প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে চেয়ারে বসে গেলেন ছাত্র

কুমিল্লার দেবিদ্বারে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে তার কক্ষে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়েন এক শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে ওই ছাত্রের বসে থাকা একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

কুমিল্লার দেবিদ্বারে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে তার কক্ষে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়েন এক শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে ওই ছাত্রের বসে থাকা একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে ওই ছবিটি ভাইরাল হতে থাকলে বিষয়টি দৃষ্টি কাড়ে সবার।

প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে পড়া ওই শিক্ষার্থীর নাম ইকরামুল হাসান। তিনি ওই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কুরুইন গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে দেবিদ্বার মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগ করেন ও বিদ্যালয়ের অর্থে তিনি বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তাই তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।

খবর পেয়ে প্রথমে দেবিদ্বারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির সভাপতি নিগার সুলতানা সেনাবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকেন। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ না করেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। প্রধান শিক্ষক কক্ষ থেকে বেরিয়ে পড়ার পর এক শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে পড়েন। এসময় ছবি তুলে ফটোশুট করা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থী তার নিজের ফেসবুকে তা পোস্ট করলে বিষয়টি ভাইরাল হতে থাকে।

ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, টেবিলের উপর থাকা নেমপ্লেট সামনে রেখে প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেনের চেয়ারে স্কুল ড্রেস ছাড়া সাদা পোশাকে বসে আছেন ছাত্র ইকরামুল। এসময় ওই কক্ষে আর কাউকে দেখা যায়নি। এ ছবি প্রথমে নিজের ফেসবুকেই প্রথম আপলোড করে ওই ছাত্র লিখেন, আমাদের সু-সম্মানিত আলমগীর স্যার কোথায়?।

এরপর ভাইরাল ওই ছবি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই ছবিটি আদৌ সত্য কি না, ছবিটা সুপার এডিট করা কি না এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘটনার সত্যতা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন ওই শিক্ষার্থী নিজেই।

ওই শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, সবাই স্যারের অফিস কক্ষ ত্যাগ করার পর আবেগে চেয়ারে বসে ছবি তুলে ফেলেছি। পরে আমার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করি। এটা আমার ঠিক হয়নি, সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমার ফেসবুক থেকেও ছবিটা ডিলিট করে দিয়েছি। এ ঘটনার জন্য আমি অনুতপ্ত।

শুক্রবার বিকেলে প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি- আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নই, কোথাও এ দলের সদ্য পদও নাই। দেবিদ্বারে নাকি আমার দুটি বাড়ি আছে, তাও তাদের প্রমাণ দিতে বলেছি, ওরা প্রমাণ দিতে পারেনি। ওরা হয়ত কারও ইন্ধনে ভুল বুঝে আন্দোলনে নেমেছে। অভিযোগ তদন্তের আগেই পদত্যাগে বাধ্য করা দেশে এখন যেন একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি ইউএনও স্যারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ছবি ভাইরাল হতে থাকে। সাদ্দাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি এ ছবি পোস্ট করার পর শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ১৬৬ জন নেতিবাচক মন্তব্য করেন।

কমেন্টে মঈন উদ্দিন নামের একজন লিখেছেন ‘শিক্ষা ব্যবস্থা শেষ করে গেছে হাসিনা সরকার, তার ফল এগুলো।’ মুন্সী আজিম লিখেছেন ‘পিতা মাতার পরেই শিক্ষকের স্থান, শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি মানে দুনিয়া ও আখেরাত দুইটাই বরবাদ।’ আক্তার নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ফাইজলামির একটা লিমিট থাকা উচিত।’ পারভেজ লিখেছেন ‘স্বাধীন দেশের স্বাধীন ছাত্র।’ শাহ আলম ভূইয়া বাবু নামের একজন লিখেছেন, ‘জীবনে এটা দেখার বাকি ছিল।’

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিগার সুলতানা বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমরা বিধিমোতাবেক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অফিস থেকে বের হওয়ার পর তারই ছাত্র চেয়ারে বসে ফেসবুকে ছবি পোস্ট দেওয়ার যে ক্ষমাহীন ধৃষ্টতা দেখিয়েছে এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। কোনো বিবেকবান ও সুস্থ ছাত্র এটা করতে পারে না।

আরিফ আজগর/পিএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *