খাদ্য সংকটে কুমিল্লার আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুরা

খাদ্য সংকটে কুমিল্লার আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুরা

কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৬৭ হাজার মানুষ। এসব মানুষদের জন্য নানা খাদ্য সহায়তা এলেও খাদ্য সংকটে রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা শিশুরা। শুধুমাত্র শুকনো বিস্কুট, আর কলা একমাত্র ভরসা এসব শিশুদের। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি ক্ষুধার্ত অধিকাংশ শিশু। 

কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৬৭ হাজার মানুষ। এসব মানুষদের জন্য নানা খাদ্য সহায়তা এলেও খাদ্য সংকটে রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা শিশুরা। শুধুমাত্র শুকনো বিস্কুট, আর কলা একমাত্র ভরসা এসব শিশুদের। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি ক্ষুধার্ত অধিকাংশ শিশু। 

রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লার বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। 

জেলার বুড়িচং উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা গেছে, ওই আশ্রয়কেন্দ্রটিতে আশ্রয় নিয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে ১৫ জনের মতো ৫ বছরের নিচের শিশু রয়েছে। এসব শিশুরা সবসময় যে খাবারে অভ্যস্ত তারা এখন সেসব খাবার পাচ্ছে না। 

উপজেলার বাকশীমুল গ্রাম থেকে বানের জলে ডুবে ওই আশ্রয়কেন্দ্রটিতে আশ্রয় নিয়েছেন মো. জসীম উদ্দিন ও জেসমিন আক্তার দম্পতি। তাদের সঙ্গে রয়েছে দুই বছরের ফুটফুটে কন্যা শিশু মরিয়ম আক্তার।  

জসীম উদ্দিন ও জেসমিন আক্তার দম্পতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাস দুয়েক আগে মায়ের দুধ খাওয়া ছাড়ে মরিয়ম। দুই বছরের মরিয়ম ভারী কোনো খাবার খেত না। গরুর দুধ মিশিয়ে নরম ভাত কসলিয়ে দিলে খেত। এছাড়াও বুকের দুধ ছাড়ার পর থেকে গরুর দুধে অভ্যস্ত মরিয়ম। 

গত দুদিন ধরে সেসব খাবারের কিছুই পাচ্ছে না সে। আশ্রয় কেন্দ্রে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে রান্না করা ভাত, তরকারি, বিস্কুট, পাউরুটি, কলা ইত্যাদি খাবার সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। এসব খাবার একেবারেই মুখে নিতে চায় না দুই বছরের এই শিশুটি। 

ফলে ভিটেমাটি ছাড়া হওয়ার পর থেকেই কেমন হয়ে যাচ্ছে মরিয়ম। যেসব সংস্থা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার সহায়তা দিচ্ছে, তাদের  খাবার তালিকায় শিশুদের খাদ্যও রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন এই দম্পতি।  

ভরাসার উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ইছাপুরা এলাকার বানভাসি রুমা আক্তার ও জয়নাল আবেদীন। তাদের কোলে ১৬ মাসের পুত্র সন্তান আব্দুল্লাহ। 

এই দম্পতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আব্দুল্লাহ এখনও মায়ের দুধ খায়। তিনদিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠার পর থেকে বুকের দুধ একেবারেই মুখে নিতে চাচ্ছে না ছেলেটা। আশ্রয়কেন্দ্রে অপরিচিত মানুষ আর মানুষের কোলাহল থাকে সবসময়। মানুষের কারণে যত্ন করে দুধ খাওয়ানোর সঠিক পরিবেশ থাকে না। 

ফলে শিশু আব্দুল্লাহর খাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় মা-বাবা। নিয়মমতো খাবার মুখে না নিলে পুষ্টিহীনতাসহ নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা করে সরকার ও মানবিক সংগঠনগুলোর প্রতি শিশুখাদ্য সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান এই মা-বাবা। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা জেলাজুড়ে ৭১৪টি কেন্দ্রে ১৫ হাজার ৫৯ জন বিভিন্ন বয়সের শিশু আশ্রয় নিয়েছে। এসব শিশুদের মধ্যে যাদের বয়স ৩ বছরের ওপরে তাদের শুকনো বিস্কুট ও কলা খাইয়ে কোনোরকম দিন পার করা গেলেও, যাদের বয়স ১ থেকে তিন বছরের মধ্যে সেসব শিশুদের নিয়ে মহা দুঃশ্চিতায় আছেন তাদের অভিভাবকরা। 

কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবির মাসউদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাভাবিক সময়েও শিশুদের খাবারের প্রতি অনেক যত্নশীল হতে হয়। বন্যা কবলিত এলাকার শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই সরকারি/বেসরকারি যারাই ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন, তারা যেন অবশ্যই শিশুখাদ্যের প্রতি মনোযোগী হন। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। 

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশুদের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছি। 

আরিফ আজগর/আরকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *