অটোরিকশা ছিনতাইয়ে রাজশাহীতে ১৭ দিনে তিন চালক খুন

অটোরিকশা ছিনতাইয়ে রাজশাহীতে ১৭ দিনে তিন চালক খুন

রাজশাহীতে চলতি মাসের ১৭ দিনে তিনজন চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দামকুড়ার ল’পাড়া ও পবার ভুগরোইল এলাকায় দুজনকে হত্যায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে কাটাখালীতে অটোরিকশা চালক আলম হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

রাজশাহীতে চলতি মাসের ১৭ দিনে তিনজন চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দামকুড়ার ল’পাড়া ও পবার ভুগরোইল এলাকায় দুজনকে হত্যায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে কাটাখালীতে অটোরিকশা চালক আলম হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশের ধারণা, হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে। সব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রাতেই ঘটেছে। পরে রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, রাতে অটোরিকশায় যাত্রী নেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে চালকদের। আর যাত্রী ওঠার পর সন্দেহ হলে দ্রুত পুলিশকে জানাতে হবে।

সর্বশেষ সোমবার (২১ অক্টোবর) পবার ভুগরোইল এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার সিরাজুল ইসলামের (৬৫) মরদেহ কলাইয়ের খেতে চাপা দেওয়া মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। রক্তাক্ত মরদেহে ছিল জখমের চিহ্ন। এর আগে সিরাজুলের থেকে ছিনতাই করা অটোরিকশা বিক্রিকালে জেলার গোদাগাড়ীতে জনতার হাতে আটক হন ফিরোজ আলী (১৯), মো. রাতুল হাসান (১৯) ও মো. শুভ (১৯) নামের তিন যুবক। তাদের বাড়ি রাজশাহী নগরীতে।

পুলিশ জানায়, রোববার (২০ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজশাহীর এয়ারপোর্ট থানার ভুগরইল গ্রামে সিরাজুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। পরের দিন সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সিরাজুলের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি নওগাঁ মহাদেবপুর উপজেলার কাঞ্চন গ্রামের বাসিন্দা।

এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন আকতার জানান, রোববার দিবাগত রাতে তিনজন অটোরিকশা চালক সিরাজুল ইসলামকে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে চলে যায়। সোমবার সকালে গোদাগাড়ীতে গিয়ে তারা অটোরিকশাটি বিক্রির চেষ্টা করে। এসময় তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলে স্থানীয়রা আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। পরে গোদাগাড়ী থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি এয়ারপোর্ট থানা পুলিশকে জানায় গোদাগাড়ী থানা। পরে ওই তিনজনকে নিয়ে তাদের দেখানো স্থান কলাই খেতে মাটিচাপা দিয়ে রাখা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না তা জানতে আটক তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।

গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে নগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালী বাজার সংলগ্ন এলাকায় সড়কের পাশ থেকে অটোরিকশা চালক আলমের (৬৫) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ও পরিবারের ধারণা, আলমের রিকশাটি নেওয়ার জন্য ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, নিহত আলমের মরদেহের গলা ও বুকে ধারালো অস্ত্রের জখম ছিল। রাতে সড়কের পাশে মরদেহটি পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি পুলিশে খবর দেন। নিহতের ঘটনায় থানায় আলমের ছেলে বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর দামকুড়া থানার ল’পাড়া গ্রামে সাজামুল ইসলাম নামের এক রিকশাচালকের মরদেহ পাওয়া যায়। তাকেও খুনের পর রিকশাটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে ৪ অক্টোবর মাসুম আলী (৩৪) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। মাসুম আদালতে জানান, সাজামুলের রিকশা তিনি সিরাজগঞ্জে নিয়ে বিক্রি করেছিলেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো কিন্তু যাত্রীবেশে ঘটেছে। ভুগরাইল এলাকার ঘটনা যদি বলা হয় তাহলে দেখা যাবে হত্যাকারীরা যাত্রী হয়ে অটোরিকশায় উঠে একটা গন্তব্যে যায়। তারপর এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। অল্প দিনের মধ্যে ঘটে যাওয়া তিনটি ঘটনা প্রায় একই। এসব ঘটনায় পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছে।

তিনি আরও বলেন, রাতে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অটোরিকশা চালকদের সচেতন হতে হবে। দূরে বা নির্জন এলাকায় ভাড়া নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে চালকদের। যাত্রীদের আচরণে খারাপ কিছুর আভাস পেলে ৯৯৯ বা আরএমপির হটলাইনে যোগাযোগ করলে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। বিষয়গুলো নিয়ে অটোরিকশার যে সংগঠনগুলো রয়েছে তাদের নেতাদের সঙ্গে সাথে সচেতনতার বিষয়ে বসা হবে।

এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *