ইউনুস আ. মাছের পেটে যেভাবে ৪০ দিন কাটিয়েছিলেন

ইউনুস আ. মাছের পেটে যেভাবে ৪০ দিন কাটিয়েছিলেন

মাওসিল অঞ্চলের নিনোভা নামক জায়গার অধিবাসীদের জন্য হজরত ইউনুস আ.-কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন আল্লাহ তায়ালা। তিনি তাদেরকে আল্লাহর পথে চলার আহ্বান করেন। কিন্তু তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং নিজেদের অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকে।

মাওসিল অঞ্চলের নিনোভা নামক জায়গার অধিবাসীদের জন্য হজরত ইউনুস আ.-কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন আল্লাহ তায়ালা। তিনি তাদেরকে আল্লাহর পথে চলার আহ্বান করেন। কিন্তু তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং নিজেদের অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকে।

তারা নবীর কথা না মেলে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকার ফলে নবী তাদের জনপদ থেকে বের হয়ে যান এবং তাদের ওপর তিনদিন পর আজাব নাজিল হবে বলে সতর্ক করে দেন।

ইউনুস আ. জনপদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তার উম্মতের লোকজন নিজেদের অবাধ্যতার বিষয়টি অনুভব করলেন এবং বুঝতে পারলেন যে, আল্লাহর আজাব অত্যাসন্ন। তখন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে তওবা করলেন এবং নবীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণে নিজেরা লজ্জিত হলেন। তারা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তওবার করলেন। 

তাদের তওবার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মাফ করে দিলেন। যে আজাব অত্যাসন্ন ছিল তা থেকে মুক্তি দিলেন।

এদিকে ইউসুফ আ. জনপদ থেকে বের হয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলেন। এবং অনেকের সঙ্গে নৌকায় চড়লেন। নৌকাটি যাত্রীদের নিয়ে কিছুদূর যাবার পর উত্তাল তরঙ্গের মধ্যে পরে ঘুরপাক খেতে লাগলো।

নৌকাটি ডুবুডুবু অবস্থায় যাওয়ার পর নাবিক ও যাত্রীরা বুঝতে পারলেন এখানে এমন কোনো যাত্রী আছেন, যিনি তার মনিবের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও চলে যাচ্ছেন, তার কারণে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে।

তখন তারা সবাইকে বাঁচানোর জন্য সিন্ধান্ত নিলেন, লটারী করা হবে, এতে যার নাম উঠে আসবে তাকে নৌকা থেকে ফেলে দেওয়া হবে। লটারীতে ইউনুস আ.-এর নাম উঠে এলো। পরপর কয়েকবারের লটারীতে তার নাম উঠে এলো। এরপর তাকে নদীতে ফেলে দেওয়া হলো। তাৎক্ষণিক একটি বিশাল মাছ তাকে গিলে ফেললো।

মাছটি হজরত ইউনুস আ.-কে গিলে ফেললেও আল্লাহর হুকুমে তাকে পেটের ভেতর অক্ষত রাখলো, তার অস্থি, মাংস কোনো কিছু না খেয়ে তাকে সেভাবেই রেখে দিলো এবং তাকে নিয়ে সাগরে ঘুরাফেরা করতে লাগলো।

তিনি এভাবে কতদিন মাছের পেটের ভেতর ছিলেন তা নিয়ে মুফাসসিরদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, সকালে গিলে বিকালে তাকে পেট থেকে বের করে দিয়েছে মাছটি। কারো মতে তিন দিন মাছের পেটে ছিলেন ইউনুস আ.। কারো মতে সাতদিন ছিলেন। আবার কেউ বলেছেন ৪০ দিন মাছের পেটে ছিলেন ইউনুস আ.।

ইউনুস আ. যখন মাছের পেটে ছিলেন, তখন তিনি আল্লাহ তায়ালাকে উদ্দেশ্য করে মৎস্যকুলের তাসবিহ শুনতে পেলেন। এমনকি সাত আসমান-জমিন ও মাটির নিচে যা কিছু রয়েছে তাদের তাসবিহও শুনতে পেলেন।

ইউনুস আ.ও আল্লাহ তায়ালার তাসবিহ পড়লেন এবং এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। তার তাসবিহের আওয়াজ শুনতে পেলেন ফেরেশতারা। তারা আল্লাহ তায়ালাকে বললেন,

হে আমাদের প্রতিপালক ! আমরা এই জনমানবহীন স্থানে একটি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা তাদের জানালেন, এটি আমার বান্দা ইউনুসের তাসবিহের আওয়াজ। তাকে আমি মাছের পেটে আটকে রেখেছি। এ কথা শুনে ফেরেশতারা ইউনুস আ.-এর জন্য আল্লাহ তায়ালা কাছে সুপারিশ করলেন। তাদের সুপারিশ মঞ্জুর করে আল্লাহ তায়ালা মাছকে নির্দেশ দিলেন নবী ইউনুস আ.-কে সমুদ্রের কিনারায় রেখে যেতে। আল্লাহর নির্দেশ মেনে মাছ ইউনুস আ.-কে সমুদ্রের কিনারায় ফেলে রেখে গেল।

এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত  হয়েছে এভাবে—

وَ ذَاالنُّوۡنِ اِذۡ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ اَنۡ لَّنۡ نَّقۡدِرَ عَلَیۡهِ فَنَادٰی فِی الظُّلُمٰتِ اَنۡ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَكَ ٭ۖ اِنِّیۡ كُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿ۚۖ۸۷﴾ فَاسۡتَجَبۡنَا لَهٗ ۙ وَ نَجَّیۡنٰهُ مِنَ الۡغَمِّ ؕ وَ كَذٰلِكَ نُــۨۡجِی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۸۸﴾

আর স্মরণ কর যুন-নূন এর কথা, যখন সে ক্রোধভরে বের হয়ে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করবনা; অতঃপর সে অন্ধকার হতে আহবান করেছিলঃ আপনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই; আপনি পবিত্র, মহান; আমিতো সীমালংঘনকারী। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম দুশ্চিন্তা হতে এবং এভাবেই আমি মু’মিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৭-৮৮)

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *