি চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টুকে (৬০) হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নিহতের অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নইমুদ্দিন সেন্টুকে তার নিজ অফিস কক্ষে গুলি করে হত্যার পর প্রতিপক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যান অনুসারী ও স্থানীয়রা অভিযুক্ত কয়েকজনের ৭টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
হত্যার অভিযুক্তরা হলেন- ফিলিপনগর স্কুল বাজার এলাকার মহির উদ্দীনের ছেলে তরিকুল ইসলাম টুকু, সামসের মণ্ডলের ছেলে সোহাগ গিট্টু, আলতাফ মেলেটারির ছেলে রওশন ও রাসেল, রাসেলের ছেলে হাবিবুর ও হাসিনুর, সিদ্দিকের ছেলে সোহাগ, রহম মালিথার ছেলে নাজমুল, হাফিজুলের ছেলে রাখি, রুবেল, উজ্জ্বল, হবি, জামিল। তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
নিহতের পরিবার ও স্বজনরা বলেন, টুকু ও তার বাহিনীর লোকজন সেন্টু চেয়ারম্যানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদে সচিব রাশিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেন্টু চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে বসে কাজ করছিলেন। প্রথমে জানালা দিয়ে তাকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। এরপর কক্ষে ঢুকে আবারও গুলি করে দুর্বৃত্তরা।
জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তরিকুল ইসলাম টুকুর নেতৃত্বে রুবেল, সোহাগ গিট্টু, রওশন, রাসেল, সোহাগসহ কয়েকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। হত্যার ঘটনার পর অভিযুক্তদের কয়েকটি ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন নিহত চেয়ারম্যানের লোকজন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আনেন।
নিহত নইমুদ্দিন সেন্টু আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একসময় উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতিও ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। দুইবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার ভালো সখ্যতা ছিল।
দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা বলেন, চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন একসময় উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি নিরপেক্ষ ছিলেন। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
এদিকে হত্যার অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম টুকু ফিলিপনগর স্কুল বাজার এলাকার মহির উদ্দীনের ছেলে। সে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ৫ আগস্টের পর থেকে টুকু ও তার বাহিনীর রুবেল, সোহাগ গিট্টু, রওশন, রাখি, নাজমুল, রাসেল, সোহাগ, উজ্জ্বল, হবি, জামিল বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শুরু করেন হাট-ঘাট দখল, লুটপাট, চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষের লোকজনকে হামলা, হুমকিসহ নানা অপরাধ। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন অনেকেই। চেয়ারম্যান এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলায় তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এ ঘটনার জেরে এই হত্যাকাণ্ড। হত্যার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হতে পারে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
এ বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, চেয়ারম্যান নিজ কক্ষের চেয়ারেই বসে ছিলেন। তাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
রাজু আহমেদ/এমএ