‘ঘরে কোমর সমান পানি, কোথাও যাওয়ার উপায় নেই’

‘ঘরে কোমর সমান পানি, কোথাও যাওয়ার উপায় নেই’

দেড়মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি ভাঙন অংশে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় অনেকে চৌকি উঁচু করে কোনোরকম বসবাস করছেন। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক ও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে বন্ধ রয়েছে যানচলাচল। লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। 

দেড়মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি ভাঙন অংশে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় অনেকে চৌকি উঁচু করে কোনোরকম বসবাস করছেন। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক ও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে বন্ধ রয়েছে যানচলাচল। লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ আগস্ট মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি অংশে ভাঙনের দেখা দিয়েছিল। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুর থেকে আবারও ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকার মাস্টারবাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ, মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউতলি কাশিনগর ও চম্পকনগর এলাকায় বাঁধের দুইটি অংশ, চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন, দক্ষিণ শালধর, কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেটেশ্বর ও সাতকুচিয়া এলাকার ভাঙন অংশ এবং পশ্চিম মির্জানগর এলাকার সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে তিন উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।

পরশুরামের সলিয়া এলাকার বাসিন্দা হাবিব স্বপন বলেন, আমাদের ত্রাণের চেয়েও এখন নৌকা বা স্পিডবোট বেশি প্রয়োজন। অনেকে বন্যা পরিস্থিতি এমন হবে বুঝতে পারেনি। এখন কোথাও যাওয়ার উপায় নাই। এছাড়া সোমবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। বন্যার সঙ্গে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক বেশি ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

ফরিদা সুলতানা নামে আরেকজন বলেন, ঘরে এক গলা পানি। ছাদের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে আবার পানিও বাড়ছে জানিনা কীভাবে রাত কাটাবো। পরিবারের ছোট সন্তান, বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে। দুইদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। দুপুর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই।

ফুলগাজীর উত্তর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম রাজু বলেন, একমাত্র সন্তানের মুখের দিকে নির্বাক তাকিয়ে আছি। ঘরের সকল আসবাবপত্র কোমড় সমান পানিতে ডুবেছে। এত রাতে কী করবো, কোথায় যাবো?

ঘনিয়ামোড় এলাকার বাসিন্দা মো. শাহজাহান বলেন, বিগত সময়ের বন্যা চেয়ে এবার পানির স্রোত অনেক বেশি। এখনো পানি বাড়তেছে। এছাড়া ভারতের ত্রিপুরায় ডম্বুর গেট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। এতে এদিকে পানির চাপ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম বলেন, ২ আগস্ট মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭ অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। সেগুলো মেরামত করার আগেই ভারি বর্ষণ ও উজানের পানিতে ভাঙন অংশ দিয়ে আবারও লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। তিন উপজেলায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীর ১২টি ভাঙন অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। বন্যাদুর্গত মানুষদের সহায়তায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া পানিবন্দিদের উদ্ধারে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, আমাদের উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। পানি এখনো বাড়ছে।

ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ফেনীতে টানা দুইদিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তারেক চৌধুরী/পিএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *