আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর নির্মাণ ও উন্নয়ন করার কথা ভারতীয় ব্যবসায়ী ও এশিয়ার অন্যতম ধনী গৌতম আদানির। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেনিয়ার বিমানবন্দরের কর্মচারী ইউনিয়ন।
আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর নির্মাণ ও উন্নয়ন করার কথা ভারতীয় ব্যবসায়ী ও এশিয়ার অন্যতম ধনী গৌতম আদানির। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেনিয়ার বিমানবন্দরের কর্মচারী ইউনিয়ন।
কেনিয়ার এভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের দাবি, আদানি এয়ারপোর্টস হোল্ডিংসের সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তি বাস্তবায়িত হলে কেনিয়ার বাইরে থেকে কর্মীদের নিয়ে আসা হবে এবং এর ফলে কেনিয়ার অনেকের চাকরি যাবে। তাই তারা সাতদিনের নোটিশ দিয়ে ধর্মঘটে নামছে। সরকারকে এই চুক্তি বাতিল করতে হবে। তারা মনে করে, সরকার জেকেআইএ বিমানবন্দরকে বেআইনিভাবে বেচে দিতে চাইছে।
দেশটির সরকার বলেছে, কেনিয়ার এয়ারপোর্ট বেচে দেওয়া হচ্ছে না। প্রস্তাবিত পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে বিমানবন্দরের উন্নয়নের কাজের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য আদানির কোনও মুখপাত্রকে পাওয়া যায়নি বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
কেনিয়ার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মস এনডিয়েমা বলেছেন, আদানির সঙ্গে চুক্তি পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। তার দাবি, কেনিয়া এয়ারপোর্টস অথরিটির (কেএএ) পুরো বোর্ডকে ইস্তফা দিতে হবে।
কেএএ বলেছে, তারা ধর্মঘটের নোটিশ পেয়েছে। তবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান পাওয়া যাবে বলে তারা আশাবাদী। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আদানি গোষ্ঠীর দ্বিতীয় রানওয়ে বানানো এবং যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য টার্মিনাল উন্নয়ন করার কথা আছে।
সরকারের পক্ষ থেকে গত মাসে আদানির প্রস্তাব নিয়ে বলা হয়, জেকেআইএ বিমানবন্দরের বছরে ৭৫ লাখ যাত্রী ঠিকভাবে যাতায়াত করতে পারেন। কিন্তু এখন যাত্রীসংখ্যা বেড়ে গেছে। তাই এখন পরিকাঠামোর জরুরি ভিত্তিতে উন্নতি দরকার। ওপর থেকে পানি পড়ার মতো ঘটনায় অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
বলা হয়েছে, জেকেআইএর আধুনিকীকরণের জন্য দুইশ কোটি ডলার প্রয়োজন। বর্তমান আর্থিক অবস্থায় যা দেওয়া সরকারের পক্ষে কঠিন। দেশটির সরকার বলেছে, আদানির প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। যদি কোনও চুক্তি করা হয়, তাহলে দেশের স্বার্থ বজায় রেখে তা করা হবে।
গত জুন মাসে সরকারের প্রস্তাবিত কর বাড়ানো নিয়ে কেনিয়ায় তরুণরা আন্দোলনে নেমেছিল। সেসময় আদানির সঙ্গে চুক্তির বিষয়টিও সমালোচিত হয়েছিল। গত মাসে বিক্ষোভকারীরা জেকেআইএতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। তবে পুলিশি বাধার কারণে সেই চেষ্টা পণ্ড হয়ে যায়।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিয়েতনামে দুটি বিমানবন্দরে বিনিয়োগ করা নিয়ে আদানি গোষ্ঠী চিন্তাভাবনা করছে। তারা দেশটির উপকূলীয় শহর ডা নাংয়ে দুইশ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে পারে। ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে গৌতম আদানির সঙ্গে কথাও বলেছেন।
হিন্দু-বিজনেসলাইনের প্রতিবেদন বলছে, কলম্বোসহ শ্রীলঙ্কার তিনটি বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা আদানি গোষ্ঠীকে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো বলেছেন, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিমানবন্দরের উন্নয়নের বিষয়ে কথা চলছে।
আদানি গোষ্ঠীর ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, তারা ভারতে আমেদাবাদ, লখনউ, ম্যাহ্গালুরু, জয়পুর, গুয়াহাটি ও থিরুবনন্তপুরমের বিমানবন্দরের উন্নয়নের কাজ করছে। এছাড়া তাদের কাছে মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিমিটেডের ৭৩ শতাংশ ও নবি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিমিটেডের ৭৪ শতাংশ শেয়ার আছে। এই আটটি বিমানবন্দরের ম্যানেজমেন্ট ও উন্নয়নের দায়িত্ব তাদের হাতে থাকার অর্থ ২৫ শতাংশ যাত্রী ও ৩৩ শতাংশ পণ্য তাদের বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করে।
এসএস