‘আনসাং উইমেন’ সম্মাননা পেলেন পাঁচ নারী

‘আনসাং উইমেন’ সম্মাননা পেলেন পাঁচ নারী

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আসামান্য অবদান রাখার জন্য ‘আনসাং উইমেন ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ডস’ সম্মাননা পেয়েছেন ৫ নারী। সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা পালনকারী দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা সংগ্রামী নারীদের সম্মাননায় এই অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং দ্য ডেইলি স্টার।

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আসামান্য অবদান রাখার জন্য ‘আনসাং উইমেন ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ডস’ সম্মাননা পেয়েছেন ৫ নারী। সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা পালনকারী দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা সংগ্রামী নারীদের সম্মাননায় এই অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং দ্য ডেইলি স্টার।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাদের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রিজওয়ান দাউদ সামস এবং দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।

২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর এমন সংগ্রামী নারীদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখার জন্য ‘আনসাং উইমেন ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ডস’ প্রদান করে আসছে আইপিডিসি ও ডেইলি স্টার। এ পর্যন্ত ৪২ জন নারী এই স্বীকৃতি পেয়েছেন।

অ্যাওয়ার্ডসের ৭ম আসরে সম্মাননা পাওয়া পাঁচ নারী হচ্ছেন— রাজশাহীর মোছা. সুরাইয়া ফারহানা রেশমা, যশোরের নাসিমা আক্তার, কক্সবাজারের টিটু পাল, সাতক্ষীরার আলপনা রানী মিস্ত্রি ও হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং।

সম্মাননা পাওয়া পাঁচ নারীর বিষয়

রাজশাহীর মোছা. সুরাইয়া ফারহানা রেশমা ২০১৪ সালে মাছ চাষ ও সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন এবং ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েই শুরু করেন গবাদি পশু পালন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৬ সালে তিনি ভার্মিকম্পোস্টিং ও ট্রাইকো-কম্পোস্ট উৎপাদনে যোগ দেন এবং পরে মুরগি ও সবজি চাষও শুরু করেন। পেয়েছেন ন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২২, রাজশাহী বিভাগের জয়িতা অ্যাওয়ার্ড এবং চ্যানেল-আই অ্যাওয়ার্ড-২২ সহ অনেক পুরস্কার। তিনি বর্তমানে তার খামারে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে অন্যান্য নারীদেরও সাহায্য করে চলেছেন। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী।

পরিবেশ রক্ষায় অদম্য অগ্রনায়ক যশোরের নাসিমা আক্তার কাগজ থেকে পরিবেশবান্ধব কলম তৈরি করে প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর একটি নতুন উপায় উদ্ভাবন করেছেন। দারিদ্র্য এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া সত্ত্বেও নাসিমা ২০০৭ সালে তার উদ্যোগ শুরু করেন এবং তার ছেলের নামে কলমের নাম রাখেন ‘শুভ ইকো-ফ্রেন্ডলি পেন’। প্রাথমিকভাবে তার পণ্য বাজারজাত করতে দ্বিধায় থাকলেও ২০১৭ সালে তিনি সেগুলি ব্যাপকভাবে বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় দোকানে প্রায় ৬ হাজার কলম তৈরি ও বিক্রি করেন। এই বায়োডিগ্রেডেবল কলমগুলি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় প্রশংসিত হয়েছে এবং ছাত্র ও পরিবেশবাদীরা তাদের দ্বৈত কার্যকারিতার প্রশংসা করেছেন।

নীরব কৃষি বিপ্লবের পথিকৃৎ সাতক্ষীরার শ্যামনগরের আল্পনা রাণী মিস্ত্রী ২০০৫ সাল থেকে বিরল ও বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা স্থানীয় উদ্ভিদ বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। তার বীজ ব্যাংকে ২৫০ জাতের শাকসবজি এবং ঔষধি গাছের বীজ সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি নতুন দেশীয় উদ্ভিদ প্রজাতি যোগ করার জন্য সব সময় কাজ করছেন। আল্পনা রাণী মিস্ত্রী স্থানীয় কৃষকদের সাথে বীজ বিনিময় করেন এবং মহিলা কৃষকদের দেশীয় সবজির বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দেন।  

নতুন পথের কারিগর কক্সবাজারের টিটু পাল বহু বছর ধরে কৃষকদের গবাদি পশু এবং রোগ ব্যবস্থাপনার দিয়ে আসছেন এবং তার এলাকার উচ্চমানের গবাদি পশুর প্রজনন এবং রোগ নির্মূলের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি কৃত্রিমভাবে ৪০০টি গরু ও ছাগলের প্রজনন করেছেন এবং ৭ হাজারের বেশি গরুকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এনেছেন। তার সফলতা তার পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে তার তিন সন্তানের লেখাপড়া এবং তার স্বামীর চিকিৎসার জন্য সহায়তা করছে। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই গবাদি পশু পালনে বিনিয়োগ করেছেন। খেয়াং নারীদের মুক্তির আলো হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং সমাজের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করছেন। তিনি ‘গুঙ্গুর পাড়া উপজাতীয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থা’র বর্তমান উপদেষ্টা। এই সংস্থার মাধ্যমে সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য নতুন ঘর তৈরি, কৃষি কাজের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছেন। হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং এর প্রচেষ্টা অনেক মহিলার জীবন পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

/এমএইচএন/এমএসএ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *